মো: আশরাফুল আলম মাসুদ:
তাইওয়ান সরকারিভাবে চীন প্রজাতন্ত্র, পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ-যা তাইওয়ান প্রণালীর পূর্বে অবস্থিত। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে উত্তর-পশ্চিমে চীন, উত্তর-পূর্বে জাপান এবং দক্ষিণে ফিলিপাইন। তাইওয়ানের মূল দ্বীপটির আয়তন ৩৫ হাজার ৮০৮ বর্গকিলোমিটার, যার পশ্চিমের দুই-তৃতীয়াংশ পাহাড় এলাকা এবং পশ্চিমের এক-তৃতীয়াংশ সমতল। তাইপেই হল দেশটির রাজধানী।
পর্যটকদের দৃষ্টিকোণ থেকে তাইওয়ানের রাজনৈতিক অবস্থা একটি বিতর্কিত এবং সংবেদনশীল বিষয়, তাইওয়ান কার্যত চীনের মূল ভূখ- থেকে একটি ভিন্ন সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং বাস্তবে একটি পৃথক দেশ হিসাবে কাজ করে। চীন মনে করে তাইওয়ান তাদের ভৌগলিক সংহতির ক্ষেত্রে অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু তাইওয়ান মনে করে তারা চীন থেকে আলাদা। দেশটির জনগণের একটি অংশ স্বাধীনতা ঘোষণার পক্ষে। তাইওয়ান-চীন দ্বন্দ্ব বেশ পুরোনো হলেও এটা সত্য যে, তাইওয়ান চীনের শাসনের অধীন ছিল।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চীনের কাছে সবচেয়ে স্পর্শকাতর প্রসঙ্গ তাইওয়ান। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং এরপর দেশটির আরও কয়েকজন আইনপ্রণেতার তাইওয়ান সফরকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়।
যেকোন দেশ ভ্রমণ করার আগে সেদেশের রীতিনীতি এবং শিষ্টাচার সম্পর্কে সর্বদা একটি ভালো ধারণা থাকলে আপনার ভ্রমণ আরামদায়ক হবে। তাই ব্যবসায়িক কিংবা পারিবারিকভাবে আপনি একদিনে যেতে পারেন তাইওয়ান। দেশটি ভ্রমণে করণীয় বর্জনীয় বিষয়গুলো নিয়ে আজকের ফিচারে আলোচনা করা হলো।
তাইওয়ানের ইতিহাস
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গণচীনের জাপানি হামলা প্রতিরোধ যুদ্ধকালে চীনের কুওমিনতাং পার্টি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে জাপানের আগ্রাসন বিরোধী জাতীয় যুক্তফ্রণ্ট গড়ে তুলে জাপানি সা¤্রাজ্যবাদীদের আক্রমণ প্রতিরোধ করে। জাপান-বিরোধী প্রতিরোধ যুদ্ধটি জয়যুক্ত হওয়ার পর চিয়াং কাইশেকের নেতৃত্বাধীন কুওমিনতাং গোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট হয়ে সারা দেশজুড়ে গৃহযুদ্ধ বাধায়। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে চীনের জনগণ তিন বছরের বেশি সময় মুক্তিযুদ্ধ চালায়। তখনকার কুওমিনতাং গোষ্ঠীর গৃহিত গণবিরোধী নীতির কারণে সারা দেশের বিভিন্ন জাতির জনগণ এই গোষ্ঠীকে ঘৃণা করে, ফলে কুওমিনতাং পার্টির ‘চীন প্রজাতন্ত্র’ (বা রিপাবলিক অব চায়না) সরকার উৎখাত করা হয়। ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর চীন গণ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তা চীনের একমাত্র বৈধ সরকার হয়ে দাঁড়ায়। তখন কুওমিনতাং গোষ্ঠীর কিছু সৈন্য বাহিনী এবং সরকারি কর্মকর্তা সরে গিয়ে তাইওয়ান আঁকড়ে ধরে। তারা তখনকার মার্কিন সরকারের সমর্থনে তাইওয়ান প্রণালীর দু’ তীরের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করেন।
তাইওয়ানে অভ্যর্থনা
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো তাইওয়ানে হ্যান্ডশেক হল বিদেশিদের সাথে শুভেচ্ছা জানানোর সবচেয়ে সাধারণ রূপ। তাইওয়ানের লোকেরা আলিঙ্গন করতে খুব একটা আগ্রহী নয়। যখন বন্ধুরা এবং পরিচিতরা মিলিত হয়, তখন একটি বন্ধুত্বপূর্ণ ‘হাই’ বলবে। আমরা খেতে ভালোবাসি, ‘আপনি কি খেয়েছেন’? তাইওয়ানে সাধারণ অভিবাদন হিসাবে এই প্রশ্নটি বেশ প্রচলিত। তাইওয়ান ভ্রমণের আগে কিছু চীনা অভিবাদন শব্দ জেনে রাখা যেতে পারে যা কাজে আসতে পারে: ‘নি হাও মা?’ (কেমন আছেন?), ‘হাই’! (আরে!), ‘হাও জিউ বু জিয়ান’! (কিছুক্ষণ হয়েছে!) বা ‘চি বাও লে মা?’ (তুমি খেয়েছ?)
