প্রবাস মেলা ডেস্ক: কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে স্থানীয় দুটি মাদরসার এতিম ছাত্রদের নিয়ে কোরআখানি, মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। ১৯ জুলাই ২০২২, মঙ্গলবার সকাল থেকে নুহাশপল্লীতে এসব কর্মসূচি শুরু হয়। বেলা ১১টায় হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও তার দুই ছেলে নিশাত হুমায়ূন ও নিনিত হুমায়ূনসহ হুমায়ূন ভক্ত ‘হিমু পরিবহন’ সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে নুহাশপল্লীর লিচুতলায় কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এ সময় মেহের আফরোজ শাওন সাংবাদিকেদর জানান, ‘ক্যানসার হাসপাতাল নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের যে স্বপ্ন ছিল, সেটা পূরণ করার জন্য যে শক্তি যে সামর্থ্য দরকার হয়, সেটা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাছাড়া যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন, তাও আমার নেই। সমষ্টিগতভাবে আমরা সবাই যদি চেষ্টা করি, হয়তোবা হবে। সে ধৈর্যটা আমার আছে, সে ধৈর্য ধরে আমি ১০ বছর অতিক্রম করেছি। সে স্বপ্নটা আমি দেখেছি, দেখছি। এটা কম সময় না। যাদেরকে সঙ্গে নিয়ে সে স্বপ্নটা পূরণ করা দরকার, আমি চাইলে একটা ছোটখাটো হাসপাতাল করতে পারি। সেটা ৮-১০টা হাসপাতাল বাংলাদেশে যে রকম আছে, সেরকম হবে না, সেই জোর আমার নেই। আমার কাছে মনে হয়েছে, অনেক বড় স্বপ্নের আগেও অনেকগুলো ছোট ছোট স্বপ্ন থাকে।’
তিনি আরও বলেন, সেই স্বপ্নগুলো যে একটু একটু করে পূরণ হচ্ছে সেটার ভালো একটা খবর দিই। হুমায়ূন আহমেদের নিজ গ্রামে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ, যেটার কথা আমি প্রতিবারই বলেছি সেটি নিয়েও তার (হুমায়ূন আহমেদ) একটি স্বপ্ন ছিল। এ স্কুলটি ২০২০ সালে নিম্ন-মাধ্যমিক পর্যন্ত এমপিওভুক্ত ছিল। কিন্তু সুখবর হলো, ওই স্কুলটি হুমায়ূন আহমেদের দশম মৃত্যুবার্ষিকীর মাসেই দশম শ্রেণি পর্যন্ত এমপিওভুক্ত হয়েছে। সে স্কুলের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপশি বিভিন্ন বিষয়ে জেলা পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় প্রথম বা দ্বিতীয় স্থানের মধ্যে মেধার স্বাক্ষর রাখছে। এটা আমাদের কাছে অনেক বড় পাওয়া। এ রকম ছোট ছোট স্টেপ দিয়ে আমরা সামনের দিকে আগাব। কিন্তু আমি এখানও শক্তি অর্জন করতে পারিনি, যে আমি একটা ডাক দিব বা আমি কাউকে বলব। আমি বিভিন্ন জনকে বলবার চেষ্টা করছি বা সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশের সরকার তথা নীতিনির্ধারকদের প্রতি হুমায়ূন আহমেদ যে ধরনের ক্যানসার হাসপাতাল স্থাপনের স্বপ্ন দেখছিলেন তা নির্মানের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। আমি এটুকু নিশ্চত করে বলতে পারি, হুমায়ূন আহমেদের পরিবার এবং তার ভক্ত-পাঠক তাদের সবাইকে যখন যেভাবে ডাক দেবেন, তারা প্রত্যেকে সেভাবে ছুটে আসবে। হুমায়ূন আহমেদের সম্পদ পরিবারের সবার সম্পদ। তার পরিবারের কেউ পিছ-পা হবে না হুমায়ূন আহমেদের সে স্বপ্ন পূরনের জন্য। এ জন্য সরকার যদি উদ্যোগ নেয় পরিবারের পক্ষ থেকে যেভাবে যা করা দরকার হয় তা আমরা করব। ক্যানসার হাসপাতাল নির্মাণের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আমি ক্লান্ত হয়ে যাই। কিন্তু আসলে আমার একার পক্ষে এটা সম্ভব না।
হুমায়ূন আহমেদ স্মৃতি জাদুঘর স্থাপন নিয়ে শাওন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা নির্মাণ আমাদের পক্ষে সম্ভব। এটা হবে। এটা নূহাশপল্লীতেই হবে। হুমায়ূন আহমেদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র সেগুলো খুব সুন্দরভাবে সংগৃহীত আছে। তার হাতে আঁকা ছবিগুলো অনেক দিন ধরে নিউইয়র্কের এক ব্যক্তির কাছে আটকে ছিল। অতি সম্প্রতি সেই ছবিগুলো আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। আমরা সব ছবিগুলো হাতে পেয়েছি। এর মধ্যে হুমায়ূন আহমেদের সন্তানদের কাছে, আমার কাছে যা কিছু ছবি আছে এগুলো হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতি জাদুঘরে থাকবে। হুমায়ূন আহমেদের হাতের লেখা স্ক্রিপটগুলো যেগুলো বিভিন্ন প্রকাশকদের কাছে ছিল সেগুলো তারা জাদুঘরে দান করবে বলে আমাদের বলেছেন। আমরা আশা, শিগগিরই হুমায়ূন আহমেদ জাদুঘর নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারব।
প্রসঙ্গত, হুমায়ূন আহমেদের শরীরে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মরণব্যাধি ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান। সেখানে ২০১২ সালের ১৬ জুলাই তিনি চলে যান লাইফ সাপোর্টে। ১৯ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ২৩ জুলাই দেশে ফিরিয়ে আনা হয় হুমায়ূন আহমেদের লাশ। ২৪ জুন তাকে দাফন করা হয় তার গড়ে তোলা গাজীপুরের নুহাশপল্লীর লিচুতলায়।
সূত্র: আরটিভি