শাহজাহান বাবুল, হলিউড, ক্যালিফোর্নিয়া:
প্রকৃতির অফুরন্ত দানে যেসব উন্নয়নশীল দেশ সমৃদ্ধ তারা মেডিকেল ট্যুরিজমের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করছে। ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া তাদের মধ্যে অন্যতম। উন্নত বিশ্বের নাগরিকরা অর্ধেক ব্যায়ে এসব দেশের প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক স্থানগুলো ট্যুর গাইডের তত্ত্বাবধানে উপভোগ করছে তাদের কৃষ্টি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও ভিন্ন স্বাদের স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য উপভোগ করে দেশে ফিরে যাচ্ছে মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি নিয়ে। নিজে দেশের লোকদের বলছে তাদের সুন্দর অভিজ্ঞতার কথা। এতে আরো অসুস্থ লোক ঐসব দেশে যাওয়ার উৎসাহ পাচ্ছে।
বাংলাদেশে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নীতি নির্ধারকদের কাছে কতগুলো প্রস্তাব করছি যেটা তারা চিন্তা ভাবনা করে দেখতে পারেন ভবিষ্যতে মেডিকেল ট্যুরিজমের জন্য।

১। চীন, ভারত, তুরস্ক, জাপান, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সৌদিআরব, কাতার, কুয়েত ও আরব আমিরাতের সঙ্গে সরকার টু সরকার বা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপে আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক হাসপাতাল করে উন্নত দেশের বিদেশিদের জন্য চিকিৎসার বন্দোবস্ত বরে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে যা উল্লেখিত ঐসব দেশ করছে। তারা এদেশে আসলে বাঙালির আতিথেয়তায় মুগ্ধ হবেন যা এখন প্রবাস থেকে আমরা জানি বাঙালির আতিথেয়তার কথা বিদেশিদের কাছে।
২। বাংলাদেশের বড় বড় শিল্পপতিদের প্রণোদনা দিয়ে উৎসাহিত করা উচিত যাতে তাদের প্রতিটা শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা যা তাদের শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা করতে পারবে। প্রতিটা হাসপাতালের সঙ্গে মেডিকেল কলেজ ও স্পেশালাইজড ট্রেনিং সেন্টার করে তাদের স্ব-স্ব হাসপাতালে নিয়োগ দিতে পারে। প্রয়োজনবোধে বিদেশ থেকে স্পেশালাইজড ডাক্তার ও বিভিন্ন বিষয়ে স্পেশালাইজড লোন এনে ৪/৫ বছরের জন্য বাংলাদেশিদের ট্রেনিং দিয়ে বাংলাদেশকে স্বনির্ভর করতে পারে যা আমাদের প্রধানমন্ত্রীও চাচ্ছেন বাংলাদেশকে স্বনির্ভর করতে। এ বিষয়ে প্রবাসীরা বিরাট অবদান রাখতে পারে যদি সরকারের পক্ষ থেকে বাস্তব সহযোগিতা পাওয়া যায় এবং এক্ষেত্রে লাল ফিতার দৌরাত্ব বন্ধ করতে হবে। এই প্রকল্পটা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর অধীনে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে করতে হবে তাহলে দুর্নীতির সুযোগ থাকবে না। প্রধামন্ত্রী বড় বড় প্রকল্পে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিচ্ছেন যা সেনাবাহিনী নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে প্রকল্পগুলো সময়মতো শেষ করছেন।
প্রবাসীদের রেমিটেন্স ব্যবহার করতে পারে এই মেডিকেল ট্যুরিজমের জন্য যা তারা পাঠাবে বাংলাদেশ সরকারের ‘ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের’ মাধ্যমে বা আমাদের দূতাবাস বা কনস্যুলেটের মাধ্যমে। দূতাবাসের কর্মীদের সংযুক্ত করে তাদেরও বেনিফিটের বন্দোবস্ত করলে সুফল পাওয়া যাবে।

৪। বাংলাদেশের সব দূতাবাসে ‘পর্যটন সেল’ গঠন করে পর্যটন কর্পোরেশনের মাধ্যমে একজন এক্সপার্ট নিয়োগ দিতে পারেন শুধু পর্যটনের প্রসার ও প্রচারের জন্য। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করতে পারেন নিজ নিজ শহরের বিভিন্ন ট্যুরিস্ট স্পটে। হলিউডে আমি দীর্ঘদিন ধরে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এ ব্যাপারে দেশপ্রেমিক প্রবাসীরা সহযোগিতা করতে পারে। নিউইয়র্ক, শিকাগো, বোস্টন, মায়ামী, অরলান্ডো, ডালাস, হলিউড ও কানাডার টরেন্টো ও বড় বড় ট্যুরিস্ট স্পটে সাংস্কৃতিক ও ফুড ফেস্টিভালের মাধ্যমে আমাদের জনপ্রিয় নৃত্য ও খাদ্যের প্রদর্শন করতে পারে। পর্যটন, সংস্কৃতি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় সহযোগিতায় দূতাবাসের মাধ্যমে কাজ করা যায়।
৫। বাংলাদেশে ‘পেনোরমা ক্রিয়েটরের’ প্রামাণ্যচিত্র আমি দেখেছি যা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে যা বিদেশিদের আকৃষ্ট করবে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা দূতাবাসের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন এলাকার খাদ্য ও উপজাতীয় খাদ্য পরিবেশন করতে পারে। যা বাস্তবে ফলপ্রসু হবে বিদেশিদের কাছে। এর জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা নিতে হবে।

৬। নিউইয়র্কের ভারতীয় দূতাবাসের সহযোগিতায় ভারতীয় কিছু নামকরা আধুনিক হাসপাতালের অফিস আছে যারা মেডিকেল ট্যুরিজমের জন্য বুকিং দিচ্ছে যা এদেশের চিকিৎসা খরচের অর্ধেক। তাদের অফারে আছে ঐ দেশের নামকরা টুরিস্ট স্পট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও খাদ্যের লোভনীয় বর্ণনা। বাংলাদেশ ও ভারত এ ব্যাপারে যৌথভাবে কাজ করতে পারে। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের আদলে চীন, তুরস্ক, ও সৌদিআরব প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশে অত্যাধুনিক হাসপাতাল দ্রুততম সময়ে তৈরি করার জন্য যা মেডিকেল ট্যুরিজমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
লেখক: আমেরিকা প্রবাসী, ট্যুরিজম বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশের কুটির শিল্পের গবেষক, হলিউড, ক্যালিফোর্নিয়া।