মোস্তফা ইমরান রাজু, কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া প্রতিনিধি: বয়স ৭০, এখনও অফিসের তরুণ অথবা যুবক সহকর্মীদের মতোই পরিশ্রম করতে পারেন তিনি। ৩১ বছর ধরে মালয়েশিয়ার ক্লাং এর একটি শপিং মলে কর্মরত আবু বকর নামে এই প্রবাসী বাংলাদেশী। দীর্ঘ এই কর্মজীবনে একদিনও ছুটি কাটাননি তিনি, নেননি অসুস্থতার জন্যও কোন ছুটি। ডিসেম্বরে ফিরছেন প্রবাসের পাঠ চুকিয়ে দেশে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঐ বাংলাদেশীকে নিয়ে করা পোস্টকে ঘিরে শুরু হয় তুমুল আলোচনা। দেশটির জনপ্রিয় অনলাইন দ্যা স্টার সম্প্রতি এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্লাং রয়্যাল সিটি কাউন্সিল কর্তৃক আয়োজিত শপিং মলে সেরা পাবলিক টয়লেট পরিষ্কার প্রতিযোগীতায় প্রথম হওয়ার পর গ্রুপ প্রধান হিসাবে আবু বকর নামে এক বাংলাদেশীর বক্তব্য আলোচনায় আসে।
আর তার এই প্রতিক্রিয়া সামনে আসে ইন্সটাগ্রামে দেয়া আহমেদ হুমাইজি নামে এক মালয়েশিয়ানের পোস্ট’কে ঘিরে। যিনি ঐ পোস্টে আবু বকর নামে ঐ বাংলাদেশী’র বক্তব্য ও মতামত শেয়ার করেন। তিনি লেখেন, ৩১ বছর আগে আবু বকর যখন ভালো চাকুরীর খোঁজে মালয়েশিয়ায় এসেছিলেন তখন তার পঞ্চম সন্তানের বয়ষ ছিলো মাত্র ৬ মাস।
সন্তানদের উজ্জল ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে শুরু থেকেই নিজের কাজের প্রতি খুবই মনোযোগী ছিলেন আবু বকর। পরিবারকে ভীষন মিস করলেও সংসারের খরচ ও অন্যান্য ব্যায় মিটিয়ে দেশে যাওয়া হয়ে ওঠেনি তার। আবু বকরের তিন সন্তানের এক মেয়ে এখন জজ এবং দুই ছেলের একজন ডাক্তার ও একজন ইঞ্জিনিয়ার। সন্তানদের সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করে এখন দেশে ফিরতে চান ঐ প্রবাসী বাংলাদেশী।
আবু বকর আরো যুক্ত করেন, শুরুতেই এমন কাজও করেছি যা অন্য কেউ করতে চাইতেন না। গেলো ৩১ বছরে সপ্তাহে ৭ দিন, মাসে ৩০ দিন আর বছরে ৩৬৫দিনই কাজ করেছেন বলে জানান তিনি।
আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আবু বকর বলেন, আমি কখনও অসুস্থতার জন্যও ছুটি কাটায়নি, আমার সহকর্মীদের মধ্যে আমিই সবচেয়ে বয়স্ক কিন্তু অন্যদের থেকে আমি কম পরিশ্রমি নই।
আবু বকর বলেন, আমি সবসময় নিয়মের মধ্যে থেকেছি, প্রতিদিন আমি সকালে উঠি, গোসল করি, নাস্তা শেষে কাজে যাই, বাসায় ফিরে রেস্ট নিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলি। দিনের পর দিন এটাই মেনে চলেছি আমি। একই সঙ্গে আমার আয়ের বেশিরভাগই আমি দেশে পাঠিয়েছি। আমার সন্তানদের মধ্যে একজন জজ, একজন ডাক্তার ও একজন ইঞ্জিনিয়ার এবং আমি তাদের জন্য গর্ববোধ করি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এই ডিসেম্বরে তিনি দেশে যাচ্ছেন এবং প্রথমবারের মতো দুই নাতি নাতনির মুখ দেখবেন বলেও উল্লেখ করেন, আবু বকর।
ইন্সাগ্রামে এই পোস্টের পর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আলোচনার ঝড় ওঠে। সবাই তাকে নিরাপদে দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য দোয়া করেন।
মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত আছেন প্রায় ১৫ লক্ষ বাংলাদেশী। এর মধ্যে আবু বকরের মতো অনেকেই আছেন যারা নিজের কর্ম দক্ষতায় বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জল করে চলেছেন।