শরীফ মুহম্মদ রাশেদ:
মাইক্রোনেশন হল ছোট রাজনৈতিক সত্ত্বা যারা নিজেদের স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে দাবি করে। কিন্তু তাদের এ দাবি বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত নয়। রাজনৈতিক প্রতিবাদ, তাত্ত্বিক পরীক্ষা, শৈল্পিক অভিব্যক্তি এবং ব্যক্তিগত বিনোদন এমন বিভিন্ন কারণে এগুলির সৃষ্টি হয়েছে। যেমন ‘ফিলেত্তিনো’। এটি ইতালির একটি গ্রাম। তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে এই গ্রামটিকে স্বাধীন দেশ ঘোষণা করা হয়। আবার ধরুন ‘হে-অন-ওয়াই’ এটি একটি বইয়ের দোকান। এটাকেও এর মালিক স্বাধীন দেশ ঘোষণা করেছে। এভাবে পৃথিবীতে অনেক মাইক্রোনেশন রয়েছে। তার কয়েকটি এখানে তুলে ধরা হলো।
১) লাডোনিয়া (Ladonia): এই মাইক্রোনেশনটি সুইডিশ শিল্পী লারস ভিল্কস ১৯৮০ সালে দক্ষিণ সুইডেনে তার ভাস্কর্য রাখার জন্য তৈরি করেছিলেন।
২) ফিলেত্তিনো (Filettino): ২০১১ সালে ইতালীয় সরকার ১ হাজারের কম অধিবাসীদের গ্রামকে কাছাকাছি গ্রামের সাথে একীভূত করার জন্য আদেশ জারী করে। কিন্তু ফিলেত্তিনোর মেয়র তার গ্রামকে স্বাধীন করার জন্য প্রচারণা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
৩) হে-অন-ওয়াই (Hay-on-Wye): যুক্তরাজ্যের ওয়েলসে অবস্থিত tongue-in-cheek একটি মাইক্রোনেশন, ১৯৭৭ সালে বই বিক্রেতা রিচার্ড বুথ দ্বারা এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
৪) মোলোসিয়া প্রজাতন্ত্র (Republic of Molossia): মোলোসিয়ার এই মাইক্রোনেশনটি ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদায় কেভিন বাঘ নামে একজন ব্যক্তি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
৫) পন্টিনহার রাজত্ব (Principality of Pontinha): পর্তুগালের মাদেইরা দ্বীপের সাথে সংযুক্ত এই দ্বীপটি ২০০৭ সালে একজন শিল্প শিক্ষক রেনাতো ডি ব্যারোসের দ্বারা কেনার পরে একটি মাইক্রোনেশন হয়ে ওঠে।
৬) ক্রিশ্চিয়ানিয়া (Christiania): ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্রিশ্চিয়ানিয়া একটি স্বঘোষিত স্বায়ত্তশাসিত এলাকা যা ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অবস্থিত।
৭) হাট নদী (Hutt River): ১৯৭০ সালে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় হাট নদীর মাইক্রোনেশনটি সার্বভৌম রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যখন লিওনার্ড ক্যাসলি নামে একজন ব্যক্তি তার খামারকে একটি স্বাধীন দেশ বলে ঘোষণা করেছিলেন।
৮) বিশ্ব শান্তির গ্লোবাল কান্ট্রি (Global Country of World Peace): ২০০০ সালে মহর্ষি মহেশ যোগী কর্তৃক এ মাইক্রোনেশনটি উদ্বোধন করা হয়েছিল, এটি মূলত ‘সর্বত্র শান্তিপ্রিয় মানুষের জন্য সীমানা ছাড়া একটি দেশ’ হিসাবে কল্পনা করা হয়েছিল।
৯) এরিকান সাম্রাজ্য (Aerican Empire): ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মাইক্রোনেশনটি আন্তঃগ্রহীয় অঞ্চল ছাড়াও কানাডার মন্ট্রিলে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের দাবি করে।
১০) উজুপিস (Užupis): উজুপিস লিথুয়ানিয়ার ভিলনিয়াসের ওল্ড টাউনে অবস্থিত একটি মাইক্রোনেশন। এর বাসিন্দারা ১৯৯৭ সালে একে স্বাধীন উজুপিস প্রজাতন্ত্র হিসাবে ঘোষণা করেছিল। এমনকি এর নিজস্ব সংবিধানও রয়েছে।
১১) ইকারিয়া (Icaria): এটি একটি গ্রীক দ্বীপ। এর বাসিন্দারা ১৯১২ সালে একে নিজেদের স্বাধীন দেশ বলে ঘোষণা করেছিল।
১২) সগিস (Saugeais): পূর্ব ফ্রান্সে অবস্থিত এবং আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত এই মাইক্রোনেশনটি ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ।
১৩) ফরভিক (Forvik): স্কটল্যান্ডের শেটল্যান্ডের এই দ্বীপটিকে ২০০৮ সালে ক্রাউন নির্ভরতা হিসাবে মাইক্রোনেশন ঘোষণা করা হয়েছিল।
১৪) রিপাবলিক অফ হাউট বে (Republic of Hout Bay): দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে অবস্থিত এই মাইক্রোনেশনটি ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে প্রচারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
১৫) কোরাল সাগর দ্বীপপুঞ্জ (Coral Sea Islands): অস্ট্রেলিয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব কুইন্সল্যান্ড ২০০৪ সালে এলজিবিটি অধিকার কর্মীদের একটি গ্রুপ দ্বারা দ্বীপগুলি নিয়ে একটি মাইক্রোনেশন হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
১৬) সেলেস্তিয়া (Celestia): ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মাইক্রোনেশনটি পৃথিবী ছাড়িয়ে মহাবিশ্বের সমগ্র অঞ্চলের দাবি করে।
১৭) কুগেলমুগেল (Kugelmugel): এই মাইক্রোনেশনটি অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার একটি বল-আকৃতির ঘর নিয়ে গঠিত যা ১৯৭৬ সালে একটি বিল্ডিং এর পারমিট বিবাদের ফলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
১৮) ফ্রেডোনিয়া (Fredonia): ফ্রেডোনিয়া প্রজাতন্ত্র ১৮২৬ সালে মেক্সিকো থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার চেষ্টা করে। পরে টেক্সাসের একদল অ্যাংলো বসতি স্থাপনকারী একে স্বাধীন দেশ হিসেবে ঘোষণা করে।
১৯) অয়াঙ্গামমনা (Whangamomona): অয়াঙ্গামমনা নামের গ্রামীণ আবহের মাইক্রোনেশনটি নিউজিল্যান্ড শহরে অবস্থিত। এটি ১৯৮৯ সালে পর্যটনকে উৎসাহিত করার প্রয়াসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
২০) উত্তর ডাম্পলিং (North Dumpling): মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থিত এই দ্বীপটি ১৯৮৬ সালে এর মালিক ডিন কামেন দ্বারা স্বাধীন দেশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল।
২১) ফ্রেস্টোনিয়া (Frestonia): ১৯৭৭ সালে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের ফ্রেস্টন রোডের বাসিন্দারা ফ্রেস্টোনিয়াকে যুক্তরাজ্য থেকে আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
২২) রেডোন্ডা রাজ্য (Kingdom of Redonda): ১৮৬৫ সালে রেডোন্ডা দ্বীপের একজন নাগরিক (এখন আইনগতভাবে অ্যান্টিগুয়া এবং বারবুডার অংশ) নিজেকে রেডোন্ডার রাজা ঘোষণা করে এ মাইক্রোনেশনের প্রতিষ্ঠা করেন।
২৩) সিল্যান্ডের প্রিন্সিপালিটি (Principality of Sealand): এ মাইক্রোনেশনটি ইংরেজ স্বাশিত আটলান্টিক উপকূলে অবস্থিত। সামরিক সুবিধা প্রাপ্ত পি. রয় বেটস ১৯৬৭ সালে একে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন।
২৪) পেশেনিকা (Peščenica): ক্রোয়েশিয়ার জাগ্রেবে অবস্থিত এ মাইক্রোনেশনটি স্বৈরশাসিত প্রজাতন্ত্রের একটি ব্যঙ্গাত্মক প্রকল্প।
২৫) ওয়েন্ডল্যান্ড (Wendland): জার্মানিতে অবস্থিত ফ্রি রিপাবলিক অফ ওয়েন্ডল্যান্ড মাইক্রোনেশনটি ১৯৮০ সালে একটি পারমাণবিক বিরোধী প্রতিবাদ শিবির হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
২৬) মিনার্ভা (Minerva): ১৯৭২ সালে, রিয়েল-এস্টেট মিলিয়নেয়ার মাইকেল অলিভার ফিজির দক্ষিণে মিনার্ভা রিফে অবস্থিত দ্বীপগুলিতে একটি স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। পরে ফিজি সরকার তা উৎখাত করে।
২৭) আরামোয়ানা (Aramoana): নিউজিল্যান্ড এর আরামোয়ানা সম্প্রদায় ১৯৮০ সালে নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা করে।
২৮) হিমবাহ প্রজাতন্ত্র (Glacier Republic): এই মাইক্রোনেশনটি ২০১৪ সালে চিলি এবং আর্জেন্টিনার মধ্যে একটি সীমান্ত অঞ্চলে গ্রিনপিস দ্বারা হিমবাহের জন্য চিলির পরিবেশ সুরক্ষার অভাবের প্রতিবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
২৯) আতেরিনা লুচিনা (Aeterna Lucina): এটি একটি সার্বভৌম রাজ্য। এই মাইক্রোনেশনটি ১৯৭৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায় একজন স্ব-ঘোষিত ব্যারন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।