শিবব্রত গুহ, কোলকাতা, ভারত থেকে: বাংলা আমার তৃষ্ণার জল। বারেবারে এই কথা অনুভব করেছে দুই বাংলা’র অসংখ্য বাঙালি। তাই ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ করা হয় এই ভারত -বাংলা’র বুকেও। নিপুণ সেবায় ১২ মার্চ ২০২১ সেই কাজটাই করল কথামঞ্জরী-গড়িয়া। দিনটা শুক্রবার – পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমি সাক্ষী থাকল ভাষা পরব অনুষ্ঠানের। শুধুমাত্র একটা অনুষ্ঠান করার জন্য এই অনুষ্ঠান নয়। আগেও বহুবার “কথামঞ্জরী”-গড়িয়া কণ্ঠ নির্ভর শিল্পের নানা ফর্ম নিয়ে কাজ করেছে। এদিন ব্যতিক্রম। ঘড়ির কাঁটা যত এগিয়েছে ততই জোরালো ভাবে মাতৃভাষার প্রতি দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠা করেছে কথামঞ্জরী। সেই সঙ্গে বাংলা শিল্পকলার দুনিয়ায় নিজের নামটি স্থায়ীভাবে লিখে দিল এই নতুন কাব্যিক সংস্থা- সোনার হরফে।

কথামঞ্জরী -গড়িয়া’র কর্ণধার ও আহবায়ক সায়ন্তনী বসু বললেন, এই সংস্থার জন্মের পর থেকে আমরা কোনও পরিস্থিতিতে থেমে না থেকে প্রায় প্রতি মাসে কণ্ঠনির্ভর শিল্পের নানা ফর্ম নিয়ে কাজ ক’রে চলেছি। ১২ মাসে ১৩ পার্বণের মতোই বিভিন্ন বিষয়কে ধ’রে ধ’রে “কথামঞ্জরী” কাজ করে। মাতৃভাষা আমাদের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।তাই গুরুত্ব বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে অমর একুশে নিয়ে আলাদা ক’রে বলার কিছু নেই ! শুধুমাত্র কোনও বিশেষ দিনে নয়, সারাবছর মাতৃভাষার চর্চা কর্তব্য ও দায়িত্ব ব’লেও মনে করি। এই কারণে সীমিত সাধ্যের মধ্যে থেকেও “ভাষা পরব” নিয়ে কাজ করার তাগিদ অনুভব করি।

এদিন ২৭ জন কবি আবৃত্তিকার নানা ধরণের কবিতা পরিবেশন করেন। মাননীয় অতিথিবর্গের মধ্যে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড কলকাতার সভাপতি ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায় ও অধ্যাপক ইমামুল হক তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মাতৃভাষার গুরুত্বের কথা বলেন। সেই সঙ্গে তাঁদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় ভাষা বিভ্রাট নিয়ে আশঙ্কার কথা। একই ভাবে নিজেদের বক্তৃতার মধ্য দিয়ে ঋদ্ধ করেন বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশন, কলকাতা কার্যালয়ের পদাধিকারী জনাব মোহাম্মদ শামসুল আরিফ, জনাব রাসেল জমাদার । কণ্ঠশিল্পীগণের নানা ধরণের কবিতার মধ্য দিয়ে সভাকক্ষ অনুরণিত হয়। বিকেল থেকে সন্ধে গড়িয়ে গেলেও সভা ছিল শ্রোতাতে পূর্ণ। এদিন কণ্ঠশিল্পী তিয়াশা গুপ্ত পরিবেশন করেন কবিতা কোলাজ-“বাংলা আমার তৃষ্ণার জল”।

