সম্পাদকীয়:
প্রায় ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের প্রকোষ্ঠে বন্দি ছিলো দেশের ১৮ কোটি মানুষ। ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ৩৬ জুলাই তথা ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। ১৯৭১ এর পর এ যেন এক নতুন স্বাধীনতা। ৪৭, ৬৯, ৭১, ৯০ এও পরাভব মানেনি এদেশের ছাত্র-জনতা। ২০২৪ এর জেন-জি’র নেতৃত্বে এদেশের মানুষ আবার ফিরে পেলো নতুন এক স্বপ্নের বাংলাদেশ। বাক-স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে এদেশের আপামর জনতা। দম বন্ধ পরিস্থিতি থেকে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারছে জনগণ। এদেশের মানুষ সব-সময়ই স্বাধীনচেতা। মুক্তভাবে কথা বলা ও স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে স্বাচ্ছন্দপ্রিয়। দেশের প্রতিটি সেক্টরেই দুর্নীতি, লুটপাট, অরাজকতা পেয়ে বসেছিলো। যেখানে সাংবিধানিকভাবে এদেশের মালিক জনগণ, সেখানে সবাইকে এতোদিন প্রজা বা সেবাদাস বানিয়ে রাখা হয়েছিলো। কঠোর কর্তৃত্ববাদী শাসনের যাঁতাকলে মানুষের নাভীশ্বাস হয়ে উঠেছিলো। গণমাধ্যমগুলো জনগণের কণ্ঠস্বর না হয়ে কখনও স্বেচ্ছায় বা কখনও বাধ্য হয়ে সরকারের প্রশংসায় মেতে ছিলো। আমরা চাই- এখন যেমন মানুষ মুক্ত-বুদ্ধিচর্চা এবং স্বাধীনভাবে তার মতামত প্রকাশ করতে পারছেন, এভাবেই যেন অব্যাহত থাকে বাংলাদেশের আগামীর পথচলা।
প্রায় ভঙ্গুর অর্থনীতি থেকে আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশ। এক্ষেত্রে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বৈধ উপায়ে এখন প্রবাসীরা প্রায় দেড়-দু’গুণ বেশি রেমিটেন্স দেশে পাঠাচ্ছেন। দেশের রিজার্ভের পরিমাণও তর তর করে বেড়ে উঠছে। প্রবাসীরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। আর্থিক পরিসংখ্যান বলে- হুন্ডির মাধ্যমে টাকা না পাঠিয়ে প্রবাসীরা এখন বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে নিয়মিত টাকা পাঠাচ্ছেন। অচিরেই দেশের অর্থনীতি একটা শক্তিশালী ভিত্তির উপরে দাঁড়াবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
বিশ্বজয়ী গ্লোবাল হিরো ড. মুহাম্মদ ইউনূস এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। পশ্চিমা বিশ্বসহ সারা পৃথিবীর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের কাছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রহণযোগ্যতা আকাশচুম্বী। স্বভাবতঃই প্রায় পুরো পৃথিবীই এখন বাংলাদেশের পাশে। ফ্যাসিস্ট পতিত সরকারের সুবিধাভোগী এবং অন্ধ সমর্থক ব্যতিরেকে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাই সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছেন। সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। পতিত সরকারের দোসররা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নানাভাবে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছেন। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সতর্কতার সাথে আমাদের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে উন্নত বাংলাদেশ তৈরিতে সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে। কোনভাবেই আর বাংলাদেশকে কর্তৃত্বপরায়ণ শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট হতে দেয়া যাবে না।
দেশের সব মানুষের সাথে আমরাও স্বপ্ন দেখি- মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনায় বিকশিত হোক বাংলাদেশ। সভ্য ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণে প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। আমরা যেন আমাদের কর্তব্য পালনে পিছ-পা না হই। এগিয়ে যাক বাংলাদেশ। শুভ হোক আগামীর পথচলা।