প্রবাস মেলা ডেস্ক: ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় ঢাকাস্থ শিল্পকলা একাডেমি’র স্টুডিও থিয়েটার মিলনায়তনেশ সাহিত্যের বাচিক চর্চা ও প্রসার প্রতিষ্ঠান কণ্ঠশীলনের চল্লিশ বছর পূর্তি ও সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে আবৃত্তি প্রযোজনা ‘বিদ্যাসাগর পাঁচালী’- উপস্থাপন করা হয়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবন, কর্ম ও লেখা নিয়ে ‘বিদ্যাসাগর পাঁচালী’ প্রযোজনাটির গ্রন্থনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন গোলাম সারোয়ার।
কণ্ঠশীলন এই যাত্রা আরম্ভ করেছে ১৩৯১ সালের ২রা বৈশাখে (১৯৮৪ সালের ১৫ই এপ্রিল)। সুবাচন চর্চার নিয়মিত পাঠক্রমের মধ্য দিয়ে এ-পর্যন্ত প্রায় আট হাজার তরুণ-তরুণীকে কণ্ঠশীলন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাথমিক পাঠ দিয়েছে। অগ্রসর এবং গভীর আস্বাদের আগ্রহীরা প্রতিষ্ঠানে স্থায়ীভাবে যুক্ত হয়ে নিরন্তর অনুশীলনের ফল হিসেবে উপহার দিয়ে চলেছেন আবৃত্তি অনুষ্ঠান, শ্রুতিনাট্য ও মঞ্চনাটক।
কণ্ঠশীলন কেবল কিছু মঞ্চ ও মাইক্রোফোন-সফল পারফর্মার-মাত্র গড়তে চায়নি। এখানে ভাষাকে ভালোবেসে যত মানুষ লগ্ন হয়েছে, একে অপরে ঘন হয়ে রয়েছে জীবন ও সমাজের ধারক বৃত্তিগুলিকে, তারা সর্বতোমুখী বিকাশের চর্চায় নিরত।
আবৃত্তি প্রযোজনা ‘বিদ্যাসাগর পাঁচালী’ উপস্থাপনের মাধ্যমে কণ্ঠশীলনের চল্লিশ বছর পূর্তি উৎসবের উদ্বোধন হয়। এরপর মঞ্চে আরোহন করেন মঞ্চসারথী আতাউর রহমান, সমাবর্তন-এর প্রদায়ক গুণিন বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী, প্রশিক্ষক, নির্দেশক ড. ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, কণ্ঠশীলন অধ্যক্ষ মীর বরকত ও সভাপতি গোলাম সারোয়ার। কণ্ঠশীলনের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানার উপস্থাপনায় ১০৫-১০৮তম আবর্তনের শিক্ষার্থীদের মাঝে অভিজ্ঞানপত্র বিতরণ করা হয়। কণ্ঠশীলনের নিয়মিত, অনিয়মিত সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা কণ্ঠশীলনের চল্লিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানান। একসঙ্গে কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। কণ্ঠশীলনের সাহিত্য সংস্কৃতিতে অবদান নিয়ে আলোচনা করেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রতিনিধি ও কণ্ঠশীলনের প্রবীণ সদস্যরা। বক্তারা বলেন, কণ্ঠশীলন শুধু প্রমিত উচ্চারণ, বানান ও আবৃত্তি শিক্ষার প্রশিক্ষণই দিচ্ছে তা নয়, মানুষের মানবিক গুণাবলীর বিকাশে অতুলনীয় ভূমিকা পালন করছে। বাঙালি সা¤্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে, ধর্মান্ধতার কুচক্রীকে প্রতিহত করার সাংস্কৃতিক আন্দোলনে প্রথম সারিতে রয়েছে কণ্ঠশীলন।
শিক্ষাগুরু ওয়াহিদুল হক ও বাক্শিল্পাচার্য নরেন বিশ্বাসের দীর্ঘসময় পথচলার সঙ্গী অধ্যক্ষ মীর বরকত, সভাপতি গোলাম সারোয়ার, সহ-সভাপতি রইস উল ইসলাম কণ্ঠশীলন নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। ১৯৮৪ সালে কণ্ঠশীলন প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিয়মিত প্রমিত উচ্চারণ, বানান ও আবৃত্তি শিক্ষার আবর্তন পরিচালনা করে আসছে। ওয়াহিদুল হক, নরেন বিশ্বাসের স্বপ্ন ছিলো বাংলার মানুষ শুদ্ধ বা প্রমিত উচ্চারণে কথা বলবে। ওয়াহিদুল হক বলতেন, ‘কথা মানুষকে কাছে টানে, কথা মানুষকে দূরে ঠেলে দেয়। কথা মানুষকে বন্ধু করে, কথা মানুষকে শত্রু করে।’ তাই এক মানভাষায় কথা বলার আমাদের এই আন্দোলন চলতেই থাকবে। সবার সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যাবে কণ্ঠশীলন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।