প্রবাস মেলা ডেস্ক: টানা দ্বিতীয়বার কানাডার অন্টারিও প্রাদেশিক সরকারের সংসদ সদস্য (এমপিপি) হলেন বাংলাদেশি কানাডিয়ান রাজনীতিবিদ ডলি বেগম। বাংলাদেশি অধ্যুষিত অন্টারিও অঙ্গরাজ্যের টরন্টো শহরের স্কারবোরো সাউথ ওয়েস্ট নির্বাচনী এলাকা থেকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে ডলি বেগম আবারও এমপিপি নির্বাচিত হয়েছেন। বড় ব্যবধানে জয়ের মধ্য দিয়ে কানাডার রাজনীতিতে ইতিহাস গড়লেন তিনি। নাম লেখালেন টানা দুই মেয়াদে এমপিপি নির্বাচিত হওয়া প্রথম বাংলাদেশি কানাডিয়ান রাজনীতিবিদ হিসেবেও। নিউ ডেমোক্র্যাটিক দলের হয়ে ডলি বেগমের প্রাপ্ত ভোট ১৫ হাজার ৯৫৪ বা ৪৭ দশমিক ১ শতাংশ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী ব্রেট স্নিদার পেয়েছেন ৯ হাজার ৪৩৬ ভোট। সিটি অব টরন্টোতেও কর্মরত ছিলেন ডলি বেগম। ২০১৮ সালের ৭ জুনের নির্বাচনে তিনি ১৯ হাজার ৭৫১ ভোট পেয়ে প্রথমবারের মতো প্রাদেশিক সাংসদ নির্বাচিত হন।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের স্থানীয় নির্বাচনে মৌলভীবাজারের বংশোদ্ভূত ২০ জন কাউন্সিলর বিজয়ী হওয়ার আনন্দ সংবাদের পর এখন নতুন করে যুক্ত হয়েছে ডলির বিজয়ে আনন্দ। এমন সুসংবাদে শুক্রবার সকাল থেকে তার পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে আনন্দে উচ্ছ্বসিত জেলাবাসী। কারণ, তিনিই প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারী যিনি কানাডার জনগণের বিপুল ভোটে দ্বিতীয় বারের মতো জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। ডলি দ্বিতীয় বারের মতো কানাডার প্রাদেশিক নির্বাচনে এমপিপি (মেম্বার অব প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্ট) নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েছেন। এমন খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন ডলিকে অভিনন্দন জানিয়ে তার প্রশংসা করছেন। কানাডা প্রবাসী বিশিষ্ট কমিউনিটি লিডার মো. কামরুল ইসলাম ও গিয়াস মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন ডলির বিনয়ী স্বভাব, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, দল ও কমিউনিটির প্রতি তার উদার আন্তরিকতা তাকে পুনরায় বিজয়ী করেছে। তার বিজয়ে সে দেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হলো।
ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির মাধ্যমে মানুষের কল্যাণেও নিবেদিত হন এবং অতি অল্প সময়ে সবার পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। তিনি স্কারবোর হেলথ এলায়েন্সের কো-চেয়ারম্যান হিসেবেও কাজ করেছেন। কমিউনিটির কল্যাণেও নিবেদিত ছিলেন তিনি। ডলি প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভ পার্টির (পি.সি) ব্রেট স্নাইডারকে ৬ হাজার ৫১৮ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন।
ওই আসনে ৩৩৮৭৮ ভোটের মধ্যে ডলি পান ১৫,৯৫৪ ভোট (৪৭.১ শতাংশ)। ৩য় হন ভারতীয় বংশোদ্ভূত লিছা প্যাটেল এলআইবি দলের হয়ে পান ৬,৩৫৬ ভোট। ডলি বেগমের ছোট চাচা মুনমুখ ইউনিয়নের বাজরাকোনার বাসিন্দা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সদর উপজেলার ডাইরেক্টর মো. আব্দুস শহিদ মানবজমিনকে বলেন ডলি বেগম কানাডার জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ায় তার দল, দেশ ও প্রবাসীদের মতো তিনিও আনন্দিত। এই প্রথম বাংলাদেশি একজন নারীকে দ্বিতীয় বারের মতো সে দেশের এমপিপি নির্বাচিত করায় সম্মানিত ভোটারদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ডলি তার বাবা-মা ও ভাই প্রায়ই দেশে আসেন। দেশে আসলে তারা গ্রামের বাড়িতেই বসবাস করেন। তিনি দেশ ও প্রবাসে থাকা বাংলাদেশি ও মৌলভীবাজারের নাগরিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ডলির জন্য সবার কাছে দোয়া চান।
ডলি বেগম কানাডার ওন্টারিও প্রদেশের প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্ট নির্বাচনে টরেন্টো এলাকার স্কারবোরো সাউথ ওয়েস্ট আসন থেকে এমপিপি নির্বাচিত হয়েছেন। ২রা জুন অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে তিনি নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) মনোনয়নে নির্বাচন করেন। এর আগে কোনো বাঙালি কানাডার নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারেননি। তিনি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মনুমুখ ইউনিয়নের বাজরাকোনা গ্রামের সন্তান। ডলির বাবা মো. রাজা মিয়া। ডলি বেগম রাজা মিয়া ও জবা বেগম দম্পতির বড় সন্তান। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে ডলি বেগম বড়। ডলির স্বামী কানাডা প্রবাসী রেজুওয়ানুর রহমান। ১৯৯৮ সালে ডলি তার বাবা মায়ের সঙ্গে কানাডায় পাড়ি জমান।
ডলি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মনুমুখ বাজরাকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় কানাডা চলে যান। সেখানে কানাডার গর্ডন এ ব্রাউন মিডল স্কুল ও ডব্লিউ এ পোর্টার কলিজিয়েট ইনস্টিটিউট কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। এরপর ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো (সেন্ট জর্জ) থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে অনার্স সম্পন্ন করেন। এরপর লন্ডনের বিশ্বখ্যাত ইউসিএল বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডেভেলপমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড প্ল্যানিং বিষয়ে মাস্টার্স করেন।