প্রবাস মেলা ডেস্ক: বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জেরে কিরগিজস্তান থেকে নিজেদের শিক্ষার্থী ফিরিয়ে নিচ্ছে পাকিস্তান। এরই মধ্যে একটি বিশেষ ফ্লাইট ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে লাহোরে পৌঁছেছে। বিশকেকে চলমান অস্থিরতায় চরম আতঙ্কে দিন কাটছে এক হাজারের বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর। সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নিতে সরকারের সহযোগিতা চান তারা।
কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর ক্যাম্পাসগুলোতে বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি। নতুন করে সহিংসতার খবর পাওয়া না গেলেও আতঙ্কে আছেন ছাত্র ছাত্রীরা। এ অবস্থায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বিশকেকের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের সহায়তায় পদক্ষেপ নিতে দেশটিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে নির্দেশ দেন। এর পরই কিরগিজস্তান থেকে নিজেদের শিক্ষার্থী ফিরিয়ে নিতে শুরু করে পাকিস্তান। এরই মধ্যে একটি বিশেষ ফ্লাইটে প্রায় দেড়শো ছাত্র-ছাত্রী লাহোরে পৌঁছেছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও কিরগিজস্তানে দূতাবাসের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত যোগাযোগ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে কিরগিজস্তানে বাংলাদেশের কোনও আবাসিক দূতাবাস নেই। উজবেকিস্তানের বাংলাদেশ দূতাবাস কিরগিজস্তানে অনাবাসী দূতাবাসের দায়িত্ব পালন করে। তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। সঙ্কট সমাধানে সরকারের সহায়তা চেয়েছেন বাংলাদেশিরা।
কিরগিজ স্টেট মেডিকেল কলেজের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আফরিন আক্তার অনন্যা কিরগিজস্তান থেকে গণমাধ্যমকে জানান, স্থানীয় বাসিন্দারা যতো বিদেশি আছে- ভারতীয়, পাকিস্তানি, বাংলাদেশিসহ প্রায় ১০টা দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের যেখানে দেখছে সেখানেই মারছে। কেউ এখানে নিরাপদ না। তিনি জানান, কিরগিস্তানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২শর বেশি।
একই প্রতিষ্ঠানের আরেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী জানান, রাস্তায় তো বটেই, হলে ঢুকেও হামলা চালানো হচ্ছে। ফলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সবাই। ওই শিক্ষার্থী একটি ভিডিও ধারণ করে সময় সংবাদকে পাঠিয়েছেন। এতে তিনি বলেন, এখানকার পরিস্থিতি ভালো না। আমি ভিডিওটি রেকর্ড করার সময় রুমের বাতি জ্বালাতে পারছি না, টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে রেকর্ড করছি। যাতে বাইরে থেকে বুঝা না যায় যে, ভেতরে কেউ আছে।
তিনি জানান, স্থানীয়রা বিভিন্নভাবে আক্রমণ করছে। খাবার কেনার জন্যও তারা বাইরে বের হতে পারছেন না। বাসার মালিক খাবার এনে দিচ্ছেন। আমরা এখন চাচ্ছি যেন নিরাপদে দেশে ফিরে যেতে পারি।
ওই শিক্ষার্থী আরও জানান, স্থানীয় পুলিশ তাদের সহায়তার চেষ্টা করলেও খুব একটা করতে পারছে না। স্থানীয় লোকজন পুলিশের পোশাক পরে বিভিন্ন বাসার দরকার নক করছে। দরজা খোলার পর দেখা যাচ্ছে, তারা মারপিট শুরু করছে।
আরেক শিক্ষার্থী জানান, কিরগিজস্তান থেকে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সরাসরি ফ্লাইট নাই। দেশটির সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাতে সরাসরি ফ্লাইট চালু করা হয় সেই ব্যবস্থা করতে তিনি বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন জানান।
কাঁদতে কাঁদতে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, পুলিশের সামনে ১০-১২ জন স্থানীয় এক বাংলাদেশি এবং এক ভারতীয়কে এমনভাবে মারছে…, আর পুলিশ ওই ঘটনা ভিডিও করছে। কোথায় যাব, কার কাছে অভিযোগ করব? আমাদের এখানে দূতাবাসও নাই।
এদিকে, বিশকেকের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে কিরগিজ মন্ত্রিসভা। এক বিবৃতিতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসত্য তথ্য প্রচারের কারণে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় সব পক্ষকে ভুয়া তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
একইসঙ্গে সংঘাতের জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে আইন অনুযায়ী বিচার নিশ্চিতের আশ্বাস দেয়া হয়। দেশটির শ্রমমন্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, নিরাপত্তার অভাবে বিদেশিরা চলে গেলে কিরগিজস্তানের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর শুরু হয় স্থানীয়দের হামলা। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ঢুকেও তাদের মারধর করা হয়। বিশেষ করে যারা দেশটির রাজধানী বিশকেকের হোস্টেলে থাকেন এমন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের টার্গেট করা হয়। হামলার শিকার হয়েছেন সেখানে বসবাস করা বাংলাদেশি শ্রমিকরাও।