রেহানা পারভীন, বিশেষ প্রতিনিধি: বিশ্বব্যাপী সুবিধা বঞ্চিত দুস্থ ও অন্ধ শিশুদের কল্যাণে নিবেদিত সংগঠন ডিসট্রেসড চিলড্রেন এন্ড ইনফ্যান্টস ইন্টারন্যাশনাল (ডিসিআই) ও রাইটস এন্ড সাইট ফর চিলড্রেন (আরএসসি) এর কনসার্ট উপলক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। কনসার্টটির নাম দেয়া হয়েছে ‘Child Rights Awareness Concert’. আগামী ১৯ এপ্রিল, শুক্রবার বিকাল ৫.৩০ মিনিটে রাজধানীর ফার্মগেটস্থ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ অডিটরিয়ামে এই কনসার্ট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ উপলক্ষ্যে গুলশানে অবস্থিত হোটেল ট্রপিক্যাল ডেইজি কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে এই কনসার্টের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সাংবাদিকদের জানান এর মূল উদ্যোক্তা ডিসট্রেসড চিলড্রেন এন্ড ইনফ্যান্টস ইন্টারন্যাশনাল এর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক, ড. এহসান হক।

তিনি সংবাদ সম্মেলনে আগত অতিথিদের সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ডিসিআই-আরএসসি শিশুশ্রম রোধ, শিশু অধিকার সুরক্ষা ও অন্ধত্ব নিবারনের লক্ষ্যে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা একটি সচেতনতামূলক ‘চাইল্ড রাইটস অ্যাওয়ারনেস কনসার্ট’ এর আয়োজন করতে যাচ্ছি। এই সংগঠনটি পরিচালনা করতে যারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের সবাইকে তিনি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। সাথে সাথে কনসার্টটি সফল করতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, স্বনামধন্য গায়িকা ও ডিসিআই’র গুডউইল এম্বাসাডর সাবিনা ইয়াসমিন, স্বনামধন্য গায়ক হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল, হোটেল ট্রপিক্যাল ডেইজি’র চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর খান, টিভি উপস্থাপক ও আবৃত্তিকার মামুন ইমতিয়াজ, প্রখ্যাত নিউজ প্রেজেন্টার রেহানা পারভীন, প্রবাস মেলা পত্রিকা’র সম্পাদক শরীফ মুহম্মদ রাশেদ, ডিসিআই সহ অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। শেষে অতিথিদের জন্য মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করা হয়।
ডিসিআই’র প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক ডা. এহসান সম্পর্কে কিছু কথা:

ডা. এহসান হক ১৯৬৪ সালে বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ড. এ. এন সামসুল হক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত থাকায় তার শৈশব ও কৈশোর সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই কাটে। ডা. এহসান হক শিশু অধিকার রক্ষায় একজন নিবেদিত প্রাণ। যিনিপ্রায় অন্ধ (জন্মগত ছানি) অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ৫ বছর বয়সেই ৭ বার দুই চোখেই অস্ত্রপাচার করা হয়। ডাক্তারের নিষেধ থাকা সত্ত্বেও তার লেখাপড়া চলে এবং প্রতিটি ধাপেই তিনি অত্যন্ত সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হন। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হতে ডাক্তারী পড়া সম্পন্ন করে জাপান ও কানাডায় উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের জন্য যান এবং ১৯৯৫ সালে জাপান হতে ডক্টরেট ডিগ্রি ও ১৯৯৭ সালে কানাডার ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন অন্টারিও থেকে পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশিপ অর্জন করেন। দেশে-বিদেশে তিনি বিভিন্ন পপ্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন যেমন: রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, আসাহীকাউয়া মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি (জাপান), ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন ওন্টারিও (কানাডা), ইউনিভার্সিটি অফ টরেন্টো (কানাডা) এবং বর্তমানে আমেরিকার ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত আছেন। তিনি তার চোখের জন্য জীবনে অনেক বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। দৃষ্টিহীনতার বৈষম্য মোকাবেলা করার অভিজ্ঞতা ও বাংলাদেশের শিশুদের দরিদ্রতা তিনি নিজে চোখে দেখে, এই সকল দুঃস্থ শিশুদের সহযোগিতা ও শিশু অন্ধত্ব-প্রতিরোধ করার জন্য তিনি একটি প্রতিষ্ঠান তৈরী করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
২০০৩ সালে তিনি আমেরিকার ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত অবস্থায় ডিসট্রেসড চিলড্রেন এন্ড ইনফ্যান্টস ইন্টারন্যাশনাল এর প্রতিষ্ঠা করেন। যেটি হাজার হাজার সুবিধা বঞ্চিত শিশু ও তাদের পরিবারকে সহযোগিতা প্রদান করছে।
বর্তমানে তিনি আর্তমানবতার সেবায় বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত করছেন এবং তিনি ইয়েল ইউনিভার্সিটিতেআই হেলথ রিসার্চ প্রজেক্টে ড. ব্রায়ান এর সাথে কর্মরত আছেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন প্রতিবন্ধী ও মানব অধিকার উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠানের শুভেচ্ছা দূত ও এ্যাডভাইজার হিসাবে কাজ করছেন।
ড. এহসান হক মানবতার সেবার কারণে দেশে বিদেশে বিভিন্ন সম্মাননা ও হিউম্যানিটেরিয়ান এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। যেমন: Bangladesh Medical Association of North America (BMANA), ATN Bangla Television, All European Bangladesh Association (AEBA), Federation of Bangladesh Chambers of Commerce and Industry (FBCCI) এবং Rajshahi Medical College in Bangladesh.
ড. এহসান হক ডিসিআই এর ক্ষেত্রকে আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশ যেমন- অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, কানাডাও ইউরোপ এর বিভিন্ন দেশে প্রসারিত করে প্রবাসী বাঙালীসহ অসংখ্য মানুষকে এই মানবতার সেবায় সংযুক্ত করেছেন।