হাকিকুল ইসলাম খোকন, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি: মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত যাতে দ্বিপাক্ষিক প্রত্যাবর্তন ব্যবস্থার দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে সে আহ্বান জানালেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা, একই সাথে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সহায়তার জন্য রাখাইন রাজ্যে কর্মসূচি বাড়াতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। আজ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মিয়ানমার বিষয়ক মহাসচিবের বিশেষ দূত ড. নোলিন হাইজারের ব্রিফিংয়ের পর প্রদত্ত বক্তব্যে একথা বলেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।
বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, “জীবন বাঁচাতে নিজভূমি থেকে রোহিঙ্গাদের পলায়নের পর পাঁচ বছর কেটে গেছে, যা সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বৃহৎ জোরপূর্বক নির্বাসনের ঘটনা। কিন্তু, তাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের প্রতিশ্রুতি অপূর্ণই রয়ে গেছে। এ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত যায়নি। বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয়ে থাকা ১.২ মিলিয়ন রোহিঙ্গা গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। যে সকল রোহিঙ্গা মিয়ানমার ছেড়ে যেতে পারেনি তারা হয় আইডিপি ক্যাম্পে আশ্রয় পেয়েছে অথবা জোরপূর্বক বাস্ত্তচ্যুত ও নিরাপত্তাহীনতার অব্যাহত হুমকির মধ্যে রয়েছে”।
সঙ্কটের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের মাধ্যমে এর পুনরাবৃত্তি রোধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত ফাতিমা যাতে দীর্ঘদিনের এই সমস্যর সমাধান হয়। রোহিঙ্গাদের খাদ্য, আশ্রয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা প্রদানে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে তিনি প্রত্যাবাসন উপযোগী সঠিক পরিস্থিতি সৃষ্টিতে আরও এগিয়ে আসতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, “শুধু আমাদের একক প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। জোরপূর্বক বাস্ত্তচ্যুত এই জনগোষ্ঠীকে মর্যাদাপূর্ণভাবে নিজ ভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে প্রয়োজন যথোপযুক্ত পদক্ষেপ ও কর্মসূচি। আর এটাই সবচেয়ে কাঙ্খিত টেকসই সমাধান যা রোহিঙ্গাদের দীর্ঘদিনের লালিত আকাঙ্খা”।
বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মিয়ানমারের সমস্ত লঙ্ঘন ও অপরাধের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার গুরুত্বের উপর জোর দেন এবং ওআইসি’র পক্ষে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গাম্বিয়ার করা চলমান মামলার প্রেক্ষিতে উক্ত আদালত জারিকৃত অস্থায়ী ব্যবস্থার বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করতে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, “বাস্ত্তচ্যুত রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আমার সরকার তার ক্ষমতার সবকিছুই করছে। আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ওআইসি) এবং মিয়ানমারের স্বাধীন তদন্ত প্রক্রিয়ার (আইআইএমএম) সকল প্রচেষ্টায় পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছি। রাষ্ট্রদূত ফাতিমা রোহিঙ্গা মুসলমানদের ন্যয়বিচার নিশ্চিত এবং এই ঘটনার ভবিষ্যত পুনরাবৃত্তি রোধ করতে সকল দেশকে, বিশেষ করে আঞ্চলিক দেশগুলোকে এ সংক্রান্ত চলমান জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থায় সহযোগিতা প্রদান ও তাদের প্রবেশাধিকার প্রদানে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।
আসিয়ান ও মিয়ানমারের মধ্যে সমাপ্ত পাঁচ দফা ঐক্যমত্যের দ্রুত ও পূর্ণ বাস্তবায়নসহ মিয়ানমারের সংকটের সমাধান খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা গ্রহণের জন্য আসিয়ানের প্রশংসা করেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি। দীর্ঘস্থায়ী রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের জন্য আসিয়ান সদস্য দেশ এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলির সাথে সম্পৃক্ততা অব্যাহত রাখার জন্য মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূতের প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।
বিশেষ দূত তার ব্রিফিংয়ে মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এই পরিস্থিতি রোহিঙ্গা মুসলিমসহ বেসামরিক নাগরিকদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে এবং অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। তিনি বাংলাদেশ সরকারের উদারতার স্বীকৃতি জানিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের প্রতি তাদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি মিয়ানমারে তার ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন যার মাধ্যমে শান্তি, উন্নয়ন এবং মানবিক কাজের সাথে যুক্ত সকল পক্ষকে এ সঙ্কটের সমাধানে সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগাবেন মর্মে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূতের ব্রিফিং এর পরে, সদস্য রাষ্ট্রগুলি প্রদত্ত বক্তব্যে বিশেষ দূতের প্রচেষ্টার পাশাপাশি আসিয়ানের পরিপূরক ভূমিকার প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন। সদস্য রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশ সরকারের অনুকরণীয় মানবিক নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।