মো:মোস্তফা কামাল মিন্টু
স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, প্যাকেজ নাটক, ধারাবাহিক নাটক, বিজ্ঞাপন ও ওয়েব সিরিজে সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন রোমানা স্বর্ণা। বেশ কিছু কাজে দর্শকদের ব্যাপক প্রশংসাও পেয়েছেন এই গ্ল্যামার কন্যা। তবে বিনোদন জগতে শিল্পীদের প্রপার ইউটিলাইজ করা হয় না বলে তিনি মনে করেন।
সম্প্রতি রোমানা স্বর্ণা এক সন্ধ্যায় এসেছিলেন পাক্ষিক প্রবাস মেলা কার্যালয়ে। করোনাকালীন মিডিয়ার অবস্থা, নিজের ভবিষ্যত ভাবনাসহ নানান বিষয় ওঠে আসে তার সাথে আলাপচারিতায়। সেসবের চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

২০০৬ সালের শেষের দিকে মডেলিংয়ের মাধ্যমে শোবিজ জগতে আসেন স্বর্ণা। মূলত টিভি পর্দায় অভিনয়ের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি।
চলমান মহামারি কোভিড-১৯ এর সময় অনেক অফার আসলেও কাজে মনোযোগ দিতে না পারায় অভিনয় কমিয়ে দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
প্রাণ টোস্ট, নিপুনের বিলবোর্ডে মডেলিংয়ের মাধ্যমে মিডিয়ায় পথচলা শুরু রোমানার। এরপর ইগলু, রুচি, বসুন্ধরা আবাসিক থাই গ্লাস, কেএনবি ফিড, এক্সিলেন্ট তুলসি জুস, কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালের বিজ্ঞাপন চিত্রের মডেলিংয়েও কাজ করেছেন এ গ্ল্যামার কন্যা।

মিডিয়া প্রফেশনে আসা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমি শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী। পড়াশোনার জন্য সেই সময় শোবিজ জগতে প্রবেশ না করলেও গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে আমি কাজ শুরু করি।’
নির্মাতা ও অভিনেতা সালাহউদ্দিন লাভলু পরিচালিত তুমুল জনপ্রিয় কমেডি নাটক ‘হাড়কিপটে’ যারা দেখেছেন তাদের কাছে রোমানা স্বর্ণার মুখটি বেশ পরিচিতি।
‘আলতা সুন্দরী’, ‘একদিন প্রতিদিনি’ সহ অসংখ্য প্যাকেজ এবং ধারাবাহিক নাটকে তিনি অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।
নতুন বছরের জন্য সাত পর্বের ‘ভাইরাল ভিডিও’ নামে একটি নাটকে কাজ করেছেন বলে জানান। যেটি শীঘ্রই একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হবে।

বেশ কিছু সিনেমাতেও কাজ করেছেন স্বর্ণা। ২০০৭ সালে অনিকেত আলম পরিচালিত ‘আউট অফ দ্য বক্স’ সিনেমায় তিনটি ভিন্ন-ভিন্ন ক্যারেক্টারে অভিনয় করেন তিনি।

২০১৫ সালে তন্ময় তানসেনের ‘পদ্ম পাতার জল’ ২০১৬ সালে একই পরিচালকের ‘রান আউট’ সিনেমায় তিনি হিরোইন চরিত্রে অভিনয় করেন। বর্তমানে ‘দুরত্ব’ নামে একটি সিনেমায় কাজ করছেন বলে এ গুণী অভিনেত্রী জানান।

দর্শকদের নিকট অতি জনপ্রিয় কয়েকটি ওয়েব সিরিজেও কাজ করেছেন রোমানা। ২০১৯-২০ সালে শহীদুন্নবীর ‘আমাদের সংসার’, মাবরুর রশিদ বান্নার ‘স্টুপিডস’ এ অভিনয় করেন তিনি।
এছাড়া মাবরুর রশিদ বান্নার ‘পয়েন্ট অব ভিউ’ এবং এসএম মনিরের ‘পুরুষ পতিতা’ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে কাজ করেও প্রশংসা কুড়িছেন এই সুহাসিনী অভিনেত্রী।
একজন শিল্পী হিসেবে সামাজিক দায়বদ্ধতা বিষয়ে রোমানা বলেন, আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় শিল্পীদের নেগেটিভ দৃষ্টিতে দেখা হয়। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়, কেউ মারা গেলে যেমন অনেক ভালো ভালো কথা লেখা হয়, একইভাবে বেঁচে থাকতেই তাদের জন্য কিছু করা উচিত। শিল্পীদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমাদের সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে।

যার ভিতরে শিল্প আছে তাদের মন অনেক উদার হয় জানিয়ে রোমানা বলেন, আমাদের দেশে এটা অনেকেই বুঝতে চায় না। যে কারণে শিল্পীদেরও এ বিষয়টি নিয়ে অনেক ভুগতে হয়। বাংলাদশের বর্তমান মিডিয়ায় অবস্থা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে রোমানা বলেন, আমাদের মিডিয়ার ভবিষ্যত কি হবে এক সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ বলতে পারবে না।
‘বাজেট কম, হাতেগোনা কয়েকজন শিল্পী নিয়ে কাজ করা হচ্ছে, দর্শক এটা আর কতদিন গ্রহণ করবেন’? প্রশ্ন রেখে বলেন তিনি।

রোমানা বলেন, দেশে অনেক শিল্পী থাকলেও তাদের প্রপার ইউটিলাইজ করা হয় না। বর্তমানে সেই পরিবেশ নেই বলেও তিনি মনে করেন।
নির্দিষ্ট কোনো চরিত্রের প্রতি দুর্বলতা নেই জানিয়ে স্বর্ণা বলেন, গ্ল্যামারাস এবং ক্যারেক্টারিস্টিক উভয় চরিত্রেই অভিনয় করতে আমি পছন্দ করি।
তিনি ন্যাচারাল থাকতে পছন্দ করেন। বেশির ভাগ সময় ম্যাকআপ ছাড়া থাকতে তার ভালো লাগে।

মানুষের গুণ- যারা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড এবং কমিটমেন্ট ঠিক রাখতে পারেন না তাদের তিনি পছন্দ করেন না।
প্রবাস মেলা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এই টিভি অভিনেত্রী বলেন, এটি সম্পূর্ণ ডিফারেন্ট একটা পত্রিকা। প্রবাসী বাংলাদেশিদের নানা প্রয়োজনীয় বিষয় তুলে ধরার পাশাপাশি দেশের শিল্পীদেরও অনেক হাইলাইট করা হচ্ছে। আমি পত্রিকাটির সাফল্য কামনা করি এবং এর কলাকুশলীদের ধন্যবাদ জানাই।