শরীফ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, কুয়েত থেকে: মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ অন্যতম ধনী দেশ কুয়েত। আয়তন ১৭ হাজার ৮২০ বর্গকিলোমিটার। মরুপ্রধান দেশ হওয়ায় চাষাবাদ কম। দেশটির খাদ্যপণ্যের বেশিরভাগই আসে বাইরের দেশ থেকে। সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল বাইরের দেশ থেকেই আমদানি করতে হয়। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশিদের হাত ধরে মরু অঞ্চলেও চাষ হচ্ছে।
সৌদি ও ইরাক সীমান্ত ঘেঁষে ওয়াফরা, আবদালি ও জাহারা অঞ্চলজুড়ে বিশাল বিস্তৃত মরু অঞ্চল। অসংখ্য বালাদেশি দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষিকাজে কর্মরত আছেন। বাংলাদেশিদের হাতের ছোঁয়ায় কুয়েতের মরু অঞ্চল আজ সবুজের সমারোহ। দেখলে মনে হয় যেন এক টুকরো মিনি বাংলাদেশ।
বাংলাদেশি শ্রমিকরা ধৈর্য, মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে দেশি-বিদেশি নানা জাতের শাকসবজি ও ফলমূল ফলায়। তারা এসব উৎপাদিত ফসল কুয়েতের সেন্ট্রাল সবজি মার্কেটে ও সুপারসপগুলোতে বিক্রি করেন।
কুয়েতে কৃষি অঞ্চল বলে খ্যাত দুটি এলাকা ওয়াফরা ও আবদালি। কেবল ওয়াফরাতেই কৃষিকাজ করছেন প্রায় ১২ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি। এসব এলাকায় প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকরা কুয়েতের সিংহভাগ সবজির চাহিদা মেটাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তারা উৎপাদন করছেন ফুলকপি, লাউ, বাঁধাকপি, লাল শাক, ধনেপাতা, শিম, করলা ও পালংশাকসহ নানা ধরনের শাক সবজি।
প্রচণ্ড গরমের সময়ও বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে শীতকালীন সবজি উৎপাদন করছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশীয় সবজি উৎপাদন করতে পেরে এবং ন্যায্য পারিশ্রমিক পেয়ে খুশি প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
তাছাড়া আরো জনবল থাকলে বেশি পরিমাণ সবজি উৎপাদনের মাধ্যমে কুয়েতের কৃষিবাজারে বাংলাদেশিদের অবস্থান শক্তিশালী হতো বলে মত প্রবাসীদের।
শীতের মৌসুমে কুয়েতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে স্থানীয় নাগরিকসহ প্রবাসীরা প্রতি সপ্তাহে এই ওয়াফরা ও আবদালী কৃষি এলাকায় পরিবার পরিজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতে আসেন।
তাছাড়া সবজি চাষের পাশাপাশি হাঁস, মুরগী, কবুতর, ভেড়া ও ছাগলও লালন-পালন করেন তারা। কুয়েতে দীর্ঘদিন ভিসা বন্ধ থাকায় শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষি খামারে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ দূতাবাসের কুটনৈতিক সহযোগীতার জোর দাবি জানান প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। এই শ্রমিক সংকট নিরসনে দ্বিপাক্ষিক কুটনৈতিক সহযোগীতাই তাদের একমাত্র প্রাণের দাবি।