প্রবাস মেলা ডেস্ক: ব্রিকস সম্মেলনের ১৫তম আসর বসছে ২২ আগস্ট ২০২৩, মঙ্গলবার। মার্কিন ডলারের আধিপত্য রোধে এবার একাট্টা বিশ্বের পাঁচ আঞ্চলিক অর্থনৈতিক শক্তির এই জোট। ব্রিকসের এবারের সম্মেলনে প্রাধান্য পেতে পারে অভিন্ন মুদ্রা চালু, সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোসহ জোট সম্প্রসারণের বিষয়টি। এছাড়াও, সম্মেলনের বাইরে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের সাইডলাইন বৈঠকেও অংশ নেয়ার কথা রয়েছে।
বিশের পাঁচ আঞ্চলিক অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর জোট ব্রিকসের ১৫তম সম্মেলন ঘিরে গোটা বিশ্বের নজর এখন দক্ষিণ আফ্রিকায়। জোহানেসবার্গে ২২ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত চলবে সম্মেলন। উপস্থিত থাকবেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
তবে থাকছেন না রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি বলেই সম্মেলনে যোগ দেয়ার বিষয়টি রুশ প্রেসিডেন্ট নাকচ করে দিয়েছেন বলেই মনে করছেন বিশ্ব রাজনৈতিক মহলের একাংশ। সম্মেলনে জোট ও জোটের বাইরের ৬০টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
২০১৯ সালের করোনা মহামারির পর, এবারই প্রথম জোটের প্রতিনিধিরা স্বশরীরে হাজির হচ্ছেন এক মঞ্চে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে উঠে আসছে, শীর্ষ সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয় পারস্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোসহ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে একটি অভিন্ন মুদ্রা চালুর উদ্যোগ নেয়া।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মার্কিন ডলারের আধিপত্য কমানোর লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। এতে ডলার ও ইউরোসহ অন্যান্য শক্তিশালী মুদ্রাকে পেছনে ফেলে পশ্চিমা আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এছাড়াও ব্রিকসভুক্ত নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হবে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক আন্দ্রে স্পারটাকের মতে, ‘বিশ্ব উন্নয়ন নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে ব্রিকসের। এর সদস্য দেশগুলো ক্রমবর্ধমান বাজার ও উন্নয়নশীল দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার নানা সংস্কার ও পরিবর্তনের জন্যও প্রস্তুত জোটটি। এতে আমার মনে হয়, বিশ্ব অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের মুদ্রা, বিশেষ করে ডলারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেছে। যা বিশ্বের অনেক দেশের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। এ কারণেই ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর লক্ষ্যে ‘ডি-ডলারাইজেশন’ প্রক্রিয়ায় সক্রিয় হতে শুরু করেছে অনেক দেশ।
এবারের সম্মেলনকে অন্যবারের তুলনায় ব্যতিক্রম বলেই বিবেচনা করা হচ্ছে। থাকতে পারে বেশ কিছু চমক। বিশেষ করে জোট সম্প্রসারণের সম্ভাবনায় নিজেদের যুক্ত হওয়ার আশায় তাকিয়ে বিশ্বের অন্তত ৪০টি দেশ। সৌদি আরব, আরব আমিরাত, ইরান, মেক্সিকো, এমনকি বাংলাদেশও রয়েছে এ তালিকায়। এতে যেকোনো দেশের সদস্যপদ পেতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হবে বলেই উঠে আসছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।
সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের আলাদা সাইডলাইন বৈঠকেও অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। এতে চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক ছাড়াও অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিরাও অংশ নেবেন আলাদা বৈঠকে।
করোনা মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধ ও পরাশক্তিগুলোর মধ্যে নানা দ্বন্দ্বে নতুন সমীকরণে যখন এগোচ্ছে বিশ্বরাজনীতি, ঠিক তখনই বিশ্ব অর্থনীতির এক চতুর্থাংশের নিয়ন্ত্রণকারী দেশগুলোর জোটের এবারের সম্মেলন। সম্পূর্ণ পরিবর্তিত এক বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়ায় একে অভাবনীয় ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলে আখ্যা দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। শুধু তাই নয়, জোট সম্প্রসারিত হলে ব্রিকসের অর্থনৈতিক উত্থান বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন দিক উন্মোচন করবে বলেও মনে করছেন তারা।