প্রবাস মেলা ডেস্ক: ঢাকাই সিনেমার এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নূতন। এফডিসিতে ছিল তার তুমুল কর্মব্যস্ততা। এখন অভিনয়ে নিয়মিত নন, এফডিসিতেও তেমন আসেন না। সবশেষ শিল্পী সমিতির নির্বাচনে দেখা গেছে তাকে।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন নূতন। বর্তমানে চলচ্চিত্রে নিয়মিত না হলেও নিজেকে নায়িকাই মনে করছেন তিনি। এমনকি নায়িকা হিসেবেই মরতে চান।
শনিবার (২১ মে) ফেসবুক স্ট্যাটাসে নূতন লিখেছেন, ‘আমি যে বয়সেরই হই না কেন, মনে মনে আমি নিজেকে সবসময় নায়িকা ভাবি (বয়স আমার কাছে একটা নম্বর মাত্র)। আমি নায়িকা ছিলাম, আছি, থাকব। মানুষ হওয়ার পরে আমি নায়িকা হয়েই মরব।’
তিনি আরও লেখেন, ‘শ্রদ্ধেয় দিলীপ বিশ্বাস আমাকে একবার বলছিলেন, রত্না নায়িকারা নায়িকাই হয়। অভিনেত্রীরা অভিনেত্রী আর চরিত্রাভিনেত্রীরা চরিত্রাভিনেত্রী হয়। তুমি নায়িকা হয়ে গেছো, নায়িকাই থাকবা।’
নূতন যোগ করেন, ‘যদিও প্রয়োজনের তাগিদে বা অভিনয়ের লোভে আমি খলনায়িকা, মা, বোন হয়েছি। তবে মনে-প্রাণে, চলনে-বলনে আমি নিজেকে সবসময় নায়িকাই ভাবি। সেই ৮০/৯০ দশকের মতোই নিয়ম করে বেয়াম, খাওয়-দাওয়া ফিল্ম নিয়ে ভাবনা, গল্প নিয়ে চিন্তা- সব একই রকম আছে, শুধু শুটিং নেই।’
নূতন ঠাট্টাপ্রিয় মানুষ। সবসময় হাসিমুখে দেখা যায় তাকে। সবার সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রাখেন। কিন্তু তার মনের গভীরে জমে আছে বিশাল ক্ষোভ। তিনি চান না, মৃত্যুর পর তার লাশ এফডিসিতে আনা হোক।
গত মাসেই গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে নূতন জানান, ‘মৃত্যুর পর যাতে সবাই আমার স্মৃতি মনে রাখে, এ জন্য সবার সঙ্গে সহজভাবে চলাফেরা করি। আমার অভিনীত সিনেমার কথা হয়তো ভুলে যাবে, তবে আমার ব্যবহার থেকে যাবে সারাজীবন।’
মনের ক্ষোভে তিনি যোগ করেন, ‘আমি জানিয়ে দিয়েছি, মারা গেলে যেন এফডিসিতে আমাকে না নেওয়া হয়। আর কেউ যেন আমার জন্য মায়া কান্না না কাঁদেন।’
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে মূল থেকে পার্শ্ব প্রায় তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন নূতন। সত্তর-আশির দশকে সুজাতা, সুচন্দা, কবরী, শাবানা, ববিতার ভিড়ে তিনিও এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আলো ছড়িয়েছেন।
নূতনের অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘রাজনর্তকী’, ‘পাগলা রাজা’, ‘রাজলক্ষী শ্রীকান্ত’, ‘বসুন্ধরা’, ‘প্রাণসজনী’ ‘প্রেমবন্ধন’, ‘স্ত্রীর পাওনা’, ‘মানসী’, ‘রাজমহল’, অবিচার’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘বদলা’, ‘ননদভাবি’, ‘রাঙাভাবি’, ‘অলংকার’, ‘বদনাম’, ‘শাহজাদা’, ‘কন্যাবদল’, তাজ ও তলোয়া’, ‘কাবিন’, সোনার চেয়ে দামি, ‘ বাঁশিওয়ালা’, ‘সত্য-মিথ্যা’, পাহাড়ি ফুল, অশান্ত, ‘মালামতি’ ‘বাঁশিওয়ালা’, ‘আবদুল্লাহ’। প্রায় সব ছবিতেই বিশেষত্ব পেয়েছেন অপূর্ব নৃত্যশৈলীর কারণে। কীর্তনিয়া, শাস্ত্রীয়, কত্থক, ভারতনাট্যম, সর্পনৃত্য, বাউল, ফোক, আধুনিক, ওয়েস্টার্ন-চরিত্র অনুযায়ী নানা ধরনের নৃত্য সমাহারে তিনি আবির্ভূত হয়েছেন।