নিরব আহমেদ রুমন, এথেন্স, গ্রীস: রোহিঙ্গা নিযার্তন বন্ধ, জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিচার এবং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার দাবীকে তুলে ধরে গ্রীসের রাজধানী এথেন্সে বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ এবং মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১১ই ডিসেম্বর বুধবার গ্রীসের রাজধানী এথেন্সের সংসদ ভবনের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। গ্রীসের বর্ণবৈষম্য বিরোধী সংগঠন ইউনাইটেড মুভমেন্ট এগেইনস্ট রেসিজম এবং ফ্যাসিজমসহ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন এবং বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রীস-এর আয়োজনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে ইউনাইটেড মুভমেন্ট এগেইনস্ট রেসিজম এবং ফ্যাসিজম এই সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, মিয়ানমারের নির্বিচারে মানব হত্যায় সারা পৃথিবী আজ লজ্জিত। মিয়ানমার সে দেশের রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ, শিশুদের নির্বিচারে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন, বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেওয়াসহ পৈশাচিক, বর্বর আচরণ করে তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। সেই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে । মিয়ানমার তাদের ফেরত নিচ্ছে না।
মিয়ানমারের গণহত্যার বিচারের দাবিতে জাতিসংঘের আন্তজার্তিক আদালতে মামলা দায়ের করেছে আফ্রিকা মহাদেশের দেশ গাম্বিয়া। সেই মামলার শুনানি ১০,১১ এবং ১২ ডিসেম্বর নেদারল্যাণ্ডসের হেগ শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মিয়ানমারের নির্বিচার গণহত্যার প্রতিবাদ, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়া এবং জাতিসংঘে বিচারের দাবীতে সব দেশকে এক সাথে কাজ করার আহবান জানানো হয়। তারা সমাবেশ থেকে মিয়ানমারের গণহত্যা ও লুণ্ঠনকারীদের বিচার ও রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত নেওয়ার দাবী জানান। প্রতিবাদ সমাবেশে রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং মানবতা বিরোধী মিয়ানমারের অপরাধীদের বিচারের দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন প্রদর্শন করা হয়।
প্রতিবাদ সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা পৃথিবীর বিভিন্নদেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মিয়ানমারে সংগঠিত গণহত্যার বিচার এবং বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে সোচ্চার হবার আহবান জানান। এই প্রতিবাদ সমাবেশে গ্রীসে বসবাসকারী বাংলাদেশ, ফিলিপাইন, মিশর, ভারত, পাকিস্থান, গাম্বিয়াসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী, সাংস্কৃতিক, জেলা ও বিভাগ ভিত্তিক আঞ্চলিক সংগঠন, নারী নেতৃবৃন্দ অংশ নেয়। এথেন্সে অবস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশীদের পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দোয়েল একাডেমী এবং বাংলা-গ্রীক শিক্ষা কেন্দ্র এর ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, পরিচালকমণ্ডলী অংশগ্রহণ করে।

বিপুল সংখ্যক নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোর এবং নারীরা এই শান্তিপূর্ণ সমাবেশে যোগদান করে। গ্রীসের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া প্রতিনিধিগন ও বিপুলসংখ্যক সাংবাদিক এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন এবং বিষয়টি গ্রীসের প্রিন্ট এবং ইলেট্রনিক্স মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে গ্রীসের সংসদ ভবন সিনতাগমার সামনে বিশাল এক মানব-বন্ধন এবং প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচী পালন করা হয়। মানববন্ধনের পরে গ্রীসের জাতিসংঘ এবং এর অঙ্গ সংগঠনের প্রতিনিধি কাযার্লয়ে একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়। গ্রীসে অবস্থিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধির কাযার্লয়ে আর একটি স্মারকলিপি প্রদান কর হয়। এই সমাবেশের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় যে, জাতিসংঘের আদালতে মিয়ানমারের বিচারের দাবি এবং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার পক্ষে গ্রীসে বিপুল জনমত গড়ে উঠছে। গ্রীসের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এই দাবির স্বপক্ষে এগিয়ে এসেছে। গ্রীসে ইউনাইটেড মুভমেন্ট এগেইনস্ট রেসিজম এবং ফ্যাসিজম সংগঠন এর পক্ষ থেকে জানানো হয় যে- আগামী রোববার ১৪ ডিসেম্বর তারিখে গ্রীসের সকল মানবাধিকার সংগঠন এর উদ্যোগে একটি বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এই সমাবেশেও মিয়ানমারের বিচার এবং রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার দাবি অত্যন্ত জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে।