অ্যাডভোকেট ইফফাত আরা, লন্ডন, যুক্তরাজ্য: বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বাহারি পিঠা আমাদের সংস্কৃতির অংশ। শীত মানেই পিঠা-পুলির আয়োজন। খাওয়ার সাথে দেখার মজাও কম নয়। পরিচিতি ঘটে নানান রকম ও স্বাদের পিঠা-পুলির সাথে। বাংলাদেশি লোক ইতিহাস-ঐতিহ্যে পিঠা-পুলির গুরুত্ব ভূমিকা পালন করে আসছে বহুকাল ধরে। এটি লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতিরই বহিঃপ্রকাশ।

শীতের আমেজে বাংলার ঘরে ঘরে পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। প্রবাস জীবনে অনেক ব্যস্ততার মধ্যে ঘরে পিঠা তৈরি করে খাওয়া হয় না অনেকেরই। অনেকেই ভুলতে বসেছেন মায়ের হাতে তৈরি পিঠার স্বাদ।
শত ব্যাস্ততার মাঝেও প্রবাসে নতুন প্রজন্ম যেন আমাদের এই সংস্কৃতিকে ভুলে না যায় সে কারণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও বর্ণাঢ্য সব আয়োজনের মধ্য দিয়ে নটিংহ্যামে ২০ জানুয়ারি স্থানীও গ্রীনওয়ে সেন্টারে আয়োজন করা হয়েছিল ইংরেজি নতুনবর্ষ উৎযাপন উপলক্ষে উপভোগ্য একটি পিঠা মেলার। অনুষ্ঠানের আয়োজক ইতালিয়ান বাংলাদেশি ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন নটিংহ্যাম ইউকে।
হরেক রকম পিঠার পসরা নিয়ে বসেছিল পিঠা মেলা। শুরু থেকেই ভিড় করেছে তরুণ-তরুণী আর পিঠা রসিকরা। কত নামের পিঠা পুলি তার ইয়াত্তা নেই। বাহারি নামের এসব পিঠা কিনতে ভিড় করছে ক্রেতারা। বাড়িতে এতো সব পিঠা তৈরি করার ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতেই এখান থেকে পিঠা বাসায় নিয়ে যেতে দেখা যায় অনেককেই।

পিঠা মেলায় প্রধান অতিথি ঢাকা থেকে আগত শাপলা সিটি লিঃ এর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মোঃ বদরুদোজ্জা বলেন, সাধারণত পিঠা শীতকালের রসনাজাতীয় খাবার হিসেবে অত্যন্ত পরিচিত।আমি নিজেই একজন পিঠার পাগল। কিন্তু বাংলাদেশই শহুরে জীবনে গ্রামীণ ঐতিহ্যের অনেক কিছুই এখন বিলুপ্তির পথে। অথচ সুদূর ব্রিটেনে এতো পিঠার সমাহার দেখে আমি সত্যিই অবিভুত। তিনি বলেন ,আমি জোর গলায় বলতে পারি বাংলাদেশিরা পৃথিবীর যেখানেই থাকুক তারা তাদের ঐতিহ্য কোনদিনও বিলুপ্তি হতে দেবে না। তারই জলন্ত প্রমান আজকের এই পিঠা মেলা ।
ইতালিয়ান বাংলাদেশী ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন নটিংহ্যাম ইউকে’র সাধারণ সম্পদক শাহীন খান বলেন, এই প্রথম আমরা ছোট্ট পরিষরে এ মেলার আয়োজন করেছি। তবে আগামীতে একটু ভিন্নভাবে বৃহৎ পরিসরে করার ইচ্ছা আছে । এবারে মহিলা ও নতুন প্রজন্মকে অন্তর্ভুক্ত করেছি বেশি; যাতে তারা নিজ উদ্যোগে ভালো কিছু করতে শেখে, বাইরের ফাস্ট ফুডের দিকে না ঝুঁকে, নিজেদের ঐতিহ্যবাহী খাবার নিজেরা তৈরী করে খায় এবং অপরকে শেখায়।

সংগঠনের সিনিয়র সহ সভাপতি মালেক সরদার বলছেন, পরীক্ষামূলকভাবে পিঠার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেই ছিল এই পিঠা মেলা। বিভিন্ন নামধারী এসব পিঠার নাম হয়ত অনেকের জানা নেই, তাই রান্না করে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এসব পিঠা পরিবেশন করে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেয়াই মেলার উদ্দেশ্য । মেলায় দক্ষতা দেখিয়ে রকমারি পিঠা পরিবেশন করতে পেরে আনন্দিত অংশগ্রহণকারীরাও।
শাপলা সিটির স্পন্সরে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হয় মনোমুগন্ধকর সংগীতানুষ্ঠান। এতে অংশ নেন বিলেতের গানের পাখি কাজী কল্পনা,আমির খান এবং কফি মাহমুদ।
সাইফুল ইসলামের পরিচালিত পিঠা মেলা ও সংগীতানুষ্ঠানে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন কমিউনিটির বিশিষ্টজনেরা। এদের মধ্যে আমির হোসেন, নাসির ব্যাপারী, রফিক, আনিস খান, মাহবুব মিয়া, রনি আহমেদ, মোশারাফ দিপু, কামাল হাওলাদার, নাজমুল হোসাইন, আব্দুল মজিদ, মনির ব্যাপারী, আনোয়ার, কুদ্দুস, রুহুল আমিন, হোসাইন মাহমুদ, অতুল জসিম, সরোয়ার হোসেন টিটো, মশিউর রহমান, মাসুদ খান ও মাসুম পেদা উল্লেখযোগ্য।

শেষে রাফেল ড্র ও শাপলা সিটি কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন ইতালিয়ান বাংলাদেশী ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন নটিংহ্যাম ইউকে’র সভাপতি আনোয়ার মৃধা ও সংগঠনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সম্পূর্ণ অনুষ্ঠান জুড়েই ছিলো দর্শকদের সরব উপস্থিত। শিল্পীদের সুরেলা পরিবেশনায় মুগ্ধতায় ও পিঠা খাওয়ার আমেজ নিয়ে বাড়ি ফেরেন শ্রোতারা।