প
হাকিকুল ইসলাম খোকন, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি:“সংঘাত পরবর্তী পুনরুদ্ধারের চেয়ে সংঘাত প্রতিরোধে বিনিয়োগ করাই উত্তম”- ২৭ এপ্রিল ২০২২ জাতিসংঘ সদরদপ্তরে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত শান্তিবিনির্মাণে অর্থায়ন শীর্ষক সাধারণ পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের সভায় প্রদত্ত বক্তব্যে একথা বলেন অ্যাম্বাসেডর অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন। শান্তিবিনির্মাণে পর্যাপ্ত, অনুমানযোগ্য ও টেকসই অর্থায়ন অন্বেষণ ও অর্থসংগ্রহ প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে সভাটিতে যোগ দেন সদস্য রাষ্ট্রসমূহ, সাধারণ পরিষদ, নিরাপত্তা পরিষদ, ইকোসক, জাতিসংঘ সচিবালয়, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ (আইএফআই) এবং সুশীল সমাজের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিবর্গ।
শান্তিবিনির্মাণ কমিশনের চেয়ার হিসেবে সভাটিতে সভাপতিত্ব করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। প্রদত্ত বক্তব্যে তিনি সাধারণ পরিষদের বিবেচনার জন্য শান্তিবিনির্মাণে অর্থায়ন সংক্রান্ত কিছু বাস্তসম্মত সুপারিশ প্রদান করেন।
শান্তিবিনির্মাণে অর্থায়নের অপর্যাপ্ততা একটি পুরানো সমস্যা। বর্তমানে কোভিড-১৯ জনিত কারনে দারিদ্র্য ও বৈষম্য ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পেয়েছে; ফলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে। রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন বলেন, “স্বপ্রণোদিত ও মূল্যায়নভিত্তিক অর্থায়নসহ উদ্ভাবনী উৎস থেকে অর্থ প্রাপ্তির মাধ্যমে যাতে শান্তিবিনির্মাণে অর্থায়ন বিষয়টির বাস্তভিত্তিক অগ্রগতি সাধিত হয়, উচ্চ পর্যায়ের এই বৈঠকটি সেবিষয়ে সাধারণ পরিষদকে নতুন করে সবধরণের বিকল্প অনুসন্ধানের সুযোগ এনে দিবে”।
সফল জাতি গঠনে বাংলাদেশের নিজস্ব অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন বলেন, “মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম হয় বাংলাদেশের। যুদ্ধবিধ্বস্থ দেশে নতুন করে একটি জাতি গঠনের জন্য আমাদের একমাত্র মূলধন ছিল মানব-পুঁজি এবং প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর মনোবল। অনেক কঠিন প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে আমরা আজকের এই উন্নয়ন-সোপানে উপনীত হয়েছি।”
অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোতে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “আমাদের শান্তিরক্ষীগণ টেকসই শান্তি ও উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণে সহায়তা করছে, দুর্বল বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করছে, এবং নারী ও যুব সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করে সে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে”। শান্তিরক্ষীগণ যে সকল কাজ করছে তা এগিয়ে নিতে কর্মসূচিভিত্তিক অর্থায়ন আরও বাড়ানোর উপর জোর দেন রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন। তিনি বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক, আইএফআই, এবং আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সংস্থাগুলির পাশাপাশি স্থানীয় প্রতিনিধিগণ ও জাতিসংঘ সংস্থাসমূহের সাথে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব সৃষ্টি করার উপর গুরুত্বরোপ করেন।
উচ্চ পর্যায়ের এই সভা থেকে একটি কর্মমূখী ফলাফল তুলে আনতে রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন সাধারণ পরিষদকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, “শান্তিবিনির্মাণে পর্যাপ্ত, অনুমানযোগ্য ও টেকসই অর্থায়ন নিশ্চিতে বাংলাদেশ গঠনমূলক ভূমিকা ও কার্যকর উপায় খুঁজে বের করতে সবর্দা প্রস্তুত রয়েছে”। বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য প্রদান ছাড়াও তিনি ১২০ দেশের সংগঠন-জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম) এর পক্ষেও বক্তব্য রাখেন।
এর আগে তিনি স্লোভানিয়ার উন্নয়ন সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী ড. স্টানিস্লাভ রাশানের সাথে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন। জনাব রাশান স্লোভেনিয়ার পক্ষে উচ্চ পর্যায়ের এই সভায় প্রতিনিধিত্ব করছেন।
***