হাকিকুল ইসলাম খোকন, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি: যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াস্থ আইগ্লোবাল ইউনিভার্সিটিতে ২২ এপ্রিল ২০২২, শুক্রবার হয়ে গেলো শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারীদের অংশগ্রহণে ইফতার আয়োজন। স্টুডেন্টস গভর্নর অ্যাসোসিয়েশন-এসজিএ’র কালচালার ক্লাব ছিলো এর মূল আয়োজনে। আর অংশ নেন বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় শিক্ষার্থীরা।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান সাংবাদিক রোকেয়া হায়দার শিক্ষার্থীদের জন্য মজাদার সব ইফতারি নিয়ে এসে যোগ দেন। ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর আবুবকর হানিপ, প্রেসিডেন্ট ড. হাসান কারাবার্ক, সিএফও ফারহানা হানিপ, এসজিএ প্রেসিডেন্ট সেলিন ইগিত সহ আরও অনেকে।
আইগ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয় একটি পরিবার, আন্তর্জাতিক সকল শিক্ষার্থীর জন্য এটাই তাদের বাড়ি, এসময় উঠে আসে তাদের বক্তৃতায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকাংশ ক্লাস অনলাইনে হওয়ায় শিক্ষার্থীদের সামনাসামনি দেখা হওয়ার সুযোগ অপেক্ষাকৃত কম থাকে। এই দিন ছিলো তাদের অনেকেরই ইনপারসন ক্লাস। আর সে কারণে শিক্ষার্থীরা তাদের ক্লাস শেষে যোগ দেয় এই আয়োজনে। এতে ইফতার অনুষ্ঠানটিই হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের মিলন মেলা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. জাফর পিরিম-এর উপস্থাপনায় সংক্ষিপ্ত আলোচনায় সম্মানিত অতিথি রোকেয়া হায়দার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র একটি সম্ভাবনার দেশ। এদেশে প্রত্যেকেই তার প্রত্যাশামত অর্জন করে নিতে পারে। তবে সে জন্য শিক্ষালাভটি সবচেয়ে জরুরি।
“কেউ কারো বিদ্যা চুরি করে নিতে পারে না, তাই শিক্ষার্থীদের বলবো, আগে শিক্ষা নাও এরপর তারই মাধ্যমে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাও। এই শিক্ষাই হয়ে উঠবে তোমাদের প্রধান সম্পদ,” বলেন রোকেয়া হায়দার।
একবার যদি কেউ তার লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগুতে থাকে, এই দেশে তার অর্জন করার সকল সুযোগই বর্তমান, যোগ করেন তিনি।
‘একজন বাংলাদেশি আমেরিকান একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছেন, এমন একটি বিষয় আমাকে গর্বিত করে’, চ্যান্সেলর আবুবকর হানিপের কথা উল্লেখ করে বলেন এই প্রথিতযশা সাংবাদিক।
পরে চ্যান্সেলর আবুবকর হানিপের বক্তৃতায়ও রোকেয়া হায়দারের কথাগুলো প্রতিধ্বনিত হয়। তিনি বলেন, সকল সুযোগ ও সম্ভাবনা এই দেশে রয়েছে, তবে সবার আগে সকলের প্রাথমিক লক্ষই হওয়া উচিত যোগ্যতা ও মেধার প্রকাশ ঘটিয়ে ডিগ্রি সম্পন্ন করা।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা এই দেশে অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে আসেন। অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, সে স্বপ্নপূরণের পথে কেউ কেউ দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিটিকে সম্পন্ন করে যারা এগিয়েছেন তারাই তাদের স্বপ্নপূরণ করতে পেরেছেন।
“সুতরাং শিক্ষার্থীদের বলবো, আগে যথাযথ শিক্ষালাভ, পরে এগিয়ে চলার পথ খোঁজা। আর সেই লক্ষ্যে আইগ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ই হবে সকলের সহায়ক শক্তি,” বলেন আবুবকর হানিপ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি তার প্রতিষ্ঠিত প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান পিপলএনটেকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য থাকবে বিনামূল্যে সফট লার্নিংয়ের সুযোগ। যা তাদের কাঙ্খিত লক্ষে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে, জানান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান কারাবার্ক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আইগ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় শক্তিটিই হচ্ছে এর বহু সংস্কৃতি থেকে আসা শিক্ষার্থীরা। আর এই শক্তিটিকে ধারণ করে স্টুডেন্ট গভর্নর অ্যাসোসিয়েশনের কালচারাল টিম যে আয়োজনটি করেছে, তা বহু সংস্কৃতির এই ধারাটিকেই শক্তিশালী করবে।
এখানে দৃষ্টিভঙ্গিটি গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রসার করে সকল সংস্কৃতির প্রতি উদার মনোভাব পোষণের আহ্বান জানান তিনি।
“আইগ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয় একটি পরিবার, শিক্ষার্থীদের জন্য এটাই তাদের বাড়ি,” বলেন ড. কারাবার্ক।
রমজান শুধু খাবার ভাগাভাগি করে নেওয়াই নয়, আন্তরিকতাকেও পরস্পরের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার শিক্ষা দেয়, বলেন তিনি।
নিজের জন্য, পরিবারের জন্য এবং কমিউনিটির জ্ন্য কাজ করতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসিডেন্ট।
প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ফারহানা হানিপ বলেন, আমরা যদি সকলে একটি লক্ষ্য সামনে নিয়ে একসঙ্গে পথ চলতে পারি, সাফল্য আসবেই। যুক্তরাষ্ট্রে একটি সুযোগের দেশ, তবে এখানে মূল লক্ষ্য ভিন্ন পথে প্রবাহিত হওয়ার সুযোগও কম নেই। সুতারাং কারে কথায় মিসগাইডেড না হয়ে, শিক্ষার্থীরা যেনো তাদের শিক্ষা অর্জনের প্রতি মনোনিবেশ করে এই আহ্বান জানান ফারহানা হানিপ।
ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. জাফর পিরিম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, শিক্ষার জন্য যারা নতুন এই দেশে এসেছে, তারা এখনই কাজের জন্য এলিজিবল নয়, সুতরাং কাজের পেছনে না ছুটে তাদের সকলকে শিক্ষায় মনোনিবেশ করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সালমান কোরেশি আইগ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাপদ্ধতি, শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্ককে অনন্য হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় একসময় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য মক্কা হয়ে উঠবে। সকলে একসাথে সমন্বিতভাবে এই লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে।
এসজিএ প্রেসিডেন্ট সেলিন ইগিত তার বক্তৃতায় জানান, একাধিক ক্লাব গঠনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রম বহির্ভূত কাজগুলো এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সকলের সহযোগিতায় এসজিএ আরও সুদৃঢ়ভাবে কাজ করতে পারবে।