ওমর ফারুক হিমেল, সিউল, দক্ষিণ কোরিয়া: দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তিন দিনের সফরে আগামী ১৩ জুলাই ঢাকায় আসছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী লি নাক-ইয়োন । বিশ্বের ১২তম ও এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ কোরিয়া বিশ্ব পরিমন্ডলে রপ্তানির ক্ষেত্রে ৫ম স্থান এবং আমদানির ক্ষেত্রে ৮ম স্থান দখল করে আছে।
২০১৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার মোট রপ্তানির পরিমান ছিল ৬০৫.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মোট আমদানির পরিমান ছিল ৫৩৫.২ বিলিয়ন ডলার, সত্তর দশকের শুরু থেকে দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহযোগিতা করে আসছে।
বন্ধু প্রতীম এ দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা। দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ গুলোর বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ভারত ব্যতীত বাণিজ্য সম্পর্ক এতটা জোরালো নয়। তবে আশার কথা এই যে ধীরে ধীরে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান পঞ্চম। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে যেখানে বাংলাদেশ থেকে কোরিয়ায় রপ্তানির পরিমান ছিল ২২.৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ২৫৪.৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৮ সালে জানুয়ারিতে বাংলাদেশ দূতাবাস দক্ষিণ কোরিয়ায় বাণিজ্যিক উইং স্থাপনের পর থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় বিভিন্ন ব্যবসা ও বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের সাথে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনের যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এপ্রিল ২০১৯ পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমান রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র হিসাবমতে দাঁড়িয়েছে ৩১৭.৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আশা করা যায় এ অর্থবছর শেষে রপ্তানির পরিমান ৩৫০.০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। দূতাবাসের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা বাংলাদেশের ব্যবসা ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অর্জিত সক্ষমতা কোরিয় ব্যবসায়ীদের কাছে তুলে ধরার লক্ষ্যে বাংলাদেশ দূতাবাস সার্বক্ষণিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
নিজেদের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে তিনদিনের সরকারি সফরে আগামী ১৩ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই বাংলাদেশে আসছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী লি নাক-ইয়োন।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ কোরিয়া এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রদ্বয়ের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অনেক পুরোনো, বাংলাদেশ সেই সকল দেশের একটি, যারা কিনা উভয় কোরিয়ার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। ১৯৭৩ সালে ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অব কোরিয়া সঙ্গে সরকারিভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এর দুই বছর পরে ১৯৭৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়া রাজধানী ঢাকায় তার দূতাবাস খোলে ।
বলাবাহুল্য, ১৯৭২ সালের দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করে। ঢাকায় কোরিয়ার কূটনৈতিক মিশন প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৫ সালের মার্চে এবং বাংলাদেশ কোরিয়ায় হাইকমিশন স্থাপন করে ১৯৮৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। দক্ষিণ কোরিয়া ইতোমধ্যেই এ অঞ্চলের অন্যতম অর্থনৈতিক পরাশক্তিতে পরিণত হয়েছে।
এই সফরে দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো মজবুত ও শক্তিশালী হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন কোরিয়া বাংলাদেশি প্রবাসীরা। এই সফরে দক্ষিণ কোরিয়া একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলও থাকবেন বলে জানিয়েছেন দূতাবাস সূত্র।
এই দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের সাথে বৈঠক করবেন। উভয় বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট, ঢাকার সাথে সিউলের বাণিজ্য সম্প্রসারণ সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু
গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বলাবাহুল্য, ২০১০ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিউলে আসার প্রায় ৯ বছর পর কোরিয়ার কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ঢাকায় রাষ্ট্রীয় সফর।