জুলি রহমান, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
সাত-ই জুলাই ২০১৮ বহু দিনের সেই আকাঙ্খিত জায়গা নায়াগ্রা ফল্সের উদ্দেশ্যে যাত্রা। তা-ও কি-না সংগে মেজো ভাই আর আমার চির তরুন বড় ভাই। পড়ে গেলো হৈ চৈ। যাত্রা পথের সরঞ্জাম। বড় মেয়ে তন্বী। ঘুড্ডু তারিন, চলে গেলো মলে। আমি ছুটলাম আল আকসা বাজারে। কিনলাম বাদাম সহ জিহ্বা আস্বাদনের পথের খুঁটিনাটি। ছন্দার ধৈর্যচ্যুতি জুলি আপা আপনি কী পুরো বাজার তুলে নিবেন না-কি? মনে পড়ে গেলো কবি ইদ্রিস আলী মেহেদী কে। মেহেদী বলতেন কবি জার্নিতে যদি মুখ না চলে তাহলে বেড়ানোর কী মজা? মনে পড়ে গেলো ভূজন রসিক লেখক গীতিকার ইশতিয়াক রুপু কে। উনার খাদ্য মেনু শ্বশুড়ালয়ের কাহিনী তার প্রমাণ।
যাইহোক খুব তড়িঘড়ি করে ছুটলাম সেই অজানাকে দেখার উদ্দেশ্যে। মানুষের মনের আকুতি চিরকালই অচেনাকে চেনার, অজানাকে জানার অদম্য কৌতুহল। ভ্রমণ বিলাসী মন তাঁর এই ব্যতিক্রম নয়। ছুটছে গাড়ি। পথের কংক্রিটে পা ঘসে ঘসে। তারই খ্যাসখ্যাসানি ঢাকা পড়ে ইংরেজী গান মাঝে মাঝে রবীন্দ্র, তাহসান ও হাবীবের গানের মধুরতম সুরতানে। আট ঘন্টার জার্নি সাড়ে চারশত মাইলের। কখনো গান। কখনো কবিতা। কখনো আবার তিন ভাইবোনের সাহিত্যালোচনার বাকবিতন্ডা। সেখানে উঠে আসে রবীন্দ্র নজরুল জীবনান্দ। উঠে আসে পিকাসু সহ প্রথম নারী লেখিকা সাইফু। যুগের বায়রণ শেলি কিটসও বাদ যায় না। বাদ যায় না বোঁদলেয়ার পাবলো নেরুদা। আবার গান। এবার কোনো রেকর্ড নয়। যন্ত্রবিহীন খালি কন্ঠের আসল সুরের নির্যাস। ওঠে গোলাম আলী তানসেন গজলের প্রোথিতযশা শিল্পীদের নিয়ে কথোপকথন। বেশ জমে উঠেছে আড্ডা। স্টারবাক ধূম পড়ে গেলো কফি কেনার। কফির ধূমায়িত পেয়ালায় ঠোঁট রাখতেই কবি ওমর শামসের কবিতার চয়ন মাদুরের পালংক-সনাতন কাঁথা। মলিন বালিশ। আছে কথাটা ভালো লাগে নাই তাই বাদ দিলাম। ই-কারান্ত যুগে আছে শব্দটিকে বেরশিক মনে হচ্ছে আমার। বড় ভাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মনে হলো এই প্রথম দেখলো আমাকে। কি রে জুলি তুই শামস ভাইয়ের কবিতার লাইনও মনে রাখতে পারলি? আমি বলি কেনো নয় বড় ভাই? আমি তো সৃষ্টিশীল মানুষকে আমার থেকে আলাদা চোখে কখনোই দেখতে চাই না। তবে শোনো আমাদের কবি শামস আল মমীনের এক লাইন
তিনি বলেছেন-উত্তরার ছাদে বসে গরম কফির কাপে দেখি রোদে পোড়া কিষানীর পিঠ। কী অদ্ভূত না? কবিতার এই যে নতুন সিম্বলিক ওয়ার্ড বলো রুপকতা এসব তো না বললে সেই সৃজনশীল মানুষকে যেমন ছোট করা হয় তেমনি নিজেকেও দায় মুক্ত করা যায় না।
ছড়াকার মনজুর কাদের যেমন বলেন জুলির একেকটা নতুন শব্দে প্রতিবাদের যে আগুন ঝরে তা সমাজ সংসারের পরিবর্তনের সহায়ক। বেলাল বেগ মিশিয়ে আবেগ সব্যসাচী উপাধী দিয়েই দিলেন। এসব কথার উল্লেখ না হলে সাহিত্য হবে কলংকিত। ঐ সৃজনশীল ব্যাক্তির কাছেও থাকবে আমার দায়বদ্ধতা। আমি তো মুক্তিকামী মানুষ। আমি তো এ জগতে এসেছি মানুষকে ভালোবাসতে। এখন আমাকে তৃণ ভেবে কেউ যদি দূরে ঠেলে সেই দীনতা তাঁর; আমার নয়।
মেঝু ভাই মিটি মিটি হাসছে। তাঁর হাসির রহস্য উদঘাটন করতেই বলি- মেঝু ভাইয়ের গান যা উপন্যাসে-সে আমার বন্ধু আছে কই? ডঃ দলিলের এখন কোনো প্রশ্ন নয় বড় দুঃসময়। –হুইল চেয়ারটি গট গট করে নামছে-ভাগ্যিস বড় ভাই হুইল চেয়ারটা ছুটলো? আমিতো পড়ছি আর ঘামছি এরপর কী হয়। উত্তর পেয়ে গেলাম।
এবার পথের পাচালি না হয় একটু বলি! এ কাজটি বিভূতির। তবুও বলি পাহাড়ে সবুজের সমাহার। ছুটছে আমাদের সাথে সাথে। ঝলোমলো রোদ বলেছিলেন প্রয়াত লেখক বাংলার প্রাণ পুরুষ হুমায়ূন আহমেদ। আমি দেখছি রোদ বাতাসের খেলায় ক্লোরোফিল। কী চলন্ত গতিবেগ। বন কংক্রিট পাখির পালক ছেঁড়া গন্ধ বিধুর ছোঁয়া। রোদের ঢলে নীল গলে যায় পথে পথে; তারই উজান ঠেলে ঠেলে চলছি যখন নিউ জার্সির গভীর ঘন সবুজ প্রপাতে। হঠাৎ দেখি শাদা হেলিকপ্টারের মতো একটা কিছু ডিগবাজী খেলছে। তারপর অসংখ্য সাদা সাদা চাকার মতো চর্কীর মতো বনানীর ভেতর দিয়ে উঁকি ঝুঁকি মারছে। বহু দূর থেকে দেখতে দেখতে সন্নিকটে আসতেই দেখি। শুয়ে আছে কোন কুমারী চোখ মেলে। কোন জাদুকর তাকে জাদু মন্ত্রে শূণ্যে ভাসমান রেখে সার্কাস দেখাচ্ছে।
মন চলে গেলো ছোট্ট বেলার নাল্লাবুল্লার জাদুর কাছে। যিনি অন্ধ চোখেও জাদু দেখানোর কারিগর ছিলেন। আর তাঁর কথায় পাগল হয়ে যেতো জনগণ। তিনি একটা লাঠির উপর যুবতী মেয়েকে শুইয়ে সাদা চাদরে ঢেকে দিতেন। অতি সন্তর্পনে চাদর সরিয়ে মেয়েটিকে শূণ্যে ভাসিয়ে রাখতেন। এই কারেন্ট উৎপাদনকারী বৈদ্যুতিক পাওয়ারকে সেই যুবতী কুমারী বালিকাই মনে হচ্ছে।
মনটা বিষন্নতায় ছেয়ে গেলে কবি এবি এম সালেহ উদ্দিন যখন বলেন, আপনার কলম আপনি চালিয়ে যান। এইটাকে সচল না রাখলে আপনি আপনার বিবেকের কাছে অবিবেচক হবেন। এই যে অনুপ্রেরণা এরাই তো কাছের এবং অন্তরের মানুষ। কফির পর্ব শেষ। ছুটছে গাড়ি। বনানী পাহাড় ঠেলে ঠেলে।
অবশেষে গন্তব্যে। উঠলাম হোটেল ফলসভিউ বোবোর্ডের ট্র্যাভেলস হোটেলে। পেটের ভেতর জানান দিচ্ছে ক্ষিধে। অনতি দূরেই ইন্ডিয়ান বাফে। এমিলের গোয়েন্দা বাহিনীর মতো ছুটলাম সেদিকে। লিডারশিপে সাদিয়া আফরীন তন্বী। আমরা সদল বলে ছুটছি তাঁর পিছু। বেশ আয়েশ করে কাঁচের জানালায় দৃষ্টি গেঁথে চারপাশ চোখের আয়নায় তুলে এনে একেবারে জেঁকে বসা। সুন্দর পরিবেশ। শুরু হলো খাবারের পর্ব। গল্পকার মাসুদ আহমদ ডাঃ মাদল; বাউল নিজাম উদ্দীন সহ গোলাম মাওলাও যোগ দিলেন লান্সের টেবিলে। শুরু হলো বড় ভাইয়ের স্মৃতিচারণ কবে কোথায় ফ্রি খাবার পেয়ে রহমত আলী এক চুমুকে দশ বাটি ডাল চোখের পলকে উধাও তা-ও কি-না ডাল? ছুটলো হাসির ফোয়ারা। কারণ ওটি ফ্রি।
মা বলতেন ফ্রি দই।
খর পেতে লই।
বাঙালির স্বভাব।
আঃ করিম ভরা পেটে পাঁচ কেজির এক পাতিল দই করে দেয় সাবার। শহিম উদ্দীন পোলাও কোর্মার সংগে ৩৬ টি কাঁচা মরিচ লাগবেই তাঁর। এ গল্প নয়, বাস্তব চোখে দেখা। হান্নান লিংকন ৩০০ ডিম খেয়ে শিরোপা লাভ করে নয়ার হাট সাভারে পাশে থাকে নাট্যকার সেলিম আলদীন; সালাম সাকলানী; রঙ্গন, সানোয়ার এরা সকলেই জাহাঙ্গীর নগর ইউনিভার্সিটির নাট্যতত্ত্বের ছাত্র তখন। বর্তমানে রঙ্গন সানোয়ার জাহাঙ্গীর নগরেই শিক্ষক। ডিম খেকু হান্নান কয়েকটা স্কুলের মালিক। প্রয়াত সেলিম আলদীন। সালাম সাকলানী কেমন আছেন জানি না। উনি ছিলেন প্রভোস্ট। আমাদের খাদ্য মেন্যুতে এসব কখন জায়গা করে নেয়। মনের অজান্তে খাবরের মেনুর মতোই সুখাদ্য হয়ে।
পেটপূজার পর্ব শেষ করে ছুটলাম সেই অবর্ণনীয় সৌন্দর্যকে নয়ন সম্মুখে দাঁড় করাতে। বহুদূর থেকেই দেখছিলাম গড়িয়ে পড়া জলধারা। বিকেল প্রায় আসন্ন। রোদের তেজ স্তিমিত হলেও ঝলোমলো আকাশ। স্বচ্ছ কাঁচের মতো অসংখ্য অগণিত জনতার ঢল। পাকিস্তানী, ইন্ডিয়ান, বাংলাদেশি, আমেরিকান, কদাচিত দু একজন স্প্যানিশ ও চাইনিজ চোখে পড়লো। হাটায় আমি দুর্বল চিরকাল। এখন আরো বেশি। বড় ভাই আমার হাত ধরে এমন এক জায়গায় দাঁড় করালেন যে, আমি নির্বাক সেই প্রকৃতির রুপে। কথা বলতে পারছি না। আমি কেমন করে কথা বলবো ? ওরা যে কথা বলছে। পানির উচ্ছল ঝর্ণাধারা, হাওয়ার মাতন, পাখির রঙ্গলীলা। পাখিদের সংসারী দ্বীপ, আকাশ বেয়ে নামছে রংধনু সাত বুক আহ্লাদ মেখে। আকাশ মাটির সংগে মিশে একাকার।
ঝর্ণার জল যেখানে গড়িয়ে পড়ছে সেখানে পানির নিচে আবছা ধূয়ার মতো বিরাট পাথর। ক্ষণে নজরে পড়ে ক্ষণে পড়ে না। পানির সমান্তরাল বুকের জমিনে টগবগ করে ছুটছে অসংখ্য অগণিত অশ্বখোড়। যেনো জানান দিচ্ছে ওদের গতি। অনাবশ্যক দুটো লাইন ঠোঁটের আবরণ ভেদ করে গড়িয়ে বেরুলো রবীন্দ্র গুরুর-বলাকার ঝিলমের তীরে ঝিলিমিলি স্রোত খানি বাঁকা। এ সন্ধার স্বপ্ন টুটে বেদনার ঢেউ ওঠে জাগি। কোন সুদূরের লাগি হে পাখা বিবাগী? বেদনা কেনো? না গতি! বেগের আবেগে ? হ্যাঁ তাইতো আকাশ মাটি পাখি জলধারা পাথর গাইছে গান গলা ছেড়ে। প্রত্যেকেই ছুটছে। জল থেকে উড়ছে জলের বাষ্প মিশছে আকাশে। রংধনু পা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে জলের মাঝে। পরক্ষণেই সাত রঙের বহরে সে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রঙের দ্যোতনায় সাত বেহারা হয়ে ছুটছে তো ছুটছেই।
আর ওদিকে নিচের পৃথিবীতে বন্দী রাজকুমারী পাথরে পরিণত? তাঁরা খুশিতে কৌতুহলী অশ্বের আগমনে। জলের জলধারা সেই পাথরের খোলস ভেঙে বের করছে সহস্র রুপসী কন্যাদের। রংধনুর সাতরঙা পোশাকে আবৃত কুমারী বালা সূর্য পাখায় ভর করে হয়ে যাচ্ছে মেঘ বালিকা আকাশ লীনা। তাদের পাখা ঝাপটানোর জল হাজার দর্শকের শরীরে ছিটকে পড়তেই তাঁরা উধাও। রোদের শাদায় মিশে মিশে রংধনুর রং বদলে দিয়ে সপ্তাকাশের ঘরে তাঁরা আশ্রিত। রেখে যায় লক্ষাধিক প্রশ্ন মনোকোনে। তা হলো গতি, বেগ, আবেগ, প্রকৃতি সূধা, পাখির ডাক, রঙের বহর, শিল্পীর তুলি, কবির কবিতা, গান, দর্শকের হাজার কথার সুমিষ্ট শব্দ দোষণ।
চোখের ক্ষুধার নিবৃত্তি ঘটলেও পেটের চলে কুচকাওয়াজ। খাবার সহ এবার হোটেল গমণ। আট ঘন্টার জার্নি। তারপর আবার সারাদিন রাতের অর্ধেকটা সময় বাইরে। দুই ভাইয়ের ইচ্ছা খাবার পর আবার নির্মল সাহিত্য আড্ডা। চেইঞ্চ হতেই শরীর কেমন গুলিয়ে ওঠলো। শরীর পুরোপুরি জানান দিলো আমি এখন তাপের অধিকারে। অর্থাৎ জ্বরের পাহারা দাও। স্বামী সন্তান ভাইদের বিমর্ষ বদন আমাকে ব্যাথিত করলেও করার কিছু নেই। কথা খাবার সব কিছু বন্ধ। লেপ জড়িয়ে পরে থাকা।
ভোরের সূর্য কোয়া ছড়ানোর আগেই রহমান নামাজ শেষ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সাহস পাচ্ছে না নামাজের কথা বলতে। গতরাতের শারীরিক বিপর্যয়। ওকে এখনো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। রহমানকে বলি পর্দাটা একটু সরিয়ে দেবে? ভারী পর্দা সরাতেই দেখি কোবাল্ট গ্যাসীয় হাওয়ার ভেতর হলুদ কমলায় মিশ্রিত এক ডিম্বাকৃতি। জঠরস্ত মোহরসে সিক্ত। জন্ম নেবার প্রাণপন চেষ্টায় উদগ্রীব। দেখতে দেখতে ডিম্বটি খোলসমুক্ত হয়ে কাচা রোদ বুকে নিয়ে যেনো সাত তলার জানালার শাষর্শিতে প্রথম চুমো খেলো। সেই মিলনের কোহকাবৃত হলো চারপাশের অট্টালিকা যৌবনা শরীর। প্রত্যেকেই হেসে ওঠলো। গাংচিলেরা পাখায় মেখে সেই সূর্য রঙ দূর দূরূন্তে ছুটে চলে। রোদের ঝালরে সে পাখার ছায়া হয়ে নৃত্য করে সহস্র ছায়া পরী। সেই সাথে নেইমপ্লেইট গুলো সহস্র সৈনিক বেশে স্যালুট প্রদানে তৎপর হয়ে ওঠে। টাউয়ারের হলুদ এলিভেটর নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রোদে মেখে ভিটামিন আইসুরে
উদর পূর্তিতে নিথর। মাথার উপর সাদা চাদরে আবৃত তুষার কন্যা গভীর ঘুমে মগ্ন।
আমার মন তখন গেয়ে ওঠলো-
দেখো দেখো সকাল হয়েছে
পাখির ঠোঁটে গান এসেছে
আঙিনা রোদে হেসেছে!
সূর্য সুখে প্রকৃতি ভরেছে-
মনে মনে গানের কলি ভাঁজতেই বড় ভাই নন্দীকে ডাকছে। জুলের খবর কী?
নন্দী খু-উ-ব নিচু স্বরে বলছে জ্বর প্রচুর। আমি চট জলদী উঠে বসলাম। বড় ভাই এবার কাছে এসে বসে। কী যে মিস করলি রে। রাতের আসর। সকালের প্রকৃতি। আমি মৃদু হাসলাম।
কী করবো শরীর বিটরে করে বসে। বড় ভাই কফি বানালেন নন্দীর সহযোগিতা। কফির পর শরীর বেশ ঝরঝরে হয়ে উঠলো।
আজ আমাদের ভ্রমণ বিলাসি মনের দুটি চাহিদা পূরণ হবে। ১. জাহাজে ভ্রমণ। ২. টায়ারে ওঠা। দ্বিতীয়টাই প্রথমে চলে এলো। যতোই উপরে উঠছি ততোই যেনো সুন্দরের অবগাহণ করছি। চোখ বিশ্বাস করতে চায় না। এ জগৎ আর তাঁর চারিধার এতো সুন্দর। জায়েদের কথা মনে পড়লো। কবি জায়েদের ভাস্য জগত সুন্দরের আঁধার তবে কবিতায় সেই রুপকে নিখুঁতভাবে বসাতে হয়; নতুবা আবেগের মেদে পরিণত হবে। যা হোক ! আমার এতো সৌন্দর্যে বন্দী হয়ে মনে হলো জীবন খুব ছোট। জানার বিষয় দেখার বিষয় সমুদ্র সমান। এই এক জীবনে তা অপূর্ণই থেকে যাবে। আমিতো আমার দেশের একাংশও দেখিনি। সুতরাং আমার মত অর্বাচীন কী করে ভ্রমণ কাহিনী লিখবে? দর্শকবৃন্দ ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
তড়িঘড়ি ছুটছি সেই ঝর্ণার কাছে। সকলের সে কি উৎসুক উৎকন্ঠা। যতোই দেখছি এই মনোলোভা দৃশ্য; ততোই যেনো আমোদী হয়ে ওঠছে মন। চোখ হলো শীতল। বড় ভাই হাত ধরে টেনে নিলেন এমন এক জায়গায়! সে দৃশ্যে নির্বাক আমার মুখের দরজা। পিনদ্ধ চোখের রেটিনা! বাতাসের বাওকুমারী দেখেছি। নদীর কুমের পাকানো দেখেছি গভীর কুমের খাদ। কিন্তু এ কি! মুহূর্তে সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ হয়ে ওঠে মন।
ফিরতেই হয় প্রকৃতির কাছে। নত হতেই হয় প্রকৃতির রুপ সুধা সান্নিধ্যে। গড়িয়ে পড়ছে অফুরন্ত জলের ফল্গুধারা। যেনো সহস্র অপ্সরী বালা নিচের পৃথিবীতে শুভ্র সতেজ পোশাকে পাথর বন্দী। জলের ফোয়ারা ছুঁয়ে ছুঁয়ে অলকাপুরী পাহাড়ায় নিয়োজিত। স্বপ্নের কোহক যেমন আবছা ধোয়া ধোয়া তেমনি এক মনোরম পরিবেশ।