কামরুল আহসান:
(গত সংখ্যার পর…)
পরের দিন সকাল নয়টায় ট্রেনিংয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। ভেন্যু হোটেলের ছোটখাটো কনফারেন্স রুম। ভোর রাতে ঘুম থেকে উঠে নিচে গেলাম সেহেরি খেতে। নানা পদের খাবার। দেখে শুনে প্লেট ভরে নিলাম কিন্তু জিহ্বা যে স্বাদে অভ্যস্ত, এ খাবার তার কাছাকাছিও যায় না। থাই খাবারের যে এতো প্রশংসা, সে তো আর এমনি এমনি হয়নি। আমার স্বাদেন্দ্রীয় সে স্বাদে মজতে পারেনি, সে কী আর খাবারের দোষ! চারিদিকে দেখে শুনে বুঝলাম আমার জাত ভাইবোনদের একই অবস্থা। কিন্তু খেতে তো হবে। রোজার মাস, সারাদিন ক্লাস। বিষুব রেখার কাছাকাছির দেশ হওয়ায় দিন-রাত প্রায় সমান। এর মধ্যে দেখলাম একজন খিচুড়ির মতো কী একটা খাবার প্লেটে নিয়ে আসছেন। কাছাকাছি আসতেই দেখলাম খিচুড়ি। মনটা তড়াক করে উঠলো। নিপাট খিচুড়ি প্রেমিক আমি। প্রায় তিন বেলাই ভর পেট খিচুড়ি খেতে পারি। সেই খিচুড়ি! এই শ্যাম দেশে! আর আমার চোখ এড়িয়ে গিয়েছে? মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দিলাম। প্লেটের অভুক্ত খাবার সামনে ঠেলে প্রায় দৌঁড়ে গেলাম খালি প্লেট নিয়ে। ঢাকনা তুলে ফেললাম এক ঝটকায়। হ্যাঁ, খিচুড়িই তো। বেশ ধোঁয়া উঠছে। মনে তখন চড়কি নাচন। যাক অভুক্ত আর থাকতে হবে না। চামচ দিয়ে প্লেটে নিতে শুরু করলাম। আরে চামচও দিয়েছে সেই সাইজের, একবারে বেশি করে নেয়া যায় না। কী কিপটারে বাবা! এক সময় প্লেটের দুই-তৃতীয়াংশ ভরে এলে আমি ক্ষান্ত হলাম। খিচুড়ি আচার না হলে জমে! এদিক ওদিক তাকাচ্ছি, বলা উচিত চিরুনি অভিযান চালাচ্ছি একটুখানি আচারের জন্য। নাহ, বেরসিক এরা। খিচুড়ির অনুসংগ আচারই নেই।
ব্যাটারা খাবার বানাতেই কেবল জানে। কীভাবে রসিয়ে খেতে হয়, সেটা শেখেনি। আচার না হোক এক টুকরা পেঁয়াজ বা নিদেনপক্ষে দুই একটা কাঁচা মরিচ হলেও চলে। না তাও নেই। কী আর করা! দ্রুত টেবিলে বসে পড়লাম। টেবিলে ফর্ক, নাইফ আর স্পুনের ছড়াছড়ি। চামচ দিয়ে খিচুড়ি খেতে হবে? হাত ছাড়া খিচুড়ি খাওয়া জমে! একটু আচার- আম কিংবা জলপাইয়ের। সাথে মসলাসমেত একটু তেল। হাতে মেখে এক লোকমা মুখে দিলে আর কিছু লাগে? তা না খেতে হবে চামচ দিয়ে একেবারে ব্রিটিশবাবু হয়ে। এতগুলো মানুষের মাঝে আর জংলি হতে পারলাম না। ডান হাতে বেশ কায়দা করে চামচ ধরে একেবারে সেঁধিয়ে দিলাম প্লেটের খিচুড়ির মাঝে। চামচ ভরা খিচুড়ি মুখে চালান করে চিবুতে শুরু করলাম। না ঝাল না ঝাঁঝ- কেমন একটা স্বাদ। খিচুড়ি বলে কথা। বার কয়েক চিবিয়ে গিলে ফেললাম। সাথে সাথে একটা গন্ধ ঘ্রাণেন্দ্রিয়ে এসে ধাক্কা মারলো। বুঝতে পারলাম না গন্ধটা কিসের। আবার মুখে দিলাম। দীর্ঘদিনের খিচুড়ি খাওয়া মুখ আমার- ভুনা খিচুড়ি হোক বা ল্যাটকা খিচুড়ি- অরুচি নেই কোনটাতে। সেই আমার স্বাদেন্দ্রীয় আর ঘ্রাণেন্দ্রিয় জানান দিচ্ছে বাসী একটা গন্ধ খিচুড়িতে। বাসী খাবার তাও আবার তারকাখচিত হোটেলে! একি মানা যায়, না মানা উচিত!

এদিকে সেহেরির সময় শেষ হয়ে আসছে। ভরা প্লেটতো আর রেখে দেয়া যায় না। আবার খেতেও ইচ্ছে করছে না। কোন মতে কয়েক চামচ গিলে প্লেট ঠেলে দিলাম সামনে। প্লেটে পড়ে রইলো অভুক্ত খিচুড়ি সদৃশ বিস্বাদ খাবার। খিদে কিন্তু মরেনি, মনও ভরেনি। বরঞ্চ এ প্রবঞ্চনায় মন ক্ষিপ্ত হয়ে গেলো। টেবিলে বসেই অন্য কাউন্টারের দিকে চোখ বোলালাম। এক লাইনে দেখি কন্টিনেন্টাল খাবারের সারি। উঠে সেদিকে গেলাম। ব্রেড- সাদা, বাদামী, জেলী, মাখন, ক্রোসেন্ট, হরেক রকম বিস্কুট-কুকিজ প্লেট ভরে নিলাম। একটা বাস্কেটে দেখি সেদ্ধ ডিমের কাড়ি। একজনকে দেখলাম প্লেটে ৪টা ডিম নিয়ে বসেছে। তার উচ্চতা খুব বেশি না হলেও ওজন মাশা আল্লাহ! পরের দিনগুলোতে সেহেরিতে আর রিস্ক নিলাম না। কন্টিনেন্টাল ফুড ফল আর জুস দিয়ে সারলাম।

আমাদের প্রোগ্রামটির নাম ছিলো Professional Development Course on Modern Medical Treatment and Health Care in Public Hospital.
এই সফর- যাকে শিক্ষা সফর, কালিনারি ট্যুরিজম অথবা মেডিকেল ট্যুরিজম বা নিছক বিনোদনের সফর কোনভাবেই খাপে খাপে মেলাতে পারলাম না- স্মরণীয় হয়ে আছে। যদিও এরপর আবার গিয়েছিলাম শ্যামদেশে কিন্তু এই সফরটি ছিলো অনন্য। সকাল সাতটায় ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে চলে গেলাম অকুস্থলে, দোতলার ছোটখাটো, ছিমছাম একটা রুমে। এখানেই উদ্বোধন হবে কোর্সের। পুরুষরা সবাই স্যুটেড-বুটেড আর রমনীদের দেহাভরণ শাড়ী, দিনমান ক্লাস শেষে সন্ধ্যায় ইফতার। সামান্য বিশ্রাম নিয়ে দলবেঁধে মার্কেটে-এই হলো রুটিন। যেদিন হাসপাতাল পরিদর্শন থাকে- ওরা অবশ্য বলে ইমার্সণ ভিজিট অর্থাৎ কিনা দর্শনান্দে নিমজ্জন, সেদিন সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ি। সারাদিন বক্তৃতা-লেকচার শুনে বিকেল সন্ধ্যায় অবসর মিলে।

এক সন্ধ্যায় ফুটপাথ দিয়ে হাঁটছি, হঠাৎ চোখে পড়লো ছেলের আবদারের জিনিস। দামাদামি করে নিয়ে নিলাম একটা। দামে ঠকে গেলাম কিনা, সে প্রশ্ন রয়েই গেল মনে। পরেরদিন এক নামকরা শপিং মলে গিয়ে দেখি সেই জিনিস। দাম দেখি ফুটপাথের চেয়ে কম। চাপাচাপিতে আরো কমলো। আরেকদিন আরেক মার্কেটের সামনে দেখি এক ছোকড়া বসে আছে সেই মহামুল্যবান জিনিস নিয়ে। ইশারায় দাম জিজ্ঞেস করলাম। তার আস্কিং প্রাইসই ফুটপাথের এক তৃতীয়াংশ। চোখ পাকিয়ে বুঝালাম বিদেশী পেয়ে ঠকাচ্ছো! তাতে কিছুটা আসর হলো, দামও কমে এলো। আমি দিগি¦জয়ীর ভঙ্গীতে মৃদু হাসি দিয়ে দুটো নিয়ে নিলাম। বুঝলাম ধান্ধার জগতে বড়ই মিসফিট আমি। ছেলের ফরমায়েসী জিনিস তো পেলাম। এবার মেয়ের কী লাগবে তা না জেনেই দেশ ছেড়েছি। মেয়েকে ফোন করে বললাম, কি লাগবে। বললো ‘বিউটি ব্লেন্ডার’ লরিয়েল কোম্পানির। পরলাম মুসিবতে। মিক্সার ব্লেন্ডারের নাম জানি, গোটা পাঁচেক ব্রান্ডের নামও বলতে পারি, কিন্তু এ কী জিনিস আবার!

একদিন ‘বিউটি ব্লেন্ডারের’ খোঁজে বড়সড় এক শপিংমলে ঢুকে চিরুনি অভিযান চালালাম। এদোকান খুঁজি ওদোকান খুঁজি, পাই না। দোকানিকে জিগ্যেস করি, দোকানিও কিছু বুঝে না। শেষতক মেয়েকে ফোন দিয়ে বললাম এই জিনিস তো কেউ চিনেই না, কি করে কিনি? মেয়ে ফোন কেটে দিলো। কিছুক্ষণ পর আবার ফোনে বললো ভাইবারে ছবি দিলাম, দেখে নাও। যাক এবার তাহলে ক্লু পাওয়া গেল। প্রায় ঘন্টা দেড়েক খোঁজ করে পাওয়া গেল। কিন্তু দাম লিখা নেই। বিদেশি ভাষায় কিছু লিখা আছে, তার মর্মার্থ বোঝার সাধ্যি নেই আমার। যাইহোক জিনিষটা নিয়ে একটা বাস্কেটে অল্প কিছু জিনিষ নিয়ে পেমেন্টের জন্য লম্বা কিউতে দাঁড়ালাম। আধা ঘন্টা অপেক্ষা করে দাম পরিশোধ করতে যাব, এমন সময় কাউন্টারের মেয়েটি দূরে দাঁড়ানো আরেক কন্যাকে চোখের ইশারায় ডাকলেন। উনি এসেই আমার এতো কষ্টের বিউটি ব্লেন্ডারটি নিয়ে চলে যাবার উপক্রম করতেই আমি হা হা করে উঠলাম। কিন্তু তিনি নাছোড়বান্দা, জিনিসটি নিয়ে আগের জায়গায় রেখে দিলেন। আমি গলা চড়ালাম। ব্যাপার কি! তুমি এটা নিয়ে এলে কেন? আমিতো এটা কিনবো। সে বুঝাতে চাইলো এটা বিক্রির জন্য নয়। মানে? বিক্রি করবে না তো এটা রেখেছো কেন? বললাম, দেখো মেয়ের জন্য নিবো, দেড় ঘন্টা ধরে খুঁজে পেলাম এখন বলছো বিক্রির জন্য নয়! দিয়ে দাও আমি পে করে দিচ্ছি। কিন্তু ভবি তো ভোলার নয়। ক্রমাগত মাথা নেড়ে যাচ্ছে। শেষমেশ রেগে বললাম বিক্রি করবে না তো রেখেছো কেন? সে বলে এটা ফ্রি- বিক্রির জন্য নয়। বললাম, তো ফ্রি’ই দাও। হেসে উত্তর দিলো সে, এই আইটেম গুলো কিনলেই ফ্রি পাবে। দেখলাম হাজার টাকার জিনিস কিনলেই ফ্রি তে দিবে, নচেৎ নয়। মেজাজ চড়ে গেল। আমার ঘন্টা খানেকের কষ্ট মাঠে মারা গেল। বললাম বিক্রি করবে না সে কথা লিখে রাখলেই তো পারো। মিউ মিউ গলায় বললো, স্যার ইটস রিটেন হিয়ার, বাট ইন মাই ল্যাংগুয়েজ। মনে মনে চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে বললাম উদ্ধার করেছো হে।