উপহার দেয়া–নেয়া
তাইওয়ানের জনগণের সবচেয়ে আকর্ষণীয় কিন্তু বিশ্বাস করা কঠিন বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটি হল কিভাবে আমরা এখনও বিশ্বের সবচেয়ে প্রযুক্তি-উন্নত দেশগুলোর একটিতে বসবাস করার সময় কিছু প্রাচীন চীনা কুসংস্কারে বিশ্বাস করি। উপহার দেয়ার ক্ষেত্রে এটি স্পষ্ট হয়। উপহার দেয়া-গ্রহণ করার সময় সর্বদা আপনার উভয় হাত ব্যবহার করুন এবং দাতার সামনে সেগুলো খুলবেন না।
আপনি যখন একটি উপহার অফার করেন, এটি সম্ভবত প্রথমে প্রত্যাখ্যান করা হবে (এটি ভদ্রতার অঙ্গভঙ্গি হিসাবে বিবেচিত হয়)। হোস্ট এটি গ্রহণ না করা পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যান এবং চিন্তা করবেন না, অবশেষে তারা উপহারটি গ্রহণ করবে। তাইওয়ানে তৈরি জিনিস উপহার দেয়া থেকে বিরত থাকুন। তাইওয়ানের লোকদের রুমাল ও ঘড়ি উপহার হিসাবে দেয়া থেকে বিরত থাকবেন। বয়স্ক ব্যক্তিদের উপহার হিসাবে জুতা অফার করবেন না, এটি তাদের স্বর্গে পাঠানোর ইঙ্গিত দেয় বলে মনে করে। আপনার তাইওয়ানের মেয়ে/বয়ফ্রেন্ডকে উপহার হিসাবে ছাতা দেবেন। না যদি না আপনি আপনার সম্পর্ক শেষ করতে চান, কারণ ছাতার জন্য চীনা শব্দটি ‘ব্রেক আপ’ এর জন্য ব্যবহৃত হয়।
খাওয়া–দাওয়া
চপস্টিকগুলো টেবিলে বা বাটির উপরে রাখা হয়। এগুলোকে কখনই বাটিতে উল্লম্বভাবে আটকে রাখবেন না-দেশটিতে এটি একটি নিষিদ্ধ কাজ। প্লেট থেকে খাবার নেয়ার সময় ভাগ করা চপস্টিক ব্যবহার করতে ভুলবেন না। হোস্টরা প্রায়ই অতিথির প্লেটে খাবার রাখে। এটি দেখে অবাক হবেন না এবং যখন এটি ঘটবে তখন উপেক্ষা না করে খাওয়া শুরু করবেন। প্লেটগুলো টেবিলে থাকে যখন আপনার ভাতের বাটি খাওয়ার সময় মুখের কাছে আনতে হবে।
তাইওয়ানে যা করবেন, যা করবেন না
বৃদ্ধ, শিশু এবং গর্ভবতী নারীদের জন্য আপনার আসনটি ছেড়ে দিন। এটি বাসে, এমআরটি বা ট্রেনে হোক।
সর্বদা এসকেলেটরের ডান দিকে দাঁড়ান, কারণ বাম দিকটি হাঁটার জন্য ব্যবহৃত হয়। কারো বাড়িতে প্রবেশ করার সময় আপনার জুতা খুলে ফেলুন, এমনকি যদি তারা বলে যে এটি রাখা ঠিক আছে। তাইওয়ান-চীন রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে কথা বলবেন না যদি না আপনি আপনার বন্ধুকে ভালোভাবে জানেন।
কেউ কেউ ক্ষুব্ধ হবেন যদি আপনি বোঝান যে তাইওয়ান হল চীন। তাইওয়ান একটি স্বাধীন দেশ বললেও আবার অনেকে বিরক্ত হতে পারেন।
বকশিশ দেবেন না, তা রেস্টুরেন্ট, হোটেল বা ট্যাক্সিতে হোক না কেন। এটাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে বারগুলোতে বকশিশ দেয়াকে স্বাগত জানানো হয়। মন্দিরে প্রবেশ করা বা বের হওয়ার সময় অতিরিক্ত ধাপে পা দেবেন না।