কোভিডের কড়াকড়িতেও থেমে নেই সমুদ্রপথে মানব পাচার। মহামারী পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করেই ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অনেক বাংলাদেশি। অনেকে ধরাও পড়েছেন। জার্মানিভিত্তিক তথ্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিস্টার পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর সাগরপথে শুধু ইতালিতে প্রবেশের চেষ্টা চালাতে গিয়েই আটক হয়েছেন ৭ হাজার ৩৬ জন বাংলাদেশি। চলতি বছর ইতালিতে অভিবাসন প্রত্যাশায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার পথে সর্বশেষ ধরা পড়েন ২৮৭ জন। তাদের মধ্যে ২৭৩ জনই বাংলাদেশি। অসাধু মানব পাচারকারী দুষ্ট চক্রের হাত ধরে চলা মানব পাচার কোনভাবেই থামছেনা।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্য বলছে, সম্প্রতি পাচারের সময় বঙ্গোপসাগর থেকে ২০১ জন রোহিঙ্গা উদ্ধার হয়েছে। এছাড়া পাচারের শিকার ১৬ বাংলাদেশি গত ৩০ মার্চ গ্রিস থেকে ফিরেছেন। চলতি বছরের গত তিন মাসে ৪০০-এর বেশি ফিরেছেন শুধু লিবিয়া থেকে। এছাড়া গত বছর ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে আশ্রয় নিয়েছেন ৬৭ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী। এদের মধ্যে শুধু ইতালিতেই আশ্রয় পেয়েছেন প্রায় ১৭ হাজার। বিপজ্জনক এ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৪ হাজারের বেশি। ইউএনএইচসিআরের তথ্য বলছে, ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেড় বছরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে আটক হয়েছেন অন্তত সাড়ে পাঁচ হাজার বাংলাদেশি।
ব্র্যাকের গবেষণা তথ্য বলছে, ২৬ থেকে ৪০ বছর বয়সী লোকজন সবচেয়ে বেশি ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করছেন। তাদের মধ্যে ৩১ থেকে ৩৫ বছরের লোকই বেশি। গত কয়েক বছরে ইউরোপ ও লিবিয়া থেকে ফেরত আসা ২ হাজার ২৮৪ বাংলাদেশির সঙ্গে কথা বলেছে ব্র্যাক। সেখানে দেখা গেছে, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, ঢাকা, নোয়াখালী, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা জেলা থেকে বেশি লোক এভাবে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। একেকজন ইউরোপে যেতে ৩ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ করেছেন।
মানব পাচার থামছে না কেন? সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানব পাচার বন্ধ না হওয়ার নেপথ্য কারণ পাচারকারীদের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মানব পাচার সংক্রান্ত ৬ হাজারের বেশি মামলা ঝুলে আছে। যার বিচার চলছে বছরের পর বছর ধরে। এদিকে এক মামলার চার্জশিট থেকে অভিযুক্ত শীর্ষ একজন মানব পাচারকারীর নাম বাদ দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মানবাধিকার সংগঠন গুলো বলছে, মামলার শাস্তি না হওয়ার জন্যই মানব পাচার বন্ধ হচ্ছে না। পাচারকারীদের শাস্তি নিশ্চিত হলেই মানব পাচার অনেকাংশে কমে যাবে। এ ব্যাপারে সরকারকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান।
সংযমের মাস পবিত্র মাহে রমজান। এক মাস রোজা রাখার পর আসে পবিত্র ঈদুল ফিতর। এ উপলক্ষে সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ্য থাকবেন।