ওয়াসীম আকরাম, বৈরুত, লেবানন প্রতিনিধি: মুছে যাক গ্লানি, মুছে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা। সব গ্লানি ও ব্যর্থতাকে অতিক্রম করে শুভ, কল্যাণ ও মঙ্গলের প্রত্যাশায় শুরু হলো নতুন বঙ্গাব্দ ১৪২৬। শুভ নববর্ষ’ বাঙালির সহস্র বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, রীতি-নীতি, প্রথা, আচার অনুষ্ঠান ও সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক বলা যায়। তাইতো বাঙালি জাতি পহেলা বৈশাখটিকে সর্ববৃহৎ উৎসব মনে করে বিশ্বাসের সহিত এ দিনকে পুরনো বছরের সকল ব্যর্থতা, নৈরাশ্য, ক্লেদ-গ্লানি ভুলে গিয়েই যেন মহানন্দে নতুন বছরটিকে বরণ করে নেয় এবং সুখ ও সমৃদ্ধির আশায় নবজীবন প্রাপ্তির কামনা করে।
বাঙালিদের যে সকল ঐতিহ্যকে নিয়ে উৎসব এবং অনুষ্ঠান হয় তা গণমানুষের আত্মার মিলনমেলারই প্রধান হচ্ছে এই বাংলা নববর্ষ। তাইতো সুপ্রাচীনকালেও পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতি শুভ নববর্ষটিকে উৎযাপনে ব্যস্ত ছিল। এখন এসে হয়তো বা একটু বেশীভাবেই পালন করছে।
লেবাননেও বিপুল উৎসাহ -উদ্দীপনা আর উৎসবে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হল ঐতিহ্যবাহী বাংলার বৈশাখী উৎসব “বাংলা নববর্ষ ১৪২৬”। লেবাননের বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে ২৮ এপ্রিল রবিবার লেবানন বৈরুতে জিব্রান এন্ড্রাউস টুয়েনি পাবলিক স্কুল মাঠে বৈশাখী অনুষ্ঠানকে ঘিরে প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রদচারণায় এ যেন আরেক রমনাবটমূলে পরিণত হয়।
দিনব্যাপী আয়োজন করা হয়েছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বৈশাখী মেলা। মেলায় ছিল নানা পদের মুখরোচক খাবারের পাশাপাশি রকমারি পণ্যের স্টল, যা চোখে পড়ার মতো। দূর-দূরান্ত থেকে শতশত প্রবাসী রঙ-বেরঙের শাড়ি, পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ পরে ছুটে আসেন বৈশাখী মেলা উপভোগ করার জন্য।
বাংলাদেশে ১৪ এপ্রিল (পহেলা বৈশাখ) পালিত হলেও দূতাবাসের কর্মব্যস্ততার কারণে ২৮ এপ্রিল লেবাননে উদযাপন করা হয়। বাংলাদেশ ও লেবাননের জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুভ বাংলা নববর্ষ ১৪২৬ উদযাপনের এ উৎসবে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি, লেবাননে নিযুক্ত বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তা, লেবানন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রথম সচিব (শ্রম) ও দূতালয় প্রধান আব্দুল্লাহ আল মামুনের পরিচালনায় বাংলাদেশ সরকারের নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকারের স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বাংলা নববর্ষ ধর্ম–বর্ণ–গোত্র নির্বিশেষে সবার এক বর্ণিল উৎসব। বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন বাংলাদেশের একটি স্বকীয় ও সেক্যুলার পরিচয় তুলে ধরে বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রবাসী বাংলাদেশিসহ আগত অতিথিদের নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে সকলকে আনন্দ সহকারে অনুষ্ঠান উপভোগ করার আহ্বান জানান।
সূচনা সংগীত হিসেবে শুরুতেই বাংলাদেশ থেকে আগত শিল্পীরা ‘এসো, হে বৈশাখ, এসো, এসো’ গানটির সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন, যা উৎসবের আমেজকে প্রাণবন্ত করে তোলে। পরে বাংলাদেশ থেকে আগত প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী আগুন, অনিমা গোমেজ ও কৃতিসহ ১০ সদস্যের একটি সাংস্কৃতিক দল নাচ ও গান পরিবেশন করে।
এছাড়া লেবাননের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী ‘তারা মালুফ’ বাংলা ভাষায় তিনটি গান পরিবেশন করে হল ভর্তি দর্শক শ্রোতাদের ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। বৈরুত দূতাবাসের পাশাপাশি অনুষ্ঠানটির সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও শিল্পকলা একাডেমি। অবশেষে আমন্ত্রিত অতিথিসহ প্রবাসী বাংলাদেশিদের দূতাবাস থেকে দেশীয় খাবার পরিবেশনের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।