প্রবাস মেলা ডেস্ক: কানাডা প্রবাসী মৌ মধুবন্তী মূলত একজন কবি, আবৃত্তিকার এবং গল্পকার। কিন্তু তিনি গান লিখছেন সেই ১৯৯৪ সাল থেকে। এবার তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষ্য একটি অসাধারণ গান রচনা করেছেন। এ গানটি দর্শক-শ্রোতাদের মনে বিশেষভাবে জায়গা করে নিয়েছে। অনেকে এ গান নিয়ে তাদের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছেন। গীতিকার হিসেবে মৌ মধুবন্তী নিজেও এ গানটি নিয়ে বেশ উচ্ছাসিত হয়েছেন। এ গানটির সুর করেছেন শান। এ প্রসঙ্গে মৌ মধুবন্তী বলেন, শান একজন অসাধারণ অনন্য সুরকার, মিউজিক কম্পোজার এবং শিল্পী। এ গানের কথাগুলো অনেক সুরকারের কাছেই কঠিন লাগলেও শান তার মেধা দিয়ে সুর করে নেয়। এটাই তার বৈশিষ্ট্য।
এ গানটি প্রসঙ্গে কানাডায় বিশিষ্ট প্রবাসী অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, মৌ মধুবন্তী, আপনার মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে লিখিত গানটি আমি বেশ কয়েকবার আনন্দের সাথে মনোযোগ দিয়ে শুনেছি । আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। এর সুর,ছন্দ যথার্থ হয়েছে। যারা গানটি গেয়েছে তাদের প্রতি আমার ধন্যবাদ। গীতিকার হিসাবে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা। গানের ভিডিওতে যে সকল ছবি সন্নিবেশিত করা হয়েছে সেগুলো ইতিহাসের কথা বলেছে। বঙ্গবন্ধুর জীবনের অনেক ধারাবাহিকতা এখানে উঠে এসেছে। এবং তা আমাকে প্রভূত আনন্দ দিয়েছে । তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা লাভে বঙ্গবন্ধুর যে অবদান তা অনস্বীকার্য। তিনি আমাদের রাষ্ট্র পিতা । তাকে কেন্দ্র করেই আমাদের বাংগালি জাতিয় ঐক্য গঠিত হয়েছে। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা মুভমেন্টের মাধ্যমে আমরা তাকে জেলের তালা ভেংগে মুক্ত করে এনেছি। যেদিন তিনি মুক্ত হয়েছেন সেদিনই তিনি আমাদের মাঝে স্বাধীনতার উত্তাল তরংগের জোয়ার তুলে দিয়েছেন। এইসব বিষয়গুলো আপনার গানের কথায় ও ভিডিওতে উঠে এসেছে। অনেকদিন ধরে আমি বঙ্গবন্ধুর উপরে অনেক গান শুনে আসছি যে সব গানের কোন অর্থ আমি উদ্ধার করতে পারিনি, কিন্তু আপনার লেখা এই গানটি একটি প্রকৃত ইতিহাসের সত্য অনুভূতিকে প্রকাশ করতে একটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করেছে। আপনাকে কবি হিসাবে ও বহু গান রচনার গীতিকার হিসাবে অনেক দিন থেকে জেনে আসছি। কিন্তু একটি কথা না বললেই নয় যে, গীতিকারের উপস্থিতি ভিডিওর ছবিতে থাকাটা খুব বাঞ্চনীয় ছিল। আর নতুন প্রজন্মের হাতে আপনার সৃষ্টিশীল কাজকে তুলে দিয়েছেন, এটাই আপনাকে সর্বাধিকভাবে আলাদা করেছে অন্যদের তুলনায়। গীতিকারের একটি সূচনা ছবি সংযোজিত হলে এই ভিডিও মেকিং আরো অনেক অর্থবহ হতো। বলাই বাহুল্য যে, এই গানটি বিশেষভাবে বাংগালি জাতির গৌরব কে তুলে ধরেছে সমুজ্জ্বল্ভাবে । এই গানটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত করলে আমাদের নতুন প্রজন্ম সুন্দর একটি শুদ্ধ গান শুনতে পাবে। পুরো টিমের জন্য আমার বিশেষ শুভকামনা ।
