প্রবাস মেলা ডেস্ক: সম্প্রতি প্রবাস মেলা অফিসে এসেছিলেন ব্রিটেনপ্রবাসী, সোশ্যাল এক্টিভিস্ট তাসলিমা তাজ। তিনি প্রবাস মেলা কর্মীদের সঙ্গে চা-চক্রে অংশগ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় পত্রিকার অনলাইন রিপোর্টার আশরাফুল আলম মাসুদ তার হাতে প্রবাস মেলা পত্রিকার সৌজন্য কপি তুলে দেন।
তাসলিমা তাজের জন্ম ঢাকায়। তিনি মনিপুর স্কুল থেকে এসএসসি শেষ করেন। পরে হলিক্রস থেকে এইসএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। পরে ২০০৬ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য ব্রিটেনে পাড়ি জমান তাসলিমা তাজ। সেখানে বিজনেস অ্যান্ড ফাইনান্স ইকোনমিক্সে পড়াশোনা করেন।
তাসলিমা তাজ বর্তমানে ব্রিটেনের এডুকেশন সেক্টরে জড়িত। পাশাপাশি তিনি সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে কাজ করছেন। তিনি হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে অনলাইনে স্বৈরাচারবিরোধী কবিতা আবৃত্তি ও ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে টকশোতে বক্তব্য-বিবৃতির মাধ্যমে জনগণকে সচেতনে ভূমিকা রেখেছেন।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশার বিষয়ে তাসলিমা তাজ জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন বিশ্ববরেণ্য অসামান্য ব্যক্তিত্ব। এই সরকারের কাছে সবার প্রত্যাশা একটু বেশি। সরকারকে কিছু সময় দিতে হবে। যদিও এই সরকারের কিছু কাজে মানুষ হতাশ হয়েছে। বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসার বিষয়টি আরও গুরুত্ব দিয়ে করতে না পারা। তাদের আর্থিক সহযোগিতার বিষয়টি ভালোভাবে সমাধান করতে না পারা। এখনো অভ্যুত্থানে আহতদের দাবি দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নামতে হচ্ছে। এমনটি হওয়ার কথা ছিল না।
এছাড়াও স্বৈরাচারের অনেক দোসর দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তাদের বিষয়ে সরকার আরও কড়া পদক্ষেপ নিতে পারতো। তিনি বলেন, স্বৈরাচারের দোসর সিলেটের সাবেক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর মত অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে না পারা একধরনের ব্যর্থতা।
স্বৈরাচারী হাসিনার কারণে ভারত দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশে বিভিন্ন দিক দিয়ে আগ্রাসন চালিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তাসলিমা তাজ। তিনি বলেন, কালচারাল থেকে শুরু করে সেনাবাহিনী সবকিছুতে ভারত বাংলাদেশে আগ্রাসন চালিয়েছে। কিন্তু হাসিনার নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে এগুলোর বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করার সাহস করেনি। বর্তমান অন্তর্বতী সরকার কিছুটা হলেও পররাষ্ট্রনীতিতে স্বোচ্ছার রয়েছে।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, মালদ্বীপের মুইজ্জু সরকার, নেপাল ও ভুটানের সরকারের ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে পারলে আমরা কেন পারব না? কূটনৈতিকভাবেই আমাদের এগুলো হ্যান্ডেল করতে হবে।
বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতার জন্য ভারতের যোগসাজস আছে বলে অভিযোগ করেন তাসলিমা তাজ। এসব ঘটনার মাধ্যমে ভারত ফায়দা হাসিল করতে চায়। ভারত আন্তর্জাতিক বিশ্বে প্রমাণ করাতে চায় বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে।
এছাড়া বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সংস্কার কমিশন নিয়েও প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন তাসলিমা তাজ। বিশেষ করে বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমানকে এই দায়িত্ব দেয়ায় নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের আসল রহস্য বের হয়ে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
বর্তমান সরকারকে সংস্কারের জন্য কিছু সময় দেয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের নিয়মিত বসা উচিত।
ভবিষ্যতে বাংলাদেশে নারীদের ক্ষমতায়ন, শ্রমিকদের অধিকার, শিশুদর অধিকার, শিক্ষায় বৈষম্য দূরীকরণে কাজ করতে চান তাসলিমা তাজ।