প্রবাস মেলা ডেস্ক: সম্প্রতি ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা, লেখক খায়রুল আলম সবুজ। সেখানে প্রবাস মেলা’র নির্বাহী সম্পাদক শহীদ রাজুও অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান বিরতির এক ফাঁকে খায়রুল আলম সবুজের সাথে শহীদ রাজু কথা বলেন এবং তার হাতে প্রবাস মেলা’র সৌজন্য কপি তুলে দেন। প্রবাস মেলা হাতে পেয়ে খায়রুল আলম সবুজ বলেন, পত্রিকাটি আমি নিয়মিত পাই এবং পড়ি। আমি এর দীর্ঘ পথচলা কামনা করি।

উল্লেখ্য, খায়রুল আলম সবুজ একাধারে একজন অভিনেতা, লেখক ও অনুবাদক। মঞ্চাভিনয়ের মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করা সবুজ পরবর্তী কালে টেলিভিশন নাটকে নিয়মিত হন। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি সাহিত্যচর্চার সাথেও জড়িতে। খায়রুল আলম সবুজ ১৯৪৯ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার পূর্ব নারায়ণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে করাচির বাংলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৬৯ সালে বাংলা কলেজ উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে ১৯৭২ সালে স্নাতক সম্মান এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
১২ বছর বয়স থেকে বরিশালে থাকাকালীন অভিনয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন খায়রুল আলম সবুজ। তখন মঞ্চদল করে নাটকে অভিনয় করতেন। তার অভিনীত প্রথম মঞ্চ নাটক ছিল ‘সূর্যমুখী’। এরপর পড়াশোনা করতে পাকিস্তানের করাচিতে চলে যান। সেখানে গান এবং অভিনয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পিটিভিতে (পাকিস্তান টেলিভিশন) তাকে ১৯৭০ সালে প্রথম গান গেয়েছেন। ১৯৭১ সালের ১৮ মার্চ খায়রুল আলম সবুজ ঢাকায় চলে আসেন। এসে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে। সেখানে ম. হামিদের সঙ্গে ডাকসু নাটক বিভাগ ‘নাট্যচক্র’ গড়ে তোলেন। ম. হামিদ ছিলেন সভাপতি আর সবুজ ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ‘নাট্যচক্র’র মাধ্যমেই তার কর্মজীবন শুরু হয়। এরপর তিনি ‘থিয়েটার’-এ যোগ দেন। এই দলের হয়ে মঞ্চে ২২ বছর অভিনয় করেছেন। থিয়েটারের হয়ে খায়রুল আলম সবুজ অভিনয় করেছেন ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘এখানে এখন’, ‘ওথেলো’, ‘সেনাপতি’সহ আরও বেশকিছু নাটক। এই দলের হয়ে তিনি নিদের্শনা দেন নিজেরই অনুবাদ করা নাটক ‘আন্টিগোনে’। এটি একটি ফরাসি নাটকের অনুবাদ ছিল। বাংলাদেশ টেলিভিশনে সবুজ প্রথম অভিনয় করেন প্রয়াত আতিকুল হক চৌধুরী পরিচালিত ‘জলের রঙ্গে লেখা’ নাটকে। টিভিতে তার অভিনীত প্রথম ধারাবাহিক নাটক ছিল ‘ঢাকায় থাকি’। তবে চলচ্চিত্রে এই বরেণ্য অভিনেতাকে খুব কমই দেখা গেছে। পুনে ইন্সটিটিউট থেকে নির্মিত ‘উজান’ চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। এরপর ‘ছাড়পত্র’ নামক একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রেও তিনি অভিনয় করেন। বেলাল আহমেদের ‘নন্দিত নরকে’, সালাহউদ্দিন লাভলুর ‘মোল্লাবাড়ীর বউ’ চলচ্চিত্রেও তাকে অভিনয় করতে দেখা গেছে। তবে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে চলচ্চিত্রে অভিনয় করাটা তাকে মন থেকে খুব বেশি সায় দেয়নি বলেই সেখানে তার উপস্থিতি কম। তবে তিনি বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এর মধ্যে রয়েছে নদীর নাম মধুমতী, মোল্লা বাড়ীর বউ, নন্দিত নরকে, মেহেরজান, শোভনের স্বাধীনতা, হরিযূপীয়া, ভয়ংকর সুন্দর, কারণ তোমায় ভালোবাসি, রূপসা নদীর বাঁকে।

২০১৪ সালে গুণী এ অভিনেতা মীর সাব্বির পরিচালিত আরটিভির দর্শকপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘নোয়াশাল’ ও এটিএন বাংলায় প্রচার চলতি ধারাবাহিক ‘সাতটি তারার তিমির’-এ অভিনয় করেছেন। মঞ্চে তিনি পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, এখানে এখন, ওথেলো, সেনাপতিসহ একাধিক নাটকে অভিনয় করেন।
তার অনুবাদ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে সোফিয়া লোরেন: তার আপন কথা, এন এনিমি অব দ্য পিপল, ওয়াইল্ড ডাক, লিংকনের সোনালী ভাষণ, হেনরি ইবসেন এর তিনটি নাটক, দ্য পিলার্স অব সোসাইটি, অন্তেগনি।
অনেকগুলো গল্পগ্রন্থ রচনা করেছেন তিনি। তারমধ্যে স্বর্ণলতার বৃক্ষ চাই, বুড়ো বট ও শকুন, মমতাজ গায়েন, পবিত্র ও আড্ডাবাজ কয়েকজন। অন্যান্য: বন্ধুত্ব, আকাশের কাছে বাড়ি, ঝলপই পাতা ঝরেছিল, লালটুক টুকে কমলা, দিনান্তে দিন, শোভনের মহারাজ, পনির ও তীতুমামু, সোনামনি তোমায় দিলাম, ভালবাসা বোঝিনি পাখি, ছোট ছোট মেঘ, রং শুধু রং নয়, গোস্টস, ইতিহাসের বাকে বাকে, চিরায়িত শ্রেক্সপিয়র, ইউরিডাইস, পাতা, উপনের জমি, গল্পগুলো তোমার জন্য, বিলাসপুরের ইসকি।
তিনি অনুবাদের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২০ লাভ করেন । খায়রুল আলম সবুজের সহধর্মিণী শিরীন আলম। তার এক মেয়ে প্রতীতি পূর্ণা।