এশিয়ান ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি সংক্ষেপে AIT এ প্রতিষ্ঠানের অধীনে ১০ দিনের ট্রেনিং শেষে প্যানেল ডিসকাশন। AIT এর মনোরম ক্যাম্পাস অন্যরকম ভালো লাগায় মন ভালো করে দেয়। এআইটির পাশেই থামাসার্ট মেডিকেল ইউনিভার্সিটি। এটি একটি প্রাইভেট মেডিকেল ইউনিভার্সিটি। আধুনিক চিকিৎসার পাশাপাশি ট্রেডিশনাল থাই মেডিসিন বিভাগ আর স্লিপ ক্লিনিক পরিদর্শন বাড়তি পাওনা। ট্রেডিশনাল থাই মেডিসিন বিভাগের অধীনে ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি করে চিকিৎসা হয়। এখানে একটা অভূতপূর্ব ব্যাপার দেখা হলো। লেবার পেইন কমানো এবং ডেলিভারি সহজ করতে একটা ডিককশন চেম্বার। বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি ট্রেডিশনাল মেডিসিনের ফার্মেসিও দেখা হলো। নিউরো আইসিইউর আর্কিটেকচারাল ডিজাইন দেখে মুগ্ধ হয়েছি। বলতে দ্বিধা নেই সম্পদ থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনেক শাখায় আমরা কয়েক যোজন দূরে। মেধার ঘাটতি নেই, ঘাটতি শুধু সদিচ্ছার। সে সদিচ্ছা সব স্টেক হোল্ডারদের।
কিং চুলালংক্রন মেডিকেল ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল। এটি চুলালংক্রন মেডিকেল ইউনিভার্সিটির মেডিকেল ফ্যাকাল্টির অর্ন্তভুক্ত। ব্যাংকক শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। ক্যাম্পাসের বিশালতা আর ব্যাপকতা শুধু আশ্চর্যের না, রোগী সেবা আর প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমেও। ঈর্ষা জাগানিয়া অনন্য মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থা যেকোন মেডিকেল গ্রাজুয়েটের স্বপ্নের আলমা ম্যাটার। রোগীর সংখ্যা অন্যান্য প্রান্তিক হাসপাতালের চেয়ে অনেক বেশি তবুও নেই অযথা হল্লা। প্রাতিষ্ঠানিক মিউজিয়ামে প্রতিষ্ঠার ইতিহাস সুচারুভাবে বিধৃত হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় জড়িতদের অবদানের কথা- যথাযোগ্য সম্মানের সাথে। সম্মান জানাতে যেমন নেই কোন কার্পণ্য, তেমনি নেই অযথা প্রগলভতা।

সামিতিভেজ শ্রীরাচা জাপানিজ হাসপাতাল, পাতায়া। গাল্ফ অফ থাইল্যান্ড লাগোয়া এ হাসপাতালটি বেসরকারি মালিকানাধীন। লেকচার হল, বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখানো হলো। মনোরম পরিবেশ নান্দনিক স্থাপনা আর পরিচ্ছন্নতা উদাহরণ হতে পারে একটি আদর্শ হাসপাতালের। গ্যাস্টোএন্ট্রেরোলজি বিভাগের খুঁটিনাটি ঘুরে দেখলাম। এ হাসপাতালের একটা বিশেষ বিভাগ অকুপেশনাল মেডিসিন বিভাগ। জানা গেল আশেপাশের এলাকা কলকারখানা অধ্যুষিত। অনেক শ্রমিক এখানে আসেন চিকিৎসা নিতে। আদতে কোন কারখানা চোখে পরেনি, দেখিনি কোন শ্রমিক। তবুও নাকি রোগী আছে। এই বিলাসবহুল হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় শ্রমিকরা অকুপেশনাল ডিজিজের। খরচ বিবেচনায় এটি আমাদের মধ্যবিত্তের লোকদের সাধ্যের বাইরে। জাপানিজদের জন্য আলাদা একটা ওয়ার্ড দেখলাম। জানা গেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় জাপানিদের সহযোগিতা আছে। থাইল্যান্ডের অন্যান্য হাসপাতালের মতো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আর মানুষ আচার-আচরণে এতটাই বিনয়ী, দেখলে অবাক লাগে। আমাদের এত অহমিকা! এত দুর্বিনীত আমরা, তারপরও শ্রেষ্ঠত্বের তকমা লাগানোর হাস্যকর প্রতিযোগিতা করি। ধরণী দ্বিধা হও।
রাজধানী ব্যাংকক থেকে উত্তরে ৪ ঘন্টার দূরত্বে সোপানবুড়ি প্রদেশের ডোয়েমবাং নাং বাউট জেলার হাসপাতাল। প্রায় সব বিভাগ সহ দ্বিতল হাসপাতালে ইনডোর আর আউটডোর মিলিয়ে অনেক রোগী। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এত মানুষ কিন্তু অস্বাভাবিক চুপচাপ সব। কোন হল্লা নেই, নেই কোন চিৎকার। অসম্ভব পরিস্কার পরিচ্ছন্ন শান্ত পরিবেশ। অনেক খুঁজে একজন ডাক্তারের সাথে কথা হলো। উনি সার্জন। সপ্তাহে দুই দিন এই হাসপাতালে আসেন অপারেশন করতে। এনেস্থিসিয়া দেন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নার্স। ভাবা যায়! জেলা হাসপাতালে দুইদিন করে বিশেষজ্ঞ আসেন সেবা দিতে। পুরা হাসপাতাল অটোমেটেড সফটওয়্যারের মাধ্যমে সুচারুভাবে চলে। রেফারেল সিস্টেম দেখলে ভিমড়ি খেতে হয়। নার্সিং স্টাফ, ফার্মাসিস্ট, প্যারামেডিক্সরা চালায় পুরা হাসপাতাল। একটা পাবলিক মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (কিং চুলালংক্রন হাসপাতাল), একটা বেসরকারি মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (থামাসার্ট ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল), একটা প্রাইভেট হাসপাতাল (শ্রীরাচা জাপানিজ হাসপাতাল) আর ইউনিয়ন সমপর্যায়ের স্বাস্থ্য কেন্দ্র দেখার সুযোগ হয়েছিলো। এত বড় বড় স্থাপনা, কিন্তু মানুষ চোখে পড়ে না। রোগী কোথায়! রোগীও আছে মানুষও আছে। তারপরও অকারণ শব্দ নেই। দেখলে মনে হবে উপসনালয়ে এসেছি। দেখলেও শান্তি লাগে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আছে ম্যাসাজ পার্লার- শ্রমিকদের কাজের চাপে শারীরিক ব্যথা বেদনা নিরাময়ের জন্য। থামাসার্ট ইউনিভার্সিটিতে থাই ট্রেডিশনাল মেডিসিন ওয়ার্ড, আধুনিক এলোপ্যাথির পাশাপাশি। নিউরো আইসিইউ চলে নার্সের তত্বাবধানে। সফট ক্যাডেভারিক সার্জারী ল্যাব চলে এনাটমিস্টের তত্বাবধানে। এনাটমিস্ট ট্রেনিং দেন হবু সার্জনদের। যে ডেড বডিগুলো শিক্ষা কাজে ব্যবহৃত হয়, তাদের সম্মানে হয় আনুষ্ঠানিকতা। খুব বেশি দূরে না। এই দক্ষিণ এশিয়াতেই। মেলাতে পারিনা কিছুতেই।
লেখক: সহকারি অধ্যাপক, শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর।