সম্পাদকীয়:
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম উৎস রেমিট্যান্স। আর এই রেমিট্যান্স পাঠায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমজীবীরা। বিএমইটির রেকর্ড অনুযায়ী, ১৯৭৬ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মোট ১ কোটি ৩০ লাখ বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজে গেছেন। পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক নারী কর্মীরাও বিদেশে গিয়ে দেশের জন্য মূল্যবান রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। দেশের অর্থনীতিতে তাদের অবদান কোনভাবেই কম নয়। জনশক্তি রপ্তানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে ১৯৯১ সালে প্রথম বিদেশে নারী কর্মী রপ্তানি শুরু হয়। ওই বছর ২ হাজার ১৮৯জন নারী কর্মী বিদেশে যান। গত বছর পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে প্রায় ৮ লাখ নারী কর্মী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়েছে। নারী কর্মী রপ্তানীর এ ধারা এখনো অব্যাহত আছে।
বিএমইটি সূত্রে আরও জানা গেছে, চলতি বছরের ৯ মাসে বাংলাদেশ থেকে কর্মসংস্থানের উদ্দেশে বৈধ বহির্গমণ ছাড়পত্র নিয়ে ৮৬ হাজার নারীকর্মী সৌদি আরব, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন, লেবানন সহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি নারীকর্মী গেছেন বাংলাদেশের বৃহৎ শ্রমবাজার সৌদি আরবে। তবে অনেক নারীকর্মী বিভিন্ন দেশে গিয়ে শারীরিক, মানসিক নিযাতন ও বৈষম্যের শিকার হন বলে জানা গেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনও জানিয়েছেন, প্রবাসে কর্মরত নারীদের মধ্যে ১ শতাংশ নির্যাতন ও সমস্যার শিকার হয়। সম্প্রতি সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তারা বিভিন্ন অভিযোগ পেয়ে ২৪ জন নারীকর্মীকে স্থানীয় রিক্রুটিং এজেন্সির হেফাজত থেকে উদ্ধার করে তাদের সেফ হোমে রাখার ব্যবস্থা করেছেন।
এদিকে নির্যাতিত হয়ে দেশে ফেরা নারী কর্মীদের অভিযোগও কম নয়। নানা সমস্যার কারণে বছরে পাঁচ শতাধিক নারীকর্মী দেশে ফিরে আসেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বিএমইটির কাছেও মাসে গড়ে এ ধরনের ১০ থেকে ১২টি অভিযোগ আসছে। নারীকর্মীদের ওপর বেশি নির্যাতনের অভিযোগ আসে দুবাই, লেবানন, ওমান, জর্ডান, বাহরাইন ও সৌদি আরব থেকে। ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের (আইএলও) তত্ত্বাবধানে প্রবাসীদের দেশে ফেরত আসার কারণ সম্পর্কে এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ফেরত আসা নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। ভাষাগত সমস্যা, নিয়োগকর্তার অসদাচরণ, পুলিশি নির্যাতন, কর্মস্থলে নিরাপত্তাহীনতা, বেতন বৈষম্য, পাসপোর্ট সমস্যা ছাড়াও অতিরিক্ত পরিশ্রমের শিকার হয়ে নারীকর্মীরা দেশে ফেরত আসেন।
বিদেশে কর্মরত নারীকর্মীদের সমস্যা দীর্ঘদিনের। তাদের সমস্যা সমাধানে ও স্বার্থ রক্ষায় সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে এবং আগের তুলনায় তৎপরতাও বাড়িয়েছে। তবে সমস্যা সমাধানে কোন পক্ষের গাফিলতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। ভবিষ্যতে নারীকর্মীদের সকল সমস্যা সমাধানে সরকার ও দূতাবাসগুলোর আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরী।