রানা সাত্তার, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: একের পর এক এম্বুল্যান্স আসার সাইরেন। বাতাসে দগ্ধ পোড়া লাশের গন্ধ। এই যেন এক মৃত্যুপুরী চট্টগ্রাম। এভাবেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজসহ চট্টগ্রামের বেশ কিছু মেডিকেলে নিয়ে আসা হয় দগ্ধরোগী আর এসময় আহাজারী করা রোগীর স্বজন, বিভিন্ন সামাজিক অঙ্গসংগঠন, সেচ্ছাসেবী সংগঠন, বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলাবাহিনী, সাংবাদিক, উৎসুক জনতা সব মিলিয়ে বেসামাল হয়ে পরে চমেক চত্ত্বর। এই বেসামাল কে সামাল দিয়ে দগ্ধ আহত রোগীদের সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে শনিবার রাত ১০টার পর থেকে টানা ২৪ ঘন্টা কাজ করেছে র্যাব-৭। র্যাব-৭ অবগত হওয়ার সাথে সাথে মেডিসিন, ব্লাড ডোনেট, ০৭ (সাত) টি পেট্রোল, ০৫ (পাঁচ) টি সিভিল টিম এবং ০১ (এক) টি লাইফ সাপোর্ট এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সহ মেডিকেল টিম নিয়ে চমেক হাসপাতালসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে কাজ করেছে। ৫০ জন র্যাব ব্লাড দিয়েছেন বলে জানা যায়।
শনিবার দিবাগত রাত থেকেই র্যাপিড একশান ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৭) এইসেবা গুলি নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করেছেন। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সহযোগিতা করার পাশাপাশি ব্যাটালিয়নের সকল সদস্য সন্ধানী ব্লাড দিয়ে ব্লাডের চাহিদা কিছুটা পুরণ করেন, তাদের নিজস্ব লাইফ সাপোর্ট এম্বুলেন্স দিয়ে সীতাকুণ্ড থেকে রোগী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। ভীড় করা জনতাকে শৃঙ্খলা বজায় রেখে সহযোগিতা করেন।
রিপোর্ট লিখাব্দি জানা যায়, গত শনিবার (৪ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুন লাগে। গত ২৪ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে লাগা আগুন। সেখানে একের পর এক কনটেইনার বিস্ফোরিত হচ্ছিলো, দাউ দাউ করে জ্বলছিলো আগুনের লেলিহান শিখা। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকার বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনায় সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ৪৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং আহত প্রায় চার শতাধিক মানুষ। এটাই চট্টগ্রামের ইতিহাসে সেরা ভয়াবহ দুর্ঘটনা। নিহতদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী রয়েছেন ৫ জন। তবে তাদের নাম জানা যায়নি। অনেকের এখনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ রয়েছে অহরহ।
র্যাব-৭, চট্টগ্রামের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল এম এ ইউসুফ (পিএসসি) জানান, আমরা প্রতিটি ঘটনা স্পটে যাই। লোমহর্ষক ঘটনা দেখে আমরা শোকাহত। র্যাব-৭ এর পক্ষ হতে ০৭ (সাত) টি পেট্রোল, ০৫ (পাঁচ) টি সিভিল টিম এবং ০১ (এক) টি লাইফ সাপোর্ট এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সহ মেডিকেল টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘটনার সময় থেকে অদ্যাবধি নিয়োজিত রয়েছে। উক্ত হৃদয় বিদারক ঘটনায় র্যাব শোকাহত।
উপস্থিত দায়িত্বরত র্যাব-৭ কর্মকর্তা জানান, সীতাকুণ্ডের আগুনের ঘটনায় র্যাব-৭ এর পক্ষ হতে গভীর শোক জানাচ্ছি। র্যাব-৭ এর পুরা ব্যাটালিয়ন ব্লাড ডোনেট করেছি, সেই সাথে আশাকরছি যথেষ্ট ব্লাড সন্ধ্যানীতে রয়েছে। তিনি আরো বলেন- দেশের যেকোনো বড় দূর্যোগে র্যাব পাশে ছিল, আগামীতেও থাকবে।
দায়িত্বরত র্যাব-৭ এর আরএমও ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, শনিবার দিবাগত রাত থেকে টানা ২৪ ঘন্টা আমরা কয়েক ধাপে রোগী সনাক্ত করে চমেক বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করে দেই। পরে সকাল হতে না হতেই আমাদের চিকিৎসা সেবার পরিধি বেড়ে বহুগুণ বেড়ে যায়। যেমন মরদেহ, আহত রোগীর চাপ বেড়ে যায় সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে নির্দেশ মোতাবেক স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বাস্থ্যসেবার বুথও বাড়ানো হয়। যথেষ্ট ভালোসেবা দেয়ার চেষ্টা করেছি আমরা। আমরা সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।