২৮ বছর আগে পরিবারের ইচ্ছায় ওমান গিয়েছেন তিনি। সেখানে একটি ফার্নিচার শো’ রুমে কাজ করতেন। দেড় বছর করার পর নিজেই ব্যবসা করার উদ্যোগ নেন, কিন্তু মালিকের সাথে ঝামেলা হওয়ায় দেশে ফিরে বন্ধুর মাধ্যমে আবার ওমানে গিয়ে শুরু করলেন ফার্নিচার ব্যবসা। খুব ছোট পরিসরে শুরু করলেও নিরলস পরিশ্রম, একাগ্রতা, একনিষ্ঠতায় তিনি এখন ওমান প্রবাসীদের মধ্যে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সফল ব্যবসায়ী। বলছিলাম চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার কৃতি সন্তান সৈয়দ মো: জসিম উদ্দিন এর কথা। ওমানে থাকলেও প্রায়ই তিনি দেশে আসেন, সম্প্রতি এক বিকেলে ঘুরে গেলেন প্রবাস মেলা কার্যালয়ে। প্রবাসে ব্যবসায়ের গল্প সহ নানান সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের কথা জানাচ্ছেন ইসরাত জেবিন।
সৈয়দ মো: জসিম উদ্দিন ১৯৯০ সালে জীবিকার তাগিদে ওমানে যান। তিনি বলেন, সেখানে আমি কিছুদিন একটি কোম্পানিতে ফার্নিচার শো রুমে কাজ করি। কিছুদিন পর চিন্তা করলাম নিজ থেকেই কিছু করতে হবে। সিদ্ধান্ত নিলাম নিজেই ব্যবসা শুরু করবো। কিন্তু মালিকের সাথে বনিবনা না হওয়ায় দেশে চলে আসলাম। এর কয়েকমাস পরে আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে ভিসা ব্যবস্থা করে আবার ওমানে চলে যাই। সেখানে আমি অল্প কিছু পুঁজির মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করি।
সৈয়দ মো: জসিম উদ্দিন বলেন, আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রথমে মাত্র দুই জন দিয়ে শুরু করলাম। এখন সেখানে ৫০ জনের মত কর্মী রয়েছে, যাদের ৪৫ জনই বাংলাদেশি। ওমানে আপনি কি ধরনের ব্যবসা করছেন। এর জবাবে তিনি জানান, আমি প্রথমে Fareed Al Hajre Trade ltd. নামে ব্যবসা শুরু করি যা পরে Mohammad Jashim Furnishing ltd. নামে আত্মপ্রকাশ করে। এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে আমি কর্মরত আছি। তিনি জানান, এটা মূলত কার্পেটের ব্যবসা। তিনি গর্ব করে বলেন, আন্তর্জাতিক দুটি কোম্পানি 1.Standard curpate industries UAE, 2.Standard prestige curpate industries UAE, থেকে বিশ্বের ৭৫ শতাংশ কার্পেট সাপ্লাই দিয়ে থাকে। ওমানে আমি তাদের একমাত্র লিস্টেট এজেন্ট। ওমানের কার্পেটের চাহিদার অধিকাংশই আমার প্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহ করা হয়। তার প্রতিষ্ঠানে Wall to wall carpate, label look carpate, curpile carpate, graphic carpate, mosque carpate, office carpate, tiles carpate, আইটেমের কার্পেট রয়েছে বলে তিনি জানান।
ব্যবসায়ের পাশাপাশি সৈয়দ মো: জসিম উদ্দিন প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে উৎপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাব ওমান এর দুই-দুইবার নির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে এই সামাজিক সংগঠনের এক্সিকিউটিভ মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়াও চট্টগ্রাম সমিতি ওমানের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশে বিদেশে নানান মানব কল্যাণমূলক কাজে সৈয়দ মো: জসিম উদ্দিনকে দেখা যায়। এই সংগঠনটি কি উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এর জবাবে বিশিষ্ট এই ব্যবসায়ী জানান, মানব কল্যাণ-ই চট্টগ্রাম সমিতি ওমান এর একমাত্র লক্ষ্য। