প্রবাস মেলা ডেস্ক: বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের মনের কথা প্রকাশ করতে পারে না। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর একটি নতুন প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘আর্টিকেল ১৯’ তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখিয়েছে, এই শতাব্দিতে মানুষ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সংকটজনক অবস্থায় রয়েছে। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩৪ শতাংশ যা ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩ শতাংশ। আর্টিকেল ১৯-এর নির্বাহী পরিচালক কুইন ম্যাককিউ বলেন, ‘গত ২০ বছরে কোনও সময়েই এত বেশি মানুষ স্বাধীন ও মুক্ত সমাজের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়নি। যেমন মতামত প্রকাশ করার ক্ষমতা, একটি গণমাধ্যমে অবাধে ও নির্ভয়ে বলতে বা লিখতে পারার স্বাধীনতা অথবা একটি অবাধ ও নিরপক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা।’
প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে মুক্ত চিন্তার ক্ষেত্রে ভারত কতটা উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে। গত ১০ বছরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে দেশটিতে স্বাধীন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে। মোদি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এই পরিস্থিতি ‘সীমিত’ থেকে ‘সংকটজনক’ অবস্থায় নেমে এসেছে।
ইথিওপিয়ায় মত প্রকাশের স্বাধীনতাও ‘সঙ্কটজন ‘অবস্থায় পৌঁছেছে বলে উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। অন্যদিকে বুর্কিনা ফাসো, সেনেগাল এবং মঙ্গোলিয়াসহ আরও ৮টি দেশে গত বছর মত প্রকাশের স্বাধীনতা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে।
ম্যাককিউ বলেন, ‘প্রতিদিন বিশ্বের প্রতিটি জায়গায় স্বাধীনতার লংঘন হচ্ছে। রাষ্ট্রনেতারা একের পর এক মত প্রকাশের ক্ষেত্রগুলোর রাশ টেনে ধরছেন। অনেকে জননিরাপত্তা, নৈতিকতা বা জাতীয় নিরাপত্তার নাম দিয়ে নীতি কৌশলে সুক্ষ্ণ পরিবর্তন এনে এসব করছেন।’
প্রতিবেদনে সংকটজনক পরিস্থিতি বলা হচ্ছে তখন, যখন একটি দেশের মানুষ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারে না ও তথ্য পাওয়ার অধিকার হারায়। পারলেও তার বিনিময়ে তাকে কোন না কোন শাস্তির আওতায় আনা হয়। এছাড়া সেই দেশের গণমাধ্যমকে ‘সেন্সর’ করা হয় এবং কোন কারণে গণমাধ্যমের ওপর আঘাত আসে।
যদিও আর্টিকেল ১৯ সংস্থাটি বিশ্বব্যাপী মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অবনতির চিত্র তুলে ধরেছে; কিন্তু এর অপর পিঠও আছে। সেখানে আশাবাদী হওয়ার কারণও খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন ব্রাজিলের কথা ধরা যাক। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারোকে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল। আগে দেশটিকে সবাই সংরক্ষণশীল হিসেবে চিনলেও, এখন তারা অনেকটাই মুক্ত চিন্তার দেশ বলে বিবেচিত।
আর্টিকেল ১৯ ব্রাজিলের একজন কর্মী মারিয়া ট্রাজান বলেন, “ব্রাজিলের উদাহরণ আমাদের আশাবাদী করে যে, পরিবর্তন সম্ভব। তবে এটিও মনে রাখতে হবে অধিকার এবং স্বাধীনতাকে কখনই ‘টেকেন ফর গ্রান্টেড’ করা উচিত নয়। কাজের নিশ্চয়তা, স্বাধীনতা, অধিকার এগুলো প্রতিনিয়ত সমাজে বজায় রাখতে হয়।”
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।