গান নিয়ে মৌয়ের অনেক রকম নিরিক্ষা আছে। মৌ মধুবন্তী ক্লাসিকেল ও সেমি ক্লাসিকেল সুরের ধারার একজন একনিষ্ঠ ভক্ত। তাই শানের করা সুর তার খুব পছন্দ। খুব কম সময়ে তাড়াহুড়া করে অনেক সময় গানের কাজ শেষ করতে হয় বলে অনেক আইডিয়া ইমপ্লিমেন্ট করতে অসুবিধা হয়। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মৌ মধুবন্তীর গানে তার কিছু বিশেষ পরিকল্পনা ছিল, বাংলাদেশী সময় রাত ১২.০১ মিনিটে গানটি বাজাবেন বলে জানান। কিন্তু সেটা হয়নি। ভিডিওটি শানের পরিকল্পনায় হয়েছে খুব সুন্দরভাবে। মৌ বললেন তার কিছু ইনপুট দেবার ইচ্ছা থাকলেও সময়ের কারণে সেটা আর করা যায়নি। তিনি বলেন গান লেখা থেকে শুরু করে রিলিজ করা পর্যন্ত একটা বিরাট লম্বা পথ ও পরিক্রমা এবং ব্যাপক অর্থের প্রয়োজন। বিশেষ করে যে গীতিকার সুর দিতে জানে না তার জন্য। এটা একটা টিম ওয়ার্ক হলেও গীতিকারকে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই উপেক্ষা করা হয় এবং আড়ালে রাখা হয়। এই নিয়মের ইতি হওয়া উচিৎ। একজন গীতিকারকে গানের মা ধরে নিয়ে তিনি বলেন ,সুরকার ও কম্পোজার সবাই টিমের অন্তরঙ্গ বন্ধু এবং নতুন প্রজন্মের শিল্পীদেরকে তিনি সন্তানের মত মনে করেন। তাদেরকে নিয়ে তিনি গর্ব বোধ করেন। তাদের কন্ঠে তার কথাগুলো সুরেরদোলায় দোলায়িত হয়ে শ্রোতার অন্তরে স্থান করে নেয়।এটা একটা বিশেষ প্রক্রিয়া। প্রত্যেক গীতিকার সুরের দোলায় আন্দলিত হয় যখন গানের বাণী লেখে, যেহেতু গীতিকার গাইতে জানে না সেহেতু, সেই সুরের মুর্চনা সে তার অন্তর থেকে সুরকারে চিন্তায় ও অনুভবে পরিচালিত করতে পারে না। তাই গীতিকার হিসাবে তার কিছুটা অতৃপ্তি থেকেই যায়।
উল্লেখ্য, শান ছাড়াও মৌ মধুবন্তী’র লেখা গানে সুর করেছেন লন্ডন থেকে সুরকার জাহাঙ্গীর রানা, কোলকাতা থেকে পন্ডিত শান্তনু ভট্টাচার্য, রাজশাহী থেকে মাক্সুমুল হুদা বাড্ডু এবং আরো কয়েক জন বিশিষ্ট পন্ডিতজন। শানের সাথে মৌ মধুন্তীর গান মা ও সন্তানের মত সম্পর্ক । আর যে সব শিল্পী তার লেখা গান গেয়েছে এ যাবত তারা হলেন , শ্রদ্ধেয় বাউল শফি মন্ডল, সুমনা সামান্তা মুখার্জী, (কোলকাতা), পারমিতা হক কংকন, শাহনেওয়াজ দীপু, স্বরলিপি, খেয়া, নির্ঝর, সাব্বির, অবন্তী সিথি ও ঝিলিক।
মৌ মধুবন্তীর আরো যে সকল গান ইতোমধ্যে রিলিজ হয়েছে , তার মধ্যে একটি গান ছাড়া সবগুলো গানের সুর করেছে সুরকার শান। গানগুলো হলো দীনুবসাকমন,পঞ্চমীসুর, রাগকরোনামা, চন্দ্রাবতীমধুবন্তী, বৃষ্টিভালোবাসা
আগামিতে তার আরও কিছু গান প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। সেগুলো হলো যে মনের দামে তুমি —–সুর শান, ভালোবাসা ঘর বাঁধেনি—– সুর বাড্ডু, পরাণ মাঝি——- সুর জাহাঙ্গীর রানা, টপ্পা না ধ্রুপদ—- সুর মেহদি।
আমরা আশা করছি তার এ গানগুলোও দর্শক শ্রোতাদের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করবে।
নিচে গানের লিংক দেওয়া হলো: