সম্পাদকীয়:
কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে আসার পর এক ধরনের হুন্ডির ফাঁদে পড়েছে রেমিট্যান্স। এ কারণে কয়েক মাস ধরে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাচ্ছেন। এমনকি প্রণোদনা বাড়ানোর পরও বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ তেমন বাড়েনি। অর্থাৎ ব্যাংকের চেয়ে খোলাবাজারের রেট বেশি হওয়া এবং তুলনামূলক খরচ কম হওয়ায় প্রবাসীদের অনেকেই হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন। এ কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না।
রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় আনার ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বিদেশি কোনো মানি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে চুক্তি করতে (ড্রয়িং অ্যারেঞ্জমেন্ট) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগাম অনুমতি নিতে হবে না বলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলমান ডলার সংকটের মাঝে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর চেষ্টায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু তার পরও রেমিট্যান্স প্রবাহ কাঙ্খিত পরিমাণ বাড়ছে না।
প্রতি বছর বাংলাদেশে বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স ব্যাংকিং মাধ্যমে স্থানান্তরিত হলেও হুন্ডির মাধ্যমে তার চেয়ে বেশি পরিমাণ অর্থ পাঠানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রবাসীদের বৈধ চ্যানেল ব্যবহার করতে উৎসাহিত করার সব সরকারি প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিচ্ছে ডিজিটাল হুন্ডি সিস্টেম। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, হুন্ডির মতো অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর কারণে দেশ থেকে অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। যা চাপে থাকা অর্থনীতির জন্য দুঃসংবাদ।
এমন প্রেক্ষাপটে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ব্যাংকিং চ্যানেলের সঙ্গে খোলাবাজারের ডলারের দামের পার্থক্য কমিয়ে আনতে হবে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ কমিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। দেশে কারা হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে, যাতে অবৈধ ডিজিটাল হুন্ডি বন্ধ হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক সংকট, মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি সংকট ও বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের চলমান অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ সচল রাখা জরুরি। এ প্রেক্ষিতে রেমিট্যান্স কমার পেছনে কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে কিনা, তা অনুসন্ধান করা জরুরি।
তবে আশার কথা ডিজিটাল হুন্ডি বন্ধে নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। অভিযান পরিচালনায় মাঠে নামানো হয়েছে প্রায় ১০টি টিম। এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। কারণ, ডিজিটাল হুন্ডি বন্ধ করতে না পারলে দেশের অর্থনীতি সংকটে পড়বে। দুর্নীতিবাজরা অবাধে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে সেখানে বাড়ি-গাড়ি কিনে আরামে জীবনযাপন করবে। আর বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ বিপদে পড়বে। এজন্য সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে অবৈধ ডিজিটাল হুন্ডি বন্ধ হয়।