মামুন ইমতিয়াজ:
চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, যিনি আশিক চৌধুরী নামে অধিক পরিচিত। বাংলাদেশের এক অতি প্রতিভাবান প্রশাসক, ব্যাংকার এবং ক্রীড়াপ্রেমী ব্যক্তিত্ব। তার জীবনযাত্রা, কর্মজীবন এবং ব্যক্তিগত অর্জন আমাদের দেশের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার কার্যক্রম এবং নেতৃত্বে বাংলাদেশে যেমন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ প্রবাহিত হচ্ছে, তেমনি দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নেও নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে। চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের কর্মজীবন শুধুমাত্র ব্যবসা ও প্রশাসন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়, তার অবদান ক্রীড়া, আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা এবং সাহসিকতাতেও রয়েছে।
প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা
চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের জন্ম চাঁদপুর জেলায় হলেও তার শৈশব কেটেছে যশোরে। তিনি সিলেট ক্যাডেট কলেজে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন এবং সেখান থেকে অসামান্য ফলাফল অর্জন করেন। মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে আশিক চৌধুরী ঢাকায় এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি লন্ডন বিজনেস স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখানে ফাইন্যান্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তার পড়াশোনার প্রতি নিষ্ঠা ও প্রতিশ্রুতি তাকে এক একাডেমিক দৃষ্টিকোণ থেকে সফলতার শিখরে পৌঁছাতে সহায়তা করেছে। এছাড়া, তিনি চার্টার্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট (সিএফএ) সার্টিফিকেশন অর্জন করেন, যা তার পেশাগত জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
কর্মজীবনের শুরু
চৌধুরী আশিক মাহমুদ চৌধুরী তার কর্মজীবন শুরু করেন ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানিতে, যেখানে তিনি টেরিটরি অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শুরু থেকেই তার কর্মদক্ষতা ও কঠোর পরিশ্রম তাকে দ্রুত উঁচু অবস্থানে পৌঁছাতে সাহায্য করে। এরপর তিনি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে লেন্ডিং স্ট্র্যাটেজি এবং ফিনান্সিয়াল প্ল্যানিং বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর কর্পোরেট দক্ষতা এবং অদম্য মনোভাব তাঁকে এইচএসবিসি ব্যাংকের বাংলাদেশ এবং সিঙ্গাপুর শাখায় গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ে যায়। প্রতিটি পদক্ষেপে তাঁর চেষ্টার ফলস্বরূপ, তিনি ব্যবসায়িক দুনিয়ায় সুনাম অর্জন করেন।
উদ্যোক্তা ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা
আশিক চৌধুরী একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম স্পোর্টস বার ‘দ্য বেঞ্চ’ প্রতিষ্ঠা করেন, যা দেশের যুবকদের মধ্যে নতুন ধরনের রুচি, সামাজিক মেলামেশা এবং ক্রীড়া সংস্কৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও তার অভিজ্ঞতা অসামান্য। লন্ডনে আমেরিকান এয়ারলাইন্সে ফিনান্সিয়াল অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করার পর তাকে ইউরোপ ও এশিয়ার ফাইন্যান্স প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এই অভিজ্ঞতা তাকে আন্তর্জাতিক বাজারে কৌশলগত চিন্তাভাবনা এবং বৈশ্বিক নেতৃত্বের দক্ষতা অর্জনে সহায়ক করেছে।
সরকারি প্রশাসনে অবদান
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন এবং একই সময়ে তিনি বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশের মানোন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। তিনি সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো এবং বিনিয়োগের পরিবেশকে আরো আধুনিক ও কার্যকর করে তুলছেন। তার প্রবর্তিত পরিকল্পনা এবং কৌশল বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে সহায়ক হয়েছে। তার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ বর্তমানে বৈশ্বিক বিনিয়োগের কেন্দ্রে পরিণত হতে চলেছে।
ব্যক্তিগত জীবন ও স্কাইডাইভিং রেকর্ড
চৌধুরী আশিক মাহমুদ একজন ক্রীড়াপ্রেমী ব্যক্তি। ২০২৪ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিসে ৪১,৭৯৫ ফুট উচ্চতা থেকে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে স্কাইডাইভ করেন এবং গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ‘গ্রেটেস্ট ডিস্টেন্স ফ্রি ফল উইথ এ ব্যানার’ শাখায় নতুন রেকর্ড স্থাপন করেন। তার এই কৃতিত্ব বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয়। স্কাইডাইভিংয়ের পাশাপাশি তিনি একজন প্রশিক্ষিত প্রাইভেট পাইলট এবং অ্যাডভেঞ্চার কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর এই সাহসী পদক্ষেপ ও অভিযান তাঁর জীবনের সাহসিকতা এবং অদম্য স্পৃহাকে প্রতিফলিত করে।
এক প্রশ্নের জবাবে চৌধুরী আশিক মাহমুদ জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের মধ্যে পাঁচটি সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল সম্পূর্ণ প্রস্তুত হবে যেখানে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগসহ সব সুবিধা থাকবে। এসব অঞ্চল হলো জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, শ্রীহট্ট (সিলেট), জামালপুর, মহেশখালী এবং জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল। আগামী এক বছর এই অঞ্চলগুলোর উন্নয়নই প্রধান লক্ষ্য। বর্তমানে ১৯টি অঞ্চলে কাজ চলছে এবং ৪৫ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে ১৩৩ জন নতুন বিনিয়োগকারী যোগ হবে এবং ৫.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে আড়াই লাখ কর্মসংস্থান হবে।
লেখক: প্রেজেন্টার, বাংলাদেশ টেলিভিশন
ও উপদেষ্টা, প্রবাস মেলা পত্রিকা।