মোঃ জাহাঙ্গীর আলম হৃদয়
দিন যায়, রাত যায়, কেটে যায় সব অনাথের সাজে –
আমি বসে আছি দূর প্রবাসে,
বাবা ফিরে আসবে বলে
সবাই ফিরে আসে, কই বাবা ফিরে আসেনা,,,
দাদা, দাদি, নানা, নানি, ফুফা, ফুফি সবাই গেল
কেউ ফিরে আসেনি, অবশেষে বাবা গেলেন
তিনিও ফিরেনি-ঈদ ফিরে এসেছে।
প্রিয় বন্ধুরা, একটি পরিবারের সুখ-শান্তির জন্য বাবা নামক মানুষগুলো ছুটে চলেন ক্লান্তহীনভাবে, আয় রোজগার করে এনে তা তুলে দেন সংসারের মূল চালিকাশক্তি সুখ দুঃখের প্রধান মা নামক নারীর হাতে, যিনি সন্তানের লেখা পড়া, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া, প্রতিবেশি সবাইকে মোকাবিলা করেই সংসার এগিয়ে নেন।
আমাদের পরিবারে আমরা ৩ বোন, ৫ ভাই, বাবা, মামা সহ ১০ জন তার সাথে আত্মীয় স্বজন-সবাইকে সুখে রাখার জন্য বাবা একাই লড়াই করে চালিয়েছেন, সরকারি একজন কর্মকর্তা ছিলেন, মাস শেষে বেতন আর যে রেশন পেতেন তাই দিয়েই কাটিয়েছেন জীবনে অনেক আনন্দে।
বাবার সাথের অনেক বন্ধু রাতারাতি বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন, অনেকেই সম্পদের মালিক হয়েছেন, বাবার সাথে চট্টগ্রামে টেকনিক্যাল সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারে ছিলাম আমি, আমার বাবা সবসময় বলতেন, আদর্শ গত শিক্ষা জীবন, অন্যের উপকার, সততার সাথে জীবন-যাপন, হালাল ইনকাম, নামাজ, রোজা সহ সকল ভালো কাজের সাথে থাকার নামই জীবন।
তুমি অসৎ উপায়ে হয়তো অনেক কিছু করতে পারবে, তবে তা মনের সুখ এনে দিবে না, যত পাবে, মন চাইবে আরও কিছু করি।
আর তুমি যদি সৎ উপায়ে আয় করে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে পারো তবেই তুমি সফল।
মনে রাখবে – ফুল ঝরে রেখে যায় বৃতি, আর মানুষ মরে যায়, রেখে যায় স্মৃতি।
বাবার শেখানো কথাগুলো পুজি করেই আমরা ভাই, বোন সবাই চলছি সেই পথে। আজ সবাই যার যার জায়গায় আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। অনেক টাকা, বা অনেক সম্পদ নেই, আমাদের সকলের মাঝে আছে একে অন্যের প্রতি সম্প্রতি, ভালোবাসা আর আন্তরিকতা। ঈদ এলেই বাবা সকলের জন্য কিছুনা কিছু ঈদ উপহার দিতেন, নিজের জন্য কিছুই কিনতেন না, তখন আমরা কেউ বুঝতে পারিনি বাবা নিজের জন্য না কিনে, ঈদ উপহার হিসাবে নতুন জামা কাপড় আমাদের দিয়েছেন, আমরা নতুন জামা হাতে পেয়ে আনন্দে ভুলে গেছি সব, কেউ বলিনি বাবা তোমার জন্য কি কিনেছো। মা জিজ্ঞাসা করলে বলতেন মুঁচকি হেসে আমার আছে, ও নিয়ে তোমাদের ভাবতে হবেনা।
বাবা সবই করেছেন, সবই বলেছেন, বাবাকে যখন আমরা একটু সুখ শান্তিতে রাখার চিন্তা করেছি তখনই মহান আল্লাহর হুকুমে বাবা চলে গেলেন না ফেরার দেশে, যেখান থেকে আর ফিরে আসবেনা। আজ চিৎকার দিয়ে কান্না করতে ইচ্ছে করে বাবা, বাবা বলে। ঈদ উপহার আর নতুন জামা ক্রয় করার ক্ষমতা হলেও, বাবার জন্য উপহার দিতে পারিনা, বাবা যে আমাদের পাশেই ঘুমিয়ে আছে নিঝুম নিরালায়, ডাকলেও ঘুম ভাঙ্গবে না। বাবাহীন ঈদ যে কত কষ্টের তা আমার মত জারাই বাবাকে হারিয়েছেন, শুধু কেবল তারাই বুঝবেন, বাবা হলেন একটি পরিবার ও সন্তানের জন্য বটবৃক্ষ ছায়া।
যে সকল সন্তান বাবাকে অন্তর থেকে ভালোবাসতে পারেনি তারা বুঝবেনা বাবা কি। আজ নিজেও বাবা হয়েছি, সন্তানের কথা প্রতি ক্ষন দূরপ্রবাসে বসে মনে পড়ে।
বাবাকে নিয়ে লিখলেও শেষ হবেনা, আর মায়ের কথা তো বলে, লিখেও শেষ করা যাবেনা। শুধু সকলের প্রতি একটিই দাবি ও অনুরোধ বাবাকে, ভালো বাসুন, মায়ের খেদমত করুন, তাদের সম্মান দিন, তাদের যত্ন নিন, সন্তানের জন্য তারাই পীর, ঘরে পীর রেখে অন্যকে পীর মেনে অভিশপ্ত জীবন পরিহার করুন। বাবা, মায়ের চাইতে বড় আপন আর কেও হবেনা, হয়না, হতে পারেও না।
হে আল্লাহ আমার মতো যাদের বাবা দুনিয়ায় বেচে নেই তাদের জান্নাতবাসী করুন। আমিন
(লেখক পরিচিতি: প্রবাসী সাংবাদিক, লেখক, মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ অফিসার – রিয়াদ বাথা ঢাকা মেডিকেল সেন্টার, মার্কেটিং ডিরেক্টর প্রবাসী সেবা কেন্দ্র (A2i) -EDC- সৌদি আরব)।