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিভিন্ন পর্যায়ে প্রবাসী ও দেশের আর্তমানবতার কল্যাণে কাজ করে আসছে এই সংগঠন। দূতাবাসের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগঠনের সভাপতি ইয়াসিন চৌধুরী (সিআইপি)’র নেতৃত্বে আমরা ওমানে নানাবিধ সামাজিক কর্মকা- করে যাচ্ছি। তিনি জানান, কোন প্রবাসী মারা গেলে ডেড বডি দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে তারা অর্থনৈতিক সহযোগিতা করে থাকেন, বিভিন্ন অপরাধে জেলে থাকা প্রবাসীদের দেশে প্রেরণের ক্ষেত্রে টিকেটের ব্যবস্থা, নানা রোগে হাসপাতালে ভর্তি থাকা প্রবাসীদের চিকিৎসা খরচের ব্যবস্থা করে থাকেন। এছাড়াও সম্প্রতি বাংলাদেশ স্কুল মাস্কাট এর শিক্ষার্থীদের জন্য ফুটবল খেলার মাঠ নির্মাণ করার লক্ষ্যে সবুজ বনায়ন করে দিচ্ছে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে
খেলাধুলা, লেখাপড়া, স্কুলের প্রতি ভালোবাসা ও উৎসাহ অনেকাংশে বেড়ে যাবে বলে অনেকে মনে করেন। এমনকি তিনি জানান, চট্টগ্রাম সমিতি গত ২ বছর ধরে সর্বক্ষেত্রে মেধাবী শিক্ষার্থীকে ১টি করে পুরোবছরের স্কুল ফিস ও বই বাবদ এক লক্ষ টাকার বৃত্তি প্রদান করে আসছে। সমিতির সকল সদস্য, কার্যকরী পরিষদ ও উপদেষ্টা কমিটির যাঁরা নিয়মিত সদস্য সবাই এই মহৎ কাজের অংশীদার বলেও তিনি জানান। চট্টগ্রাম সমিতি ওমানের চীফ এ্যাডভাইজার হিসেবে বীর চট্টলার রাউজানের বর্তমান সংসদ সদস্য ফজলে করীম চৌধুরীকেও তিনি এই মহৎ কাজের অংশীদার হওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান।
সৈয়দ মো: জসিম উদ্দিন গত ২৮ বছর যাবত ওমানে আছেন, সেখানে বর্তমানে কত বাংলাদেশি আছেন বা তারা কেমন আছেন জানতে চাইলে কৃতি এই প্রবাসী জানান, ওমানে বৈধ অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ৮ লাখের মত বাংলাদেশি আছেন। অল্পসংখ্যক ছাড়া বেশিরভাগ প্রবাসী মোটামুটি ভালো আছেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের তুলনায় ওমানীরা খুব আন্তরিক। তারা বাংলাদেশিদের খুব সম্মান করেন। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে বলা যায় সেখানকার বাংলাদেশিরা অনেক ভালো আছেন।
বিশে^র অনেক দূতাবাসে বাংলাদেশিদের প্রয়োজনীয় দূতাবাস সেবা দেওয়া হয়না বলে যে অভিযোগ রয়েছে, মাস্কাট দূতাবাসেও সেরকম অভিযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাস্কাটের বর্তমান রাষ্ট্রদূত গোলাম সারোয়ার একজন সজ্জ্বন মানুষ। প্রবাসের সকল বাংলাদেশিদের সাথে তিনি অমায়িকভাবে মিশেন। তিনি সকলের সমস্যা সমাধানে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে বিশাল এই বাংলাদেশিদের (প্রায় ৮ লাখ) দূতাবাস সেবা দিতে জনবলের যথেষ্ঠ ঘাটতি রয়েছে। সেজন্য আমি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওমান প্রবাসীদের সেবা বাড়াতে দূতাবাসে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের জোর দাবি জানাচ্ছি। আশা করছি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবে।
ভ্রমণপ্রিয় এই ব্যক্তি এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকাসহ প্রায় ৫০টি দেশে ভ্রমণ করেছেন। বিদেশিদের জীবন-যাপন দেখার ইচ্ছা থেকেই তিনি বিভিন্ন দেশে ঘুরতে যান বলে জানান।
সৈয়দ মো: জসিম উদ্দিন চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার কদলপুর গ্রামের কৃতি সন্তান। পারিবারিকভাবে তারা তিন ভাই চার বোন। তার বাবার নাম আলহাজ¦ সৈয়দ মো: আব্দুল হাকিম, মাতা সৈয়দা মরিয়ম বেগম। ভাইদের মধ্যে মেজো ভাই সৈয়দ মো: সেলিম উদ্দিন ওমানেই ব্যবসা করছেন। ছোট ভাই সৈয়দ মো: গিয়াস উদ্দিন ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে পড়ালেখা করছেন। তার স্ত্রী মোসা: শামীম আক্তার, তাদের সংসারে রয়েছে এক মেয়ে ও দুই ছেলে। মেয়ে সৈয়দা হিয়াম ক্লাস নাইনে পড়ছেন, বড় ছেলে সৈয়দ মো: সায়েম ক্লাস সিক্সে এবং ছোট ছেলে সৈয়দ শান কেজিতে পড়ছেন।