রেভারেন্ট ফাদার: ষ্ট্যানলী গমেজ (আদি) আমাদের বাদল দা
ঢাকা শহরের কাফরুল থানাধীন দক্ষিণ কাফরুলের স্থায়ী বাসিন্দা