সম্পাদকীয়:
প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং দেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে তাঁদের পাঠানো রেমিটেন্সের ভূমিকা অনস্বীকার্য। অপ্রিয় হলেও সত্য, উন্নয়নের অংশীদার এই প্রবাসী জনশক্তি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও তাদের জন্য আজও আমরা যথাযথ সম্মান ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারিনি।
৩৬ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় প্রবাসীদের ভূমিকা ছিল অনন্য। রেমিটেন্স শাটডাউন, রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির নানা কর্মকাণ্ড, প্রবাস থেকে অনলাইনে এক্টিভিটি এবং নৈতিক সমর্থনের মাধ্যমে তাঁরা এই অভ্যুত্থানের সাফল্যে অসাধারণ অবদান রেখেছেন। দেশের জনগণের মুক্তি এবং ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনে প্রবাসীরা প্রমাণ করেছেন যে- তাঁরা দেশের জন্য কতটা আত্ম-নিবেদিত। কিন্তু এই অসামান্য অবদান সত্ত্বেও গত পাঁচ মাসে ‘প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়’-এ এককভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোন উপদেষ্টা রাখা হয়নি। অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব ‘প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়’র দায়িত্ব দিয়ে রাখা হয়েছে ড. আসিফ নজরুল এর উপর। আইন মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন শেষে ইচ্ছা থাকলেও উক্ত উপদেষ্টার প্রবাস বিষয়ে কার্যক্রম যথাযথ দৃশ্যমান হচ্ছে না। যার ফলে প্রবাসী খাত এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতের উন্নয়ন অনেকটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রবাসীরা বিদেশে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হন। যার মধ্যে রয়েছে ভিসা জটিলতা, কর্মক্ষেত্রে প্রতারণা, বৈধ অভিবাসনের দীর্ঘসূত্রিতা এবং দেশে বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি। তাদের কষ্টার্জিত অর্থ দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে তুললেও তারা সঠিক সুযোগ-সুবিধা কিংবা ন্যায্য সুরক্ষা অনেক ক্ষেত্রেই পাচ্ছেন না। এমতাবস্থায়, অন্তর্বতী সরকারে ‘প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়’-এ একজন স্বতন্ত্র উপদেষ্টা নিয়োগ করে প্রবাসীদের কল্যাণ নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০০১ সালে বিএনপি’র নেতৃত্বে ৪ দলীয় জোট সরকার ‘প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়’ গঠন করলেও এখন পর্যন্ত প্রবাসীদের কল্যাণে এবং বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি উন্নয়নে এখনও অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে প্রবাসীরা আন্দোলকারীদেরকে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক সমর্থনই দেননি; তাঁরা তাঁদের দেশপ্রেম, একাত্মতা এবং দায়িত্ববোধের পরিচয়ও দিয়েছেন। এই ত্যাগ ও অবদান স্বীকার করে প্রবাসীদের প্রতি একটি ‘কার্যকর রূপকল্প’ গড়ে তোলা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব।
প্রবাসী তথা দেশের সচেতন মানুষের একান্ত আকাক্সক্ষা-প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে একজন স্বতন্ত্র উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হোক। প্রবাসীদের সঠিক সম্মান ও স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে আসুন আমরা সবাই যার যার অবস্থান থেকে তাঁদের পাশে দাঁড়াই।
১৫ জানুয়ারি ২০২৫ প্রবাস মেলা ১১ বর্ষে পদার্পণ করেছে। গত ১০ বছর প্রবাস মেলা’র পথ চলাতে আমরা দেশ-প্রবাসের অনেক পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, প্রতিনিধি ও শুভানুধ্যায়ীকে সহযোদ্ধা হিসেবে পেয়েছি। সেজন্যে সবার কাছে আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সবাইকে ইংরেজি নববর্ষ ২০২৫ এবং প্রবাস মেলা’র ১১ বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষ্যে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, নিরাপদ থাকুন। প্রবাস মেলা’র সাথেই থাকুন।