সাম্পান ইমতিয়াজ:
ডিজিটাল নেটিভ নামটি আমাদের অনেকের কাছে খানিকটা অপরিচিত হলেও জেন-জি নামটির সাথে আমরা বেশ ভালোই পরিচিত। জেন-জি অথবা জেনারেশন জি। ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করা স্মার্ট ও ডিজিটাল ভাবভঙ্গির তরুণদের বলা হয় জেন-জি। এদেরকে আবার ডিজিটাল নেটিভ বলে সম্বোধন করার এক অন্যতম কারণ এরা এমন এক যুগে বড় হয়েছে যখন ইন্টারনেট ও স্মার্ট ডিভাইস দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। প্রযুক্তির অগ্রগতির ভাবধারায় ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, স্ন্যাপচ্যাট তাদের জীবনের এক অনবদ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা এখন প্রতিবাদী, চির দূর্দম, আপোসহীন এক প্রজন্ম। তাদের প্রতিবাদের ভাষা যেন নজরুলের ‘শির নেহারি আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির’ উক্তিকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে। গত ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের কারণে বাংলাদেশ এই জেনারেশন-জি শব্দটা তাই এতো আলোচনামুখর হয়ে উঠেছে।
কোনো প্রজন্মের নাম এবং প্রজন্মের শুরু ও শেষের বছর নির্ধারনের বাধাধরা নিয়ম নেই। মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, প্রজন্মের সময়সীমা নির্ভর করে জনসংখ্যা, আচার-আচরণগত বৈশিষ্ট্য, ঐতিহাসিক ঘটনা, বহুল প্রচলিত সংস্কৃতি ও পরিসংখ্যানগত নানা বিষয়ের উপর। জেন-জি’র সময়সীমা এর বৈশিষ্ট্য গবেষণার মাধ্যমেই নির্ধারিত হয়েছে।

যেহেতু এই প্রজন্মের জন্ম সময়সীমা ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সাল সেহেতু এর সদস্যদের বয়স ১৩ থেকে ২৮ বছর। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, দেশে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী মানুষ সংখ্যায় পুরো জনগোষ্ঠীর ২৮ শতাংশ। অর্থাৎ চারজনে একজনই তরুণ। এদের বড় অংশ zoomers বা Gen Z এর সদস্য। অতএব, এই বড় একটা সংখ্যক প্রজন্মের উপর দেশের ভালো মন্দ নির্ভর করছে।
এই প্রযুক্তি নির্ভর প্রজন্মের জীবনধারা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং চাহিদা আগের প্রজন্ম থেকে অনেকটাই আলাদা। কারণ এরা উন্নত প্লাটফর্মগুলো শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য নয় বরং কাজ, শিক্ষা এবং সৃজনশীলতার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করে। আগামীর বাংলাদেশে এই প্রজন্ম জাতির মেরুদণ্ড বা চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারে কারণ তাদের শিক্ষার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত বাস্তবমূখী। তারা চায় এমন দক্ষতা অর্জন করতে যা সরাসরি কাজের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যাবে। প্রচলিত চাকরির বাইরে তারা ফ্রিল্যান্সিং, স্টার্টআপ, ডিজিটাল মার্কেটিং এর মত নিজেকে প্রমাণ করছে।
জেন-জি এর নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশ
১. প্রযুক্তি নির্ভর উন্নয়ন
- AI, Robotics এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে।
- ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হবে যেখানে স্মার্ট শহর, স্মার্ট গ্রাম ও ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা থাকবে।
২. পরিবেশ বান্ধব বাংলাদেশ
- পরিবেশ সংরক্ষণে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সবুজায়ন, টেকসই উন্নয়ন এর উপর বিশেষ জোর দেওয়া যেতে পারে।
৩. শিক্ষা ও কর্মসংস্থান
- বাস্তবমূখী, প্রয়োগভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা পুনর্গঠিত হবে।
- উদ্যোক্তার হার বৃদ্ধি পাবে।
সুশিক্ষায় শিক্ষিত প্রজন্মই পারে প্রকৃতপক্ষে নারীর ক্ষমতায়ন বলতে কি বোঝানো হয় তার জ্ঞানের প্রসার ঘটাতে।
সুশিক্ষিত জেন-জি ধর্মীয় দিক থেকে আরো অনেক সহনশীল হবে এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র শক্তিশালী করবে।
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন (SDG) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা পালন করতে পারবে এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতি দূর দৃষ্টি সম্পন্ন করে করে তুলবে।
শেষ কথা, তরুণরা যে মাত্রায় সফলভাবে তাদের নিজ নিজ কাজ ও নাগরিক সম্পৃক্ততার সাথে জড়িত তা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অগ্রগতি নির্ধারণে জেন-জি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তরুণদের যদি তাদের দ্বন্দ্ব ও অনুপ্রেরণা অব্যাহত রাখার জন্য যথাযথভাবে প্রাপ্য সমর্থন দেওয়া হয় তাহলে আগামীর বাংলাদেশ ইতিবাচকভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, অনার্স ২য় বর্ষ, নৃ–বিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।