দীপক তালুকদার, ওয়ারশ, পোল্যান্ড:
বলকান দেশ রোমানিয়ায় গত বছর ১৩ হাজারের কাছাকাছি বাংলাদেশি কাজ, উচ্চ শিক্ষা ও পারিবারিক ভিসা নিয়ে গিয়েছেন। তবে মাত্র তিন হাজারের কিছু বেশি বছরের শেষ পর্যন্ত বৈধ ভিসা নিয়ে দেশটিতে অবস্থান করছিলেন। দেশটির অভিবাসন কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে ইনফোমাইগ্রেন্টস এ তথ্য জানিয়েছে।
গত বছর বাংলাদেশিদের ১২,৯৬০টি দীর্ঘমেয়াদি ভিসা দিয়েছে বলকান দেশ রোমানিয়া। কিন্তু বছর শেষে ৩,০৯৬ জন বাংলাদেশি সেখানে অবস্থান করছিলেন বলে ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বাকিরা কোথায় গেলেন? বাংলাদেশিদের সরাসরি কাজের ভিসা দেয় ইউরোপের এমন দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে রোমানিয়া। করোনা মহামারির পর ২০২২ সালে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি বৈধভাবে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে পাড়ি জমান। ১১ জানুয়ারি রোমানিয়া সরকারের জেনারেল ইন্সপেক্টরেট ফর ইমিগ্রেশন (আইজিআই) জানিয়েছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশিদের ১৪৫টি, শর্ট-স্টে বা সংক্ষিপ্ত মেয়াদের ভিসা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯৬টি ছিল ভ্রমণ, চিকিৎসা, সাংস্কৃতিক কর্মকা- ও গবেষণা কাজের জন্য দেয়া হয়েছে ১৮টি ভিসা। এছাড়া ১৭টি বিজনেস বা ব্যবসায়িক ভিসা, ক্রীড়া খাতে যুক্ত ব্যক্তিদের জন্য ১১টি ভিসা এবং তিনটি ট্রানজিট ভিসাও রয়েছে।

বাংলাদেশিরা ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি ভিসা পেয়েছেন লং-স্টে বা দীর্ঘ মেয়াদের জন্য। ইউরোপের দেশগুলোতে শিক্ষা, চাকুরি কিংবা অন্য যেকোন কাজে আসা ব্যক্তিদের যদি ৯০ দিনের বেশি অবস্থান করতে হয় সেক্ষেত্রে এই ভিসা প্রদান করা হয়। জেনারেল ইন্সপেক্টরেট ফর ইমিগ্রেশন (আইজিআই) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বাংলাদেশিদের সর্বমোট ১২,৯৬০টি দীর্ঘমেয়াদি ভিসা প্রদান করা হয়েছে। যার সিংহভাগই পেয়েছেন ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের ভিসায় যাওয়া ব্যক্তিরা।
আইজিআই এর দেয়া পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদি ভিসাপ্রাপ্তদের মধ্যে স্টুডেন্ট ভিসা বা উচ্চশিক্ষার জন্য ৫৩৮ জন, স্থানান্তর ভিসায় ১৪১ জন, পারিবারিক পুণর্মিলন ভিসায় আট জন এবং কূটনৈতিক ভিসা নিয়ে এসেছেন দুই জন বাংলাদেশি। বাকি ১২,২৭১ জন ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে কাজের উদ্দেশ্যে রোমানিয়া প্রবেশ করেন। এত বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশিরা দীর্ঘমেয়াদী ভিসা নিয়ে রোমানিয়ায় আসলেও তাদের মধ্যে ঠিক কতজন আসলে বছরের শেষ পর্যন্ত বৈধভাবে দেশটিতে অবস্থান করছিলেন সেটি কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চায় বিভিন্ন মিডিয়া। উত্তরে জেনারেল ইন্সপেক্টরেট ফর ইমিগ্রেশন (আইজিআই) জানায়, ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ৩,০৯৬ জন বাংলাদেশি অভিবাসী রেসিডেন্স পারমিট বা বসবাসের বৈধ অনুমোদন নিয়ে রোমানিয়ায় অবস্থান করছিলেন। তাদের মধ্যে ২৯০৫ জন ওয়ার্ক পারমিটের আওতায়, ১৪৪ জন উচ্চ শিক্ষায়, ২০ জন পারিবারিক ভিসায় এবং রাজনৈতিক আশ্রয়ের আওতায় আছেন ১১ জন।

অপরদিকে, বর্তমানে দেশটিতে ২০ জন বাংলাদেশি স্থায়ীভাবে অর্থাৎ পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি নিয়ে বসবাস করছেন বলে নিশ্চিত করেছে বুখারেস্ট কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ, দীর্ঘমেয়াদি ভিসা নিয়ে আসা বাংলাদেশিদের মাত্র সিকিভাগ শেষ পর্যন্ত রোমানিয়ায় অবস্থান করছেন। বাকিরা অনিয়মিত উপায়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চলে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০২২ সালে অনিয়মিতভাবে রোমানিয়া থেকে সেনজেন জোনে প্রবেশ করতে গিয়ে বাংলাদেশিরা বারবার দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন। বেশ কয়েকজনকে আটক পরে সরাসরি ঢাকায় ডিপোর্ট বা ফেরত পাঠানোর পাশাপাশি তাদের রোমানিয়ায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাও দেয়া হয়েছে।

ভিসার অপব্যবহার করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রোমানিয়া। বাংলাদেশ রোমানিয়া কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি ও দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সফর করেছেন ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত রোমানিয়ার রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েলা সেজোনভ টেনে। সফরকালে বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই-এর সভাপতি জসিম উদ্দিনের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেন, রোমানিয়ার ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ব্যক্তিরা দেশটিতে পৌঁছার পর অদৃশ্য হয়ে যান।
রাষ্ট্রদূতের মতে, রোমানিয়ায় পৌঁছানোর পরে রোমানিয়ার ভিসা নিয়ে ইইউতে প্রবেশের সুযোগ কাজ লাগিয়ে বেশিরভাগক্ষেত্রেই ভিসাধারী বাংলাদেশি নাগরিকরা অনিয়মিত উপায়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশে চলে যান। এই প্রবণতা বন্ধের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কঠোর নিয়ম আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন ড্যানিয়েলা সেজোনভ টেন। রোমানিয়ার রাষ্ট্রদূত এফবিসিসিআই সভাপতিকে তার অসন্তোষ প্রকাশ করে আরও বলেন, ভিসার অপব্যবহার ফলে রোমানিয়া সরকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। কারণ সরকার যে পরিষেবাগুলি প্রদান করে তার জন্য সংস্থাগুলিকে অর্থ প্রদান করতে হচ্ছে।

উল্লেখিত বিষয়গুলো সংশোধনের পাশাপাশি রোমানিয়ার রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ থেকে রোমানিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির প্রতি আহ্বান জানান। যেসব অভিবাসীরা রোমানিয়াকে ব্যবহার করে হাঙ্গেরিতে প্রবেশ করতে চাইছেন এমন ব্যক্তিদের ২০২২ সালের শুরু থেকেই গণহারে গ্রেপ্তার শুরু করে বুখারেস্ট। গত বছরের প্রথম আট মাসে সীমান্তে ১০ হাজার ৯১৬ জনকে অনিয়মিত অবস্থায় আটকের তথ্য দিয়েছে রোমানিয়া সীমান্ত পুলিশ।