প্রবাস মেলা ডেস্ক: আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে পাক্ষিক প্রবাস মেলা অফিস পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নির্বাহী কমিটির শিক্ষা বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য হেলেন জেরিন খান। ১১ মে ২০২৩, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রবাস মেলার কলাকুশলীদের সাথে তিনি চা-চক্রে অংশ নিয়ে তার রাজনৈতিক জীবন ও দেশের বর্তমান রাজনীতিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। আলোচনার এক ফাঁকে সাবেক এই সংসদ সদস্যের হাতে প্রবাস মেলার সৌজন্য কপি তুলে দেন পত্রিকার সম্পাদক শরীফ মুহম্মদ রাশেদ এবং নির্বাহী সম্পাদক শহীদ রাজু। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির মানব উন্নয়ন সম্পাদক খন্দকার ফারহানা ইয়াসমীন আতিকা, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক শিল্পী রেজা ও জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের হাজারীবাগ থানার আহ্বায়ক মাহমুদা সুলতানা।
উল্লেখ্য, হেলেন জেরিন খানের জন্ম মাদারীপুর জেলার সদর থানার খাগদী গ্রামে। সেখানেই তার শৈশব কৈশোর কেটেছে। আলাপচারিতায় জানা যায়, ছোটবেলায় তিনি ছিলেন অত্যন্ত শান্তশিষ্ট। খুব কম কথা বলতেন। কিন্তু বড় হয়ে এই মেয়েটি যে একজন বাগ্মী রাজনৈতিক নেত্রী হয়ে উঠবেন তা কে জানতো।
শিক্ষাজীবন: হেলেন জেরিন খান ১৯৮৪ সালে মাদারিপুরের চরমুগরীয়া গার্লস হাই স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৮৬ সালে চর মুগরিয়া মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পাশ করে ১৯৮৬-১৯৮৭ সেশনে ঐতিহ্যবাহী ইডেন কলেজে ভর্তি হন। তার বিষয় ছিল ইসলামিক হিস্ট্রি এ্যান্ড কালচার। তিনি ১৯৯৩ সালে অনার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। পরে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি এবং এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
রাজনৈতিক জীবন: হেলেন জেরিন খান রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তার বাবা আবদুল লতিফ খান সরকারী চাকুরী ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা ও রাজনীতি শুরু করেছিলেন। তিনি মাদারীপুর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। তার মা মাকসুদা খান একজন সমাজসেবক। তার মেঝো কাকা আব্দুর রব খান ছিলেন মাদারীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান এবং সেজো কাকা আব্দুল হক খান মাদারীপুর জেলার সদর থানা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। মূলত তাদের অনুপ্রেরণা এবং তার একমাত্র ভাই ডা. ওয়ালী খানের আর্থিক ও মানসিক সহযোগিতাই তার মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা তৈরি করে। তার সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, আমার স্কুল জীবনে বিভিন্ন জাতীয় দিবসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমি নানা ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতাম। বিশেষ করে বক্তৃতা প্রতিযোগিতা ছিলো আমার মূল আকর্ষণ। আমার বাবা আমার বক্তৃতা তৈরি করে দিতেন এবং কিভাবে উপস্থাপন করবো তা রিহার্সেল করাতেন। আমার মনে আছে, একবার স্কুলে ঈদে মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠানে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে বক্তৃতা দিয়ে আমি প্রথম পুরস্কার পেয়েছি। পরবর্তীতে স্কুল কলেজের যেকোন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আমি প্রথম অথবা দ্বিতীয় পুরস্কার পেতাম। স্কুল কলেজে বক্তৃতা দেয়ার অভ্যাস আমার রাজনৈতিক জীবনে অনেক কাজে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ১৯৮৬ সালে আমি ইডেন কলেজে অনার্সে ভর্তি হই। তখন এরশাদ বিরোধী আন্দোলন চলছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের একজন কর্মী হিসেবে সেসময় নিয়মিত আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়েছি। এছাড়া ইডেন কলেজে ছাত্রীদের নানা ধরনের সমস্যায় আমি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছি। তাদের যেকোন সমস্যায় আমি সবার আগে ছুটে যেতাম। এভাবে আমি দল মত নির্বিশেষে সব ছাত্রীদের কাছে পরিচিতি পাই। সে সুবাদে আমি ১৯৯১ সালে ইডেন কলেজ ছাত্রী সংসদে সর্বাধিক ভোটে ভিপি নির্বাচিত হই। তখন আমি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ইডেন কলেজ শাখার কনভেনর।
এরশাদ বিরোধী আন্দোলন সহ যেকোন আন্দোলন সংগ্রামে হেলেন জেরিন খান জাতীয়তাবাদী দলের একজন রাজপথ কাঁপানো বাগ্মী নারী নেত্রীতে পরিণত হন। এখনো তার গঠনমূলক অসাধারণ বক্তব্য সকলের মন কাড়ে। নিজ যোগ্যতায় তিনি বিএনপির বিভিন্ন পদে নিয়োজিত থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছেন এবং এখনো করছেন। তিনি ২০০৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মাদারীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সিনিয়র জয়েন্ট সেক্রেটারী এবং বিএনপির নির্বাহী কমিটির শিক্ষাবিষয়ক সহ-সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। ২০০৪ সালে তিনি জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে মাদারপুর সদর-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি সম্পর্কে: দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি সম্পর্কে হেলেন জেরিন খান বলেন, আমরা যখন রাজনীতি করেছি তখন সকল দলের মধ্যে একটি সহাবস্থান ছিলো। ভিন্ন ভিন্ন দল করলেও সবাই একসাথে বসে কথা বলতে পারতো। কিন্তু দুঃখের বিষয় বর্তমানে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি চলছে তা কোনভাবেই সুস্থ্য রাজনীতির পরিচায়ক নয়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এখন রাজনীতিতে অর্থ, পেশীশক্তি এবং তোষামোদি সংস্কৃতি বিরাজমান। সবাই চাওয়া-পাওয়ার হিসাব-নিকাশ করে রাজনীতি করছে। দেশের রাজনীতির এই বেহাল দশার জন্য বর্তমান সরকারই দায়ী। দেশের সংসদে প্রকৃতপক্ষে কোন বিরোধীদল নেই। সরকার একনায়কতান্ত্রিক মনোভাব নিয়ে দেশ পরিচালনা করছে। আমি বলতে চাই, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভূয়া মামলায় ৭৬-৭৭ বয়সে জেল খেটেছেন। এখনও বন্দি আছেন, সুচিকিসা পাচ্ছেন না। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক জনাব তারেক রহমানকে অন্যায়ভাবে ১/১১ এর মিথ্যা বানোয়াট মামলায় গ্রেফতার করে চরম নির্যাতন করেছে। তার মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিয়ে মূলত আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা আগামীর রাষ্ট্র নায়ক তারেক রহমানকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। আল্লাহ রহমত আর এদেশের মানুষের ভালবাসায় সে যাত্রায় তিনি বেঁচে গিয়েছেন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছিলেন কিন্তু এই অবৈধ সরকার একটার পর একটা মিথ্যা ও ভুয়া মামলা দিয়ে সাজানো কোর্টে সাজা দিচ্ছে যাতে তিনি দেশে ফিরে আসতে না পারেন। কিন্তু দেশনায়ক তারেক রহমান বিদেশে থেকেই প্রতিদিন ১৮-১৯ ঘন্টা এদেশের জন্য, জনগণের জন্য, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য নিজদলকে সুসংগঠিত করবার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তাই আমি মনে করি, সুস্থ্যধারার আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে দল-মত নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিকের জন্য একটি গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই লক্ষ্যেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠনগুলো নিরলস সংগ্রাম করে যাচ্ছে।
পারিবারিক জীবন: হেলেন জেরিন খানের স্বামী হোসাইন মো: কাওসার একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। তাদের এক ছেলে এক মেয়ে। মেয়ে নওশীন সাফা কিবরিয়া যুক্তরাষ্ট্রে গ্র্যাজুয়েশন করছেন। ছেলে তাহা সাফি কিবরিয়া এ বছর এ-লেভেল পরীক্ষা দিচ্ছেন। তার ভাই ডা. ওয়ালি খান একজন ডেন্টিস্ট যিনি নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করতেন। তিনি ১৯৯০ সাল থেকে আমেরিকায় স্হায়ীভাবে বসবাস করেন এবং বোন লুবনা জেসমিন খান পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন।