অসীম বিকাশ বড়ুয়া: দেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা-২০২৫। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে এবার নতুন এক ঐক্যের ডাক দিয়েছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন বৌদ্ধ সংগঠন। গত ২৯ আগস্ট, শুক্রবার, সন্ধ্যা ৭টায় জামালখানের বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো এক ঐতিহাসিক মতবিনিময় সভা, যা ছিল “সম্মিলিত প্রবারণা উদযাপন পরিষদ”-এর প্রথম পদক্ষেপ।
সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন বৌদ্ধ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তারা উৎসব উদযাপনের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেন। এই সভার প্রধান আকর্ষণ ছিল বাংলাদেশ সরকারের বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ঐক্য ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক বাবু রুবেল বড়ুয়া মহোদয়ের উপস্থিতি। তিনি প্রবারণা উদযাপনের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং সকলকে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। তার এই বক্তব্যে নতুন করে আশার আলো দেখতে পান উপস্থিত সকলে।
ঐক্য ও দাবি:
ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবকে আরও মহিমান্বিত করতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতারা এই সভায় ১১ দফা দাবি উত্থাপন করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবিটি ছিল প্রবারণা পূর্ণিমায় সরকারি ছুটি ঘোষণা। এই ছুটি ঘোষণার মাধ্যমে দেশের সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী তাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই উৎসবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিতে পারবেন বলে তারা মনে করেন।
ঐতিহ্যের পুনরাবৃত্তি:
“অহিংসা পরম ধর্ম” এই স্লোগানে বিশ্বাসী হয়ে এবারের প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপনে ভিন্ন এক মাত্রা যোগ করতে প্রায় ৬০টিরও বেশি বৌদ্ধ সংগঠন একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। আগামী ৬ অক্টোবর, সোমবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য হলো “অহিংসা পরম ধর্ম”। এই মহৎ বাণীকে অন্তরে ধারণ করে সবাই একসঙ্গে ফানুস ওড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা কেবল উৎসব নয়, বরং একতার প্রতীক হয়ে উঠবে।
উপস্থিত ছিলেন যাঁরা:
এই ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে সামিল হতে সভায় উপস্থিত ছিলেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী ঐক্য ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক যুবদল নেতা বাবু প্রিতম বড়ুয়া, চকবাজার থানার বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বাবু তাপস বড়ুয়া, চট্টগ্রাম মহানগর যুবদল সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু কমলজ্যোতি বড়ুয়া, ডবলমুরিং থানার স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক বাবু সজল বড়ুয়া, আকবর শাহ থানার যুবদল নেতা বাবু সুমন বড়ুয়া, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও দক্ষিণ জেলা যুবদলের সংগঠক প্রকৌশলী বাবু রনি বড়ুয়া চৌধুরী, বোয়ালখালী থানার জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ঐক্য ফ্রন্টের সভাপতি পল্টু কান্তি বড়ুয়া, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ঐক্য ফ্রন্টের পটিয়া উপজেলার সহ-সভাপতি বাবু কল্লোল বড়ুয়া ও শোভন বড়ুয়া, কন্হক বুড্ডিস্ট ইউনিটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বাবু পিয়াল বড়ুয়া রোহান, বৌদ্ধ ছায়াঙ্গনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও যুবনেতা প্রকৌশলী চয়ন বড়ুয়া, সীবলী সংসদ-এর সাংগঠনিক সম্পাদক দোলন বড়ুয়া, সীবলী মানবিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ব্যাংকার বনরুপ বড়ুয়া অমি ও মহাসচিব রুপক বড়ুয়া, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট কাউন্সিলের সদস্য সচিব সাংবাদিক রাজু চৌধুরী, বোয়ালখালী সম্মিলিত বৌদ্ধ পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক বাবু অধীর বড়ুয়া, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাপলা বড়ুয়া, কাজল কান্তি বড়ুয়া, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ঐক্য ফ্রন্ট চন্দনাইশ উপজেলার সভাপতি বাবু রুবেল বড়ুয়া, পুলক বড়ুয়া, ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ বাংলাদেশী বুড্ডিস্টের মিডিয়া চেয়ারম্যান ও কোরিয়া-বাংলা প্রেসক্লাবের ভাইস চেয়ারম্যান সাংবাদিক অসীম বিকাশ বড়ুয়া, সত্যজিত বড়ুয়া, রাজু বড়ুয়া, সুচয়ন বড়ুয়া সহ আরো অনেক বৌদ্ধ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বৌদ্ধ সংগঠনগুলো হলো: সম্যক, বাংলাদেশ কলেজ ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট মানবিক ব্লাড ব্যাংক, ধর্মচক্র, স্বধর্ম জ্যোতি, মঙ্গল সংঘ, মানব কল্যাণ ধম্মকথা, বৌদ্ধ তরুণ, বুদ্ধজ্যোতি সংঘ, মৈত্রী সংঘ, আবির্ভাব, নবদূত, আরন্যক সংঘ, সারনাথ, ছন্দক, ত্রিশরণ বৌদ্ধ পরিষদ, আর্য সংঘ, নির্বাণ, বনভান্তে স্বধর্ম পরিষদ, সম্যক বৌদ্ধ তারুণ্য, মহাবোধি মৈত্রী সংঘ, বৌদ্ধ অগ্রগামী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, নন্দন, প্রিমিয়ার বুড্ডিস্ট, মৈত্রী মানবিক, বুদ্ধ ধর্ম একতা, সম্বুদ্ধ ঐক্য পরিষদ, অলৌকিক সংঘ, স্বপ্বসিরি যুব সংঘ সহ আরো অনেক সংগঠন।
বক্তারা বলেন:
আসন্ন প্রবারণা অনুষ্ঠানের দিন মূল স্টেজে ধাক্কাধাক্কি বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা যাবে না। চকলেট বাজি বন্ধ ও নিষিদ্ধ থাকবে। সেদিন কীর্তন হবে, ড্রোন উড়বে। অনুষ্ঠান শুভ উদ্বোধন করা হবে সন্ধ্যা ৬টায়, এর আগে ফানুস উঠবে না। পরম পূজনীয় ভিক্ষুসংঘের নিকট বিনীত অনুরোধ করা হবে চারটা থেকে ছটার মধ্যে উৎসর্গসহ উপাসক-উপাসিকাদেরকে ধর্ম দান শেষ করার জন্য। মেডিকেল টিম থাকবে, পানির ব্যবস্থা করা হবে এবং অভিজ্ঞ মানুষ দিয়ে ফানুস বাজি তৈরি করতে হবে যাতে ওজন বেশি না হয় বা অন্যান্য কৌশলগুলো খেয়াল রাখা যায়।
প্রত্যেক সংগঠন একে অপরের প্রতি ভাতৃত্ববোধ বজায় রাখবে। প্রত্যেকটার মেয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং তারা যাতে উচ্ছৃঙ্খলতা না করে। এবার দেখার মতো প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব উপহার দেব সবাই মিলে। ছিনতাইকারী, ইভটিজার, মোবাইল চোর এবং মা-বোনদের ব্যাগ-চেইন টান দেয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমরা এ দেশের নাগরিক এবং মনে রাখতে হবে এই অনুষ্ঠান শুধু আমাদের নয়, পুরো বৌদ্ধ জাতীর এবং দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। আমাদের বৌদ্ধ জাতি কলঙ্কিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সর্বোপরি প্রশাসনের বিভিন্ন বাহিনী, সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা এবং মিডিয়া কর্মীদেরকে সাহায্য করতে হবে। অনুষ্ঠান শেষ করার পরে এলোমেলো জিনিসপত্রগুলো গুছিয়ে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। এছাড়াও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, সম্মানিত প্রশাসন ও মাননীয় ধর্মীয় উপদেষ্টা মহোদয়কে অনুরোধ সহ চিঠি পাঠানো হোক যাতে সব উপজেলা, থানা, গ্রামে, গঞ্জে সর্বত্র আমাদের সমস্ত বৌদ্ধ গ্রাম এবং বিহারগুলোতে প্রশাসন পাঠিয়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
পরিশেষে, দেশ ও জাতির মঙ্গল এবং জগতের সকল প্রাণীর সুখ কামনা করে সভা সমাপ্তির ঘোষণা করা হয়।