হাকিকুল ইসলাম খোকন, নিউইয়র্ক,যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি: ২৩ এপ্রিল ২০১৯ “স্ব-প্রণোদিতভাবে, নিরাপদে এবং মর্যাদার সাথে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবাসন এবং এই সহিংসতার দায়-দায়িত্ব নিরূপন করে দোষীদের বিচার করার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে নিরাপত্তা পরিষদ দায় এড়াতে পারে না” ২৩ এপ্রিল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ‘সংঘাতময় পরিস্থিতিতে যৌন সহিংসতা’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের এক উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য প্রদানকালে একথা বলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।
রোহিঙ্গা সঙ্কটে সৃষ্ট যৌন সহিংসতার মতো অন্যায় করে পার পেয়ে যাওয়ার যে সংস্কৃতি বিশ্ব অবলোকন করে যাচ্ছে, সে প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, “এসকল অপরাধের সমাপ্তি ঘটানো না গেলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে না। আর এই অপরাধসমূহের দায় নির্ধারণ ও বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমেই কেবল রোহিঙ্গাদের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব যা তাদেরকে নিজ দেশে প্রত্যাবাসনে উৎসাহিত করবে; কিন্তু এখন পর্যন্ত এটি বাস্তবায়িত হয়নি”।

এসকল বিষয় উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মাসুদ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি প্রশ্ন রাখেন, “আপনারা কি প্রত্যাশা করেন এই রোহিঙ্গাগণ বিশেষ করে অর্বণনীয় যৌন সহিংসতার স্বীকার রোহিঙ্গা নারী ও বালিকারা ‘তাদের উপর এ জাতীয় আর কোন সহিংসতা হবে না’ মর্মে স্পষ্ট নিশ্চয়তা ছাড়া স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরে যাবে?”। শুধু যুদ্ধের অস্ত্র ও কৌশল হিসেবে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী দ্বারা বাংলাদেশের মা-বোনেরা যে অবর্ণনীয় যৌন সহিংসতা ও নিপীড়নের স্বীকার হয়েছিলেন সেই ভয়াল স্মৃতির কথা তুলে ধরেন স্থায়ী প্রতিনিধি।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সেই একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে রোহিঙ্গা সঙ্কটের ক্ষেত্রে। ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ এর হিসেব মোতাবেক সহিংস যৌন নির্যাতনের ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ২০১৮ সালে প্রায় ৪ হাজার শিশু ভূমিষ্ট হয়েছে যাদের গ্রহণ করতে মা পর্যন্ত অস্বীকৃতি জানাচ্ছে, কেন এমনটি ঘটছে, আমরা কি আন্দাজ করতে পারি? এসকল শিশুদের স্বীকৃতি, ক্ষতিপূরণ এবং নিজ দেশ মিয়ানমারে ভালো ভবিষ্যত নিশ্চিত করার বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই আমলে নিতে হবে”।
যৌন নির্যাতন ও এর অপব্যবহার রোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স পলিসি উল্লেখ করে স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, “জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশগুলোর অন্যতম হিসেবে বাংলাদেশ ‘যৌন নির্যাতন ও এর অপব্যবহার’ রোধে সচেতনতাসৃষ্টিসহ বাংলাদেশের সকল শান্তিরক্ষীদের জন্য পদায়নপূর্ব প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে নারীদের যৌন সহিংসতা ও বৈষম্যের অভিযোগসমূহ আমলে নিয়ে এর বিচার ও প্রতিকারে আমরা নীতিমালা বাস্তবায়ন করেছি। ‘ইউএন উইমেন’ এর সহযোগিতায় আমাদের সরকার ‘নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা’ বিষয়ে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে যাচ্ছে”। এছাড়া রাষ্ট্রদূত মাসুদ বাংলাদেশে যৌন নির্যাতন ও সহিংসতা রোধে আইন, নীতিমালা ও তদন্ত ব্যবস্থা শক্তিশালী করা; নির্যাতনের স্বীকার নারীকে সুরক্ষাদানের পাশাপাশি তার প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং পূনর্বাসনসহ স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে সক্ষমতা বিনির্মাণ করার সরকারি পদক্ষেপসমূহের কথা উল্লেখ করেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ, জাতিসংঘ মহাসচিবের যৌন সহিংসতা রোধ বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি প্রমিলা প্যাটেন, ২০১৮ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. ডেনিস মুখউইজি ও মিজ্ নাদিয়া মুরাদ এবং ব্যারিস্টার অমল ক্লুনে এই উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন। দায়বদ্ধতা নিরূপণের গুরুত্ব এবং সহিংসতার শিকার নারীদের সুরক্ষাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে প্রধান্য দিয়ে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে যৌন সহিংসতা রোধের উপর এই উন্মুক্ত আলোচনায় আলোকপাত করা হয়।
নিরাপত্তা পরিষদের চলতি মে মাসের সভাপতি জার্মানি এই উচ্চ পর্যায়ের উন্মুক্ত আলোচনার আয়োজন করে।