প্রাসঙ্গিক ভাবেই কবিতার বৈচিত্র ধরা পড়েছে তাঁর খসড়ায়। সেখানে স্থান পেয়েছে অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত থেকে অর্জুন চৌধুরীর কবিতা, আবৃত্তিকার দেবস্মিতা নাথের উপস্থাপনায় যথারীতি ছিল অভিনবত্ব। তাঁর কণ্ঠে ধরা পড়ল স্বাভাবিক মুন্সিয়ানা। এদিনও নতুন সম্ভাবনার কথা প্রকাশ পেল প্রতিম দাশের গলায়। অনন্যতার ছোঁয়া রেখে গেলেন সঞ্চিতা চট্টোপাধ্যায় ও নন্দিনী সরকার।
মহান ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক সূতিকাগার বাংলাদেশ থেকে কবি নজমুল হেলাল’র সংগ্রামী শুভেচ্ছা বার্তা…
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আমার স্মৃতি বিজড়িত কোলকাতা’র ‘কথামঞ্জরী- গড়িয়া’ অমর ২১শে স্মরণে ‘ভাষা পরব’ অনুষ্ঠানের সুপ্রিয় আহবায়ক, বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী সায়ন্তণী বসু’র আয়োজক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমাকে আমন্ত্রণ করায় আমি কৃতজ্ঞ। তাই কথামঞ্জরী-গড়িয়া’র সব্বাইকে ও উপস্থিত মাননীয় অতিথিবৃন্দ সহ দর্শক শ্রোতামণ্ডলীকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও সংগ্রামী রক্তিম শুভেচ্ছা। আমাকে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে সংযুক্ত করায় মূলত: কথামঞ্জরী-গড়িয়া বাংলাদেশকেই সম্মান জানিয়েছে তথা ভাষা শহীদদের প্রতি জানিয়েছে যথার্থ সম্মান ও শ্রদ্ধাঞ্জলি। এছাড়াও আনন্দিত যে, বাংলাদেশ এর উপ-হাইকমিশন এর কার্যালয় কোলকাতা আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু’র স্বপ্ন পূরণেও ভূমিকা রাখছে। অনাকাঙ্খিত করোনাকালীন সময়ে স্বশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারলেও আন্তরিক ও আত্মীকভাবে আমি আপনাদের সাথে আন্তরিক সঙ্গী নিরন্তর।
‘কথামঞ্জরী–গড়িয়া’ আমার ভালবাসা। বাংলাদেশ থেকে সাফল্য কামনা করি অনুষ্ঠানের এবং কথামঞ্জরী – গড়িয়া’র।
মায়ের ভাষা’র জয় হোক জগৎ জুড়ে সবখানে। দেখা হলে কথা হবে । ভালো থাকুন সব্বাই।
আপনাদেরই গুণমুগ্ধ কবি
নজমুল হেলাল
ঢাকা বাংলাদেশ।

গানে সুবর্ণা দে মজুমদার সকলকে আবিষ্ট করেন খানিকক্ষণের জন্য। এছাড়া অন্যান্য অংশগ্রহণকারীরাও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য -নিরুপমা মণ্ডল,গার্গা মুখোপাধ্যায়, নীলাব্রত সাহা, দোলন চাঁপা মৈত্র, সুমিতা পোদ্দার, রূপালি চৌধুরী, দোলন চাঁপা চ্যাটার্জি, চুমকি সরকার, চন্দ্রিমা চক্রবর্তী, পারমিতা মণ্ডল, টুটুন দাস, নন্দিনী সরকার, দৃসনা সাধু, কেয়া চৌধুরী, সুদেষ্ণা চ্যাাটার্জি দত্ত, সুবী চক্রবর্তী। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আশিস দাশগুপ্ত। প্রতিবারের মত এবারও তাঁর কণ্ঠের মাধুর্য শ্রোতাদের মুগ্ধ করে।

এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের বিশিষ্ট কবি নজমুল হেলালের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু অতিমারির কারণে তিনি উপস্থিত থাকতে না পারলেও আত্মিকভাবে উপস্থিতির স্মারক হিসেবে এক শুভেচ্ছাবার্তা পাঠান। উক্ত অনুষ্ঠানে কবির পাঠানো শুভেচ্ছাবার্তাটি পাঠ করেন কথামঞ্জরী – গড়িয়া’র কর্ণধার ও আহ্বায়ক বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী সায়ন্তনী বসু।