প্রবাস মেলা ডেস্ক: সম্প্রতি প্রবাস মেলা অফিসে এসেছিলেন ব্রিটেনের সর্বজন সমাদৃত সাংবাদিক, সমাজসেবী ও কমিউনিটি নেতা কে এম আবু তাহের চৌধুরী। তার এ আগমনে প্রবাস মেলা অফিসে উষ্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তিনি প্রবাস মেলা কর্মীদের সঙ্গে চা-চক্রে অংশগ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় পত্রিকার অনলাইন রিপোর্টার আশরাফুল আলম মাসুদ তার হাতে প্রবাস মেলা পত্রিকার সৌজন্য কপি তুলে দেন।
কে এম আবু তাহের চৌধুরী ১৯৫৬ সালে মৌলভীবাজার উপজেলার ইটা সিংকাপনের বিখ্যাত সিংকাপনী মৌলানা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি ব্রিটেনের সর্বজন সমাদৃত সাংবাদিক, সমাজসেবী, কমিউনিটি নেতা। সাংবাদিকতা ও শিক্ষকতা হলো তাঁর পেশাগত জীবন। তিনি একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার।
তাঁর পিতা বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন ও বুজুর্গ মরহুম হাফেজ মাওলানা আব্দুল কাদির চৌধুরী (রহঃ) সিংকাপনী। হাজার হাজার ভক্ত-মুরিদানের প্রিয় শায়খ পীর সাহেব সিংকাপনী সিলেট অঞ্চলের ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে শুধু একজন ধর্মপ্রচারক আলেমে দ্বীনই ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন শিক্ষক, একজন সমাজসেবক ও যুগের খাঁটি ওলী আল্লাহ। তিনি ছিলেন ইলমে লুদুনী প্রাপ্ত একজন আলেম। বাংলা, আরবি, ফারসি ও উর্দু ভাষায় ছিলেন সুপণ্ডিত। তিনি পবিত্র কুরআনের তাফসীরসহ শতাধিক কিতাব লিখেছেন।
তারই সুযোগ্য পুত্র হলেন কে এম আবু তাহের চৌধুরী। তিনি পিতা-মাতার কাছে ইসলামের প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরে শ্যামরার বাজার প্রাইমারি স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা, কাশিনাথ আলাউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, মৌলভীবাজার কলেজ থেকে এইচএসসি ও সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। লন্ডনে তিনি টাওয়ার হ্যামলেটস কলেজ ও সেন্ট প্যাট্রিক কলেজে বিজনেস ম্যানেজমেন্টের উপর হায়ার ন্যাশনাল ডিপ্লোমা লাভ করেন।
কৈশোরে লেখার প্রতি গভীর অনুরাগ যেন ভালোবাসার নিগূঢ়তায় আবদ্ধ করে ফেলে তাকে! ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার কে এম আবু তাহের চৌধুরী ইলেকট্রিক আর অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর পেশাগত জীবন ছেড়ে যুক্ত হয়ে যান পেশাদার সাংবাদিকতায়।
১৯৮৪ সালে প্রিন্স ফিলিপের আমন্ত্রণে রাউন্ড টেবিল সম্মেলনে যোগ দিতে যুক্তরাজ্যে আসেন। পরিবারের সিদ্ধান্তক্রমে তিনি ব্রিটেনে থেকে যান। একজন দক্ষ সংগঠক, সাংবাদিক ও লেখক কে এম আবু তাহের চৌধুরী খুব কম সময়েই কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষের নজর কাড়তে সক্ষম হন। সর্বদা পরোপকারী ব্যক্তিত্বসম্পন্ন আবু তাহের চৌধুরী তাঁর ব্রিটেন জীবনে পরিবার এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে কমিউনিটির জন্য একজন নিবেদিত প্রাণপুরুষ হিসেবে কাজ করেছেন নিরলসভাবে।
প্রবাসীদের স্বার্থ সুরক্ষা, বিমানের লন্ডন-সিলেট রুটে ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালু করা, বিমানবন্দরে প্রবাসী হয়রানি বন্ধ, প্রবাসীদের জায়গা-জমি দখলমুক্ত করা, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’র জটিলতা দূর করা, প্রবাসীদের ভোটাধিকার ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানসহ সকল নৈতিক ও মানবিক দাবিতে সম্মুখ সারিতে প্রবাসীদের কণ্ঠস্বর কে এম আবু তাহের চৌধুরী। প্রবাসীদের ভোটাধিকার আন্দোলন, দ্বৈত নাগরিকত্ব আন্দোলন, সৈয়দ সুরত মিয়াকে হত্যার বিরুদ্ধে আন্দোলন, মনিকা আলীর *ব্রিক লেন* উপন্যাসের বিরুদ্ধে আন্দোলন, সিলেট বিভাগ আন্দোলন ও বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলন ও সংগ্রামে তিনি ছিলেন সম্মুখ কাতারে।
দেশ থেকে প্রবাসে এসে অসহায় দিন যাপন করছেন কিংবা দেশ থেকে ইউকে এসে বাসস্থানের বন্দোবস্ত নেই, সেখানেও একজন আবু তাহের চৌধুরী আছেন ভরসা আর ভালোবাসার দু’হাত মেলে। বিয়ে-শাদি কিংবা পারিবারিক দ্বন্দ্ব-কলহ দূর করতেও একজন আবু তাহেরকেই ছুটতে হয় এখন থেকে সেখানে।
কমিউনিটির অনেক বয়োবৃদ্ধের কাছে তরুণ বয়সে ছিলেন সমস্যা মোকাবেলায় পুত্রের মতো, আর এই সময়ে তরুণ প্রজন্মের কাছে বাবাসম গুরুজন। পূর্ব লন্ডনের ভ্যালেন্স রোড এলাকার যে বাড়িটির সপ্তাহে সাতদিনই দরজা খোলাই থাকে, সেই বাড়িটি কার প্রশ্ন করলে কমিউনিটির কেউ “তাহের ভাই”, কেউ “চাচা” কিংবা কেউ জানান দেবেন “আবু তাহের চৌধুরীর ফ্রি সেবা প্রদান সিটিং রুম”। যেখানে ফর্ম পূরণ করা, অনুবাদ করা, হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাখ্যা করা থেকে শুরু করে পারিবারিক বিবাদ, বৈবাহিক, আর্থিক, ব্যবসায়িক, ধর্মীয়, এবং আইনগত ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা ইত্যাদির মতো নানা জটিল বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয় বিনিময়হীন!
বছরে এমন সপ্তাহ নেই, যেদিন তার বাসায় কারও না কারও সাময়িক আশ্রয় নিতে দেখা না যায়। কমিউনিটির ৫০টির মতো সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা, পরিচালক ও সচিব হিসেবে নিবেদিতপ্রাণ কাজ করেছেন এবং করছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর বেশির ভাগ পোস্টই হলো কোনো এলাকা কিংবা সিটিতে বাংলাদেশের কোনো না কোনো এলাকার কেউ সমস্যায় পড়লে নিজে কাছে না থাকলেও কোনো না কোনো মাধ্যমে সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা। নিজের স্বাস্থ্যঝুঁকি উপেক্ষা করে প্রচণ্ড ঠান্ডায় আবু তাহের চৌধুরী অচেনা-অজানা মানুষজনকে সাহায্য করতে বাস স্টপেজে বসে একাকী সময় পার করতেও দেখা যায়।
তিনি টাওয়ার হ্যামলেটস কলেজ থেকে “টিচিং ইন কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ” এবং সেন্ট প্যাট্রিক কলেজ থেকে বিজনেস ম্যানেজমেন্টে এইচএনডি লেভেল ৪-এ সার্টিফিকেট গ্রহণ করেন।
তিনি সাপ্তাহিক ‘লন্ডন বাংলা’ পত্রিকার সম্পাদক, সাপ্তাহিক ‘ইউরো বাংলা’র চেয়ারম্যান ও প্রধান সম্পাদক, ‘বাংলা পোস্ট’ পত্রিকার প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্রিটেনের স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এস, ইকরা বাংলা টিভি এবং সিলেট টিভি চ্যানেলের জনপ্রিয় উপস্থাপক ছিলেন। তিনি ইউকে বাংলা প্রেসক্লাব এবং বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি ইউকে-এর সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
কমিউনিটি সেবা ও সাংবাদিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ অর্জন করেছেন ব্রিটিশ-বাংলাদেশী “হুজ হু” অ্যাওয়ার্ড, স্টার ইন দ্য কমিউনিটি, সিলেট রত্ন, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল সিভিক অ্যাওয়ার্ড এবং ২০০০ সালে ব্রিটেনের কালো সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে কমিউনিটি লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি স্ত্রী, চার পুত্র ও চার কন্যাসন্তানের জনক। তিনি ব্রিটেনের স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দল ‘অ্যাসপায়ার পার্টি’র চেয়ারম্যান, যে দল থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন নির্বাহী মেয়র ও ২৪ জন কাউন্সিলর।