সিকদার গিয়াসউদ্দিন, লাস ভেগাস, নেভাদা, যুক্তরাষ্ট্র:
বাংলা বিহার উড়িষ্যার স্বাধীন নবাব ছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। তাঁর মৃত্যুর পর কেবলমাত্র তখন আমাদের বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত এই ভূখন্ডটিকে স্বাধীন করার কথা কেউ বলেছিলেন? তা সাংগঠনিকভাবে একটি সফল মুক্তিযুদ্ধে রূপান্তর করার কথা কেউ ভাবতে পেরেছিলেন কি?
বৃটিশ শাসনাধীন ভারতে কেবলমাত্র তখন আমাদের বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত এই ভূখন্ডটি’কে (আবারো কেবলমাত্র) স্বাধীন করার কথা কেউ বলেছিলেন কি? এবং সাংগঠনিকভাবে তা একটি সফল মুক্তিযুদ্ধের আবহে রূপান্তর করার কথা তখন কেউ ভেবেছিলেন কি? লিখেছিলেন কি? পেরেছিলেন কি?
পাকিস্তান আমলে ১৯৪৭ সাল থেকে ব্যক্তিগতভাবে বক্তৃতায় পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করার কথা বললেও শুধুমাত্র স্বাধীনতা অর্জনের জন্য কোন গোপন সংগঠন গড়ে উঠেছিল কি? আওয়ামী লীগ সহ কোন দল অথবা সাংগঠনিকভাবে গোপনে অথবা প্রকাশ্যে বাংলাদেশ নামে কোন প্রস্তাব পাশ করেছিলেন কি? কে কখন কোথায় প্রকাশ্যে বাংলাদেশ নামের প্রস্তাব উত্থাপন করেন ও দুই তৃতীয়াংশেরও বেশী ভোটে তা গৃহীত হয়। তখনকার বাস্তবতায় তাঁরা কি কোন সংগঠনের লেজুডবৃত্তিক করতেন না স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতেন। সেই সময়ে ‘সরাসরি স্বাধীনতা অর্জন’ ও ‘আগে স্বায়ত্বশাসন ও পরে স্বাধীনতা’-একই সংগঠনে দুইটি ধারার অস্থিত্ব ছিল?
১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেবলমাত্র বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত এই ভূ-খন্ডটটিকে দশ বছরের মধ্যে স্বাধীন করার প্রত্যাশায় প্রথমবারের মত কোন সংগঠনটি গড়ে উঠেছিল? রক্ত শপৎ নেয়া হয়েছিল কি? সংগঠনটির নাম কি? কে ছিল রূপকার?
১৯৬২ সালে গড়ে উঠা ঐ গোপন সংগঠন বাংলাদেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে সেই সময়কার লেজুডবিহীন কোন ছাত্র সংগঠনকে বেঁছে নিয়েছিলেন? বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর সেই ছাত্র সংগঠনটি ১৯৭২’সালে দু’টি দলের লেজুড সংগঠনে পরিনত হয়েছিল কি? কেন?
১৯৬২ সালে গড়ে উঠা ঐ সংগঠন বাংলাদেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তখনকার সময়ের খ্যাতনামা জাতীয় নেতাদের স্মরণাপন্ন হলে কে কি বলেছিলেন? কেন রাজী হননি? সবশেষে সর্বোদয় বয়োজ্যৈষ্ঠ নেতা মওলানা ভাসানীর স্মরণাপন্ন হলে তিনি কি উপদেশ দিয়েছিলেন?
মওলানা ভাসানী’র উপদেশ মোতাবেক ঐ গোপন সংগঠনটি দায়িত্ব পালন করেছিলেন কি? যাঁর কাছে গিয়েছিলেন কোন শর্তে তিনি রাজী হয়েছিলেন? তিনি কে ছিলেন?
১৯৬২, ১৯৬৪, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৭১ সালে ঐ গোপন সংগঠনটি কি কি কর্মকান্ড পরিচালনা করে আওয়ামী লীগকে পেছন ফেরার সুযোগ না দিয়ে সকল প্রগতিশীল দলসমূহের সমন্বয়ে পাকিস্তানের আইরনম্যান খ্যাত আইয়ূব খান ও সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে দু’দু’টি সফল গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছিলেন?
বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত ভূখন্ডটিকে মুক্তিযুদ্ধে রূপান্তরের আগে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল? সুতিকাগার কোথায় ছিল? বাংলাদেশ কি আসমান জমিন থেকে হঠাৎ করে নাজিল হয়েছিল?
এই যে স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশের পতাকা তা কোন নেপথ্য সংগঠনের নির্দেশে কে বা কাঁরা কোন উপলক্ষে কেন কিভাবে তৈরী ও কে অনুমোদন করেন? আসল লক্ষ্য কোথায় ছিল? আওয়ামী লীগ সহ কোন সরকার তা দেশবাসীকে জানিয়েছেন কি? সেই পতাকা নিয়ে রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধান নির্বাহী বা প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টা ও মন্ত্রী বা উপদেষ্টাগণ গাড়িতে লাগিয়ে একটি স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেন কি? আন্দোলন সংগ্রামে গণঅভ্যূত্থানের দিনগুলোতে মাথায় বাংলাদেশের পতাকা ধারনের কারণ কি? কেন বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে তা প্রকাশ করা হয়না? স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বইপুস্তকে পাওয়া দুঃস্কর কেন?
তখনকার সময়ের জনপ্রিয় শ্লোগানগুলো কাদের ও কোন নেপথ্য সংগঠনের অনুমোদনের মাধ্যমে গৃহীত হওয়ার কথা জানা যায়? ঐ গোপন সংগঠন’টি স্বাধীনতার লক্ষ্যে যে বাহিনী গঠন করেন ও যিনি প্রধান ছিলেন-আওয়ামী লীগ কখনো তা বলেছে কি? কেন বলেনি?
‘আমার সোনার বাংলা’ জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে প্রথম কোন নেপথ্য সংগঠনটি, কে বা কাঁরা কোথায় কিভাবে নির্ধারণ করেন? বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এই অকথিত বিষয়গুলো প্রকাশের জন্য এ পর্যন্ত কোন উদ্দ্যোগ নেয়া হয়েছে কি? কেন নেয়া হয়নি? স্বাধীনতার সত্যিকার ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে এত সংকীর্ণতা কেন? তাবৎ বিশ্বে স্বাধীনতা আন্দোলনের সকল ছোটখাট খুঁটিনাটি রাষ্ট্রীয়ভাবে তুলে ধরা হয়।যেমন ‘অনলস ইন আমেরিকা’ ‘ফরাসী বিপ্লব’ ইত্যাদি।
কোন নেপথ্য সংগঠনের বা কাঁদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়? কোন সংগঠনের নেতৃত্বে কে কোথায় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলন করেন? কেন তখনকার নির্বাচনে ভূমিধ্বস বিজয়ী আওয়ামী লীগ পতাকা উত্তোলন করেনি? অতঃপর আওয়ামী লীগ পেছন ফিরতে পেরেছিল? কেন পারেনি?
কোন নেপথ্য সংগঠনের নেতৃত্বে ৩’রা মার্চ পল্টন ময়দানে ইশতেহার পাঠ করা হয়? ইশতেহারের পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা কোথাও আছে কি? ৩’রা মার্চ আমন্ত্রণ না জানালেও অনির্ধারিতভাবে অযাচিতভাবে কে এসেছিলেন? ৩’রা মার্চ পল্টন ময়দান থেকে কে ৭’ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক জনসভার ঘোষণা কে দিয়েছিলেন? ৭’ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে “এবারের সংগ্রাম-স্বাধীনতার সংগ্রাম ও এবারের সংগ্রাম- মুক্তির সংগ্রাম” কোন সংগঠনটি বা কাঁরা সংযোজন করতেই হবে এবং সংযোজন করা অবশ্য করণীয় বলেছিলেন?
২৩’শে মার্চ পাকিস্তান দিবসের পরিবর্তে প্রতিরোধ দিবস পালন করতে কোন নেপথ্য সংগঠনটি উদ্যোগ গ্রহণ করছিলেন? আমেরিকার ABC ও CBS টেলিভিশন সহ বিশ্বমিডিয়ায় তা কিভাবে প্রচারিত হয়েছিল? ABC’ নিউজে ছাত্রদের ডি ফ্যাক্টো গভর্ণমেন্ট জাতীয় কিছু বলা হয়েছিল কি? অতঃপর ইতিহাসের জঘন্য গণহত্যা কখন শুরু হয়েছিল? কত তারিখ? কে এবং কেন গ্রেফতার হয়েছিলেন? চট্টগ্রাম বেতার থেকে কাঁর বক্তব্যে পুলিশ, ই পি আর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট সহ আমজনতা উজ্জীবিত হয়েছিলেন?
মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিলেও মহান মুক্তিযুদ্ধ কাঁর নামে পরিচালিত হয়েছিল?
এরকম অনেক বিষয় আছে যা বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে কোন সরকারই জাতির সত্যিকার স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস কেবলমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য জানতে দেইনি বলে বিজ্ঞমহলে আলোচিত সমালোচিত। স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ১৯৬২’সাল থেকে ১৯৭১’সালের এই সংগঠনটির সকল কর্মকান্ড কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবনতা কেন? যা মানচিত্র খচিত একটি ভূখন্ড’কে মুক্তিযুদ্ধে রূপান্তর করে।সকল ছাত্র জনতা সহ সকল মহলের সম্মিলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও স্বাধীনতা আন্দোলন ছাড়া অবশেষে স্বাধীনতা অর্জন কি আসমান জমিন এমনি এমনি নাজিল হয়েছিল?
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বাধীনতা অর্জনের পর ব্যক্তিগত বা আদর্শগত কারনে নানা বিভক্তি ও দলগঠন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।তবে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহনকারী ব্যক্তি বা সংগঠনগুলোকে ইতিহাসে মর্যাদাপূর্ণ স্থান দান করা হয়।ঐসব ব্যক্তিত্ব ও সংগঠনের চরিত্র হনন নৈতিক অপরাধ বলে পরিগনিত হয়।তবে ব্যক্তি, নেতৃত্ব ও সংগঠনের আদর্শবিরোধী, অসাধু শাসন ও কর্মকান্ডের ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা গনতন্ত্রের বিকাশে অন্যতম হাতিয়ার হিসাবে স্বীকৃত।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব কর্মকান্ডের স্বীকৃতি একটি পবিত্র বিষয়। যা শুধু ত্যাগের ও বীরত্বের।যেখানে চাওয়া পাওয়ার কিছুই ছিলনা।মুক্তিযুদ্ধের পর ব্যক্তি, নেতৃত্ব বা সংগঠনের কর্মকান্ডের সমালোচনা করার অধিকার সকলের। কেউ দেবতা বা ফেরেশতা কিংবা নবী বা ঋষী নয়।
বিগত ষোল বছর ছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি সহ ১৪ দলীয় আওয়ামী ভয়াবহ শাসনকাল কাল। গুম, খুন, লুঠতরাজ, দরিয়াচুরি, বিদেশে অর্থপাচার স্বাভাবিক ব্যাপার হিসাবে ধরা হয়।রাষ্ট্রের সকল অরগানের দলীয়করণ বিভৎস আকার ধারণ করে। ধ্বংস করা হয় প্রশাসনিক চরিত্র। নৈতিকতার চরম অধঃপতনের কথা বাদই দিলাম।জনবিরোধী আইন তৈরী করে মানবাধিকার ও ভোটাধিকার হরণের কথাও বাদ দিলে কথা বলা ও লেখার অধিকার ছিনিয়ে নেয়া হয়।সারাদেশে গুমোট পরিস্থিতির উদ্ভব হয়।
এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা এমন বেপরোয়া হয়ে উঠে যে, গোটা দেশকে তার ও তার বাবার দেশ বলে দাবী করে বসে।ইয়েলো জার্ণালিজম ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সমর্থন রমরমা আকার ধারণ করে।মুক্তিযুদ্ধে অন্য সকলের অবদানকে ধূলিস্মাৎ করার অন্তহীন প্রচেষ্টা স্মরণ করার মত।এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষ মা’বোনের ইজ্জতের বিষয়টিও নিতান্তই গৌন আকার দেয়ার প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয়।সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম ছিলেন সেক্টর কমান্ডার।মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানকে কালিমাযুক্ত করার অব্যাহত প্রচেষ্টাও লক্ষনীয় ছিল।
বিএনপি শাসনামলে ব্যক্তি ও পরিবারিক রাজনীতিকে ব্যাপক আকারে প্রমোট করা হয়। ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ আরও বেশী ব্যক্তি ও পারিবারিক রাজনীতিকে উন্মত্তভাবে ধারণ করে।এমনকি গ্রামে মেম্বারের ছেলেই মেম্বার হবে-ঐ পর্যায়ে নিয়ে যায়।গ্রামে প্রথমবারের মত দলীয় শাসনের কুপ্রভাব দেখা দেয়।
আওয়ামী লীগ বেপরোয়াভাবে যত্রতত্র স্বাধীনতা আন্দোলনের শ্লোগান জয়বাংলা’কে হাইজ্যাক করে ঐ শ্লোগানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।ধারাবাহিকভাবে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ব্যবসায়িক রূপদান করে।যা ছিল শিষ্টাচারের চরম লংঘন। লেবু বেশী টিপলে যা হয়- শুনতে শুনতে দেশের মানুষ শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভে দুঃখে ঠোঁট কামড়াতে থাকে। স্মরণ রাখতে হবে যে, তা শেখ মুজিব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’কে নয়-ঐ দু’টি ইনষ্টিটিউশনকে ব্যবসায়িকভাবে ব্যবহার করার ক্ষোভে আগ্নেয়গিরির দাবানল জ্বলে উঠার অপেক্ষা মাত্র ছিল। জনগনের পালস্’কে তাই ভেতর থেকে ধারণ করতে হবে।•মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভয়ংকরভাবে অসাধু অনৈতিকভাবে ব্যবসায়ে রূপান্তর স্বৈরাচারী সরকারের ভূমিধ্বস পতনের কারণ নয় কি?
আওয়ামী গং শাসিত আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে সকল বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের বিশেষ করে বি এন পি ও জামায়াতে ইসলামের নেতা কর্মীদের গুম,খুন ও জুলুমের বিষয়টি সকলেই জানে। গায়েবী মামলা দিয়ে দেশের অসহায় মানুষদের ব্ল্যাকমেলিং নিত্ত নৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল। তথাকথিত আসামী’কে পাওয়া না গেলে বাবা মা ভাই বোন কারো রেহাই ছিলনা। নানাভাবে হয়রানী ও ভয়ের সংস্কৃতিকে সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা স্বাভাবিক মনে করা হতে থাকে। এককথায় যা ছিল আশুরিক ও অমানুষিক।এমতাবস্থায় আমাদের স্মরণ করা উচিত নয় কি যে, “১৯৭১’ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল একটি পবিত্র অনুভূতি। অনুভব। যা অন্যায়, অবিচার, অসাম্য ও জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতি মুহুর্তে বিদ্রোহ শেখায়।” ২০২৪’য়ের আন্দোলন সংগ্রামে স্বৈরাচারের প্রতিভূ শেখ হাসিনার ব্যাঙ্গাত্মক ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বাক্যের প্রতিবাদে মধ্যরাতে সংগ্রামী ছাত্রী বাহিনী’র গগনবিধারী শ্লোগান ও ছাত্রদের সম্মিলিত মিছিল ও “তুমি কে আমি কে-রাজাকার রাজাকার। কে বলেছে কে বলেছে- স্বৈরাচার স্বৈরাচার” সহ মুক্তিযুদ্ধের সেইসব বিখ্যাত গান, বাংলাদেশের পতাকার বন্দনা বানিয়ে মাথায় বেঁধে বিস্ময়কর ব্যবহার Gen-Z’রা মুক্তিযুদ্ধের আসল চেতনা ধারণ করে, ইতিহাস থেকে শিক্ষাগ্রহন করে গনঅভ্যূত্থানের বিজয় নিশ্চিত কি করেনি?
নতুন অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যেই জনবান্ধব ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিজেদের অগ্রগামীদের তালিকায় বিশ্ব স্বীকৃতি অর্জন করেছে। বিশেষ করে নোবেল বিজয়ী ড.মোহাম্মদ ইউনুছের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান ও নিরবিচ্ছিন্ন কুঠনীতি ও ব্যক্তি ইমেজ বাংলাদেশকে যে অনন্য উচ্চতায় তিনি নিয়ে গেছেন-তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমরা এমন কোন সিদ্ধান্ত যেন গ্রহন না করি যা ড. মোহাম্মদ ইউনূছকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।তাঁর ইমেজ’কে ক্ষুন্ন করবে। পেরিয়ড।
তাই স্বেচ্ছাচারী খুনী স্বৈরাচারের প্রতীক হাসিনা গং’য়ের অপরাধের জন্য ১৯৭১’সাল পূর্ববর্তি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মকান্ড কন্যা হাসিনার জন্য প্রশ্নবিদ্ধ হলেও তিনি কি মেয়ের অপরাধের জন্য কবর থেকে অভিশাপ দেননি? মেয়ের জন্য বাবাকে অপরাধের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর নজির সভ্যদেশে আছে কি? তাই ১৯৭১’সাল ও তৎপূর্ববর্তি সকল কাজের স্বীকৃতি যেমন বঙ্গবন্ধুকে দিতে হবে- তেমনি ১৯৭২’সাল পরবর্তি দলীয় স্বেচ্চাচারিতা ও একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শেখ মুজিবের কঠোর সমালোচনা যে কারো করার অধিকার আছে। অপরাধের দায়ভার অপরাধীর। তা মনে রাখতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ এখন দেশের আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণ, বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের চিকিৎসা ও অন্যান্য ব্যয়ভার বহন করা, নিহতদের পরিবারের ভরণ পোষণ সহ এককালিন অর্থনৈতিক অনুদান প্রদান, প্রশাসনকে গতিশীল করা, প্রয়োজনে সকল সেক্টরকে গতিশীল করার জন্য, অসাধু, স্বৈরাচারের দোসর দূর্ণিতীবাজ কর্মকর্তাদের চিহ্নিতকরতে হবে।তাই বিপ্লবের গর্ভ থেকে বেরিয়ে আসা বিভিন্ন জেলার ট্যালেন্ট ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যানুপাতিকহারে উপদেষ্টাগণের সহকারী হিসাবে নিয়োগদানের বিষয়টি খূবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা ভূল করতে পারে। তবে তাঁরা দেশ ও জাতির সাথে বেঈমানী করবেনা।বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের তদারকী করাও অন্তর্বর্তী সরকারের আসল কাজ।
অহেতুক সমালোচনার মূখোমূখি হতে হয় এবং দায়ভার সোজাসুজি বিশ্ববরেন্য ড. মোহাম্মদ ইউনূছের উপর না বর্তায়- সেদিকে কড়া দৃষ্টি নিবদ্ধ করতেই হবে। ড. মোহাম্মদ ইউনূছকে কায়েমী স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গোষ্টীগুলো শেখ হাসিনার মত চতুর্দিকে বেষ্টনী তৈরী করে জনবিচ্ছিন্ন করতে না পারে সেদিকে সকলকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ইতিহাসের বড় শিক্ষা হচ্ছে ক্ষমতা পেলে আমরা অন্ধ ও অতি বিশ্বাসী হয়ে উঠি। সাধারণ জনগনের নিত্যদিনের নিত্য প্রয়োজনীয় বিষয়ে উদাসীন হয়ে পড়ি। ক্ষমতা পেলে কখনো কখনো এমন অবস্থার অবতারনা করি-যা দেখে বেহেশতের ফেরেশতারা কাঁদতে থাকে। ইতিহাস নির্মম। তা সবসময় হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। একমাত্র মানবাধিকার, জনবান্ধব ও জনস্বার্থ সংরক্ষনের ভেতর দিয়ে সমাধানের পথ তৈরী করাটাই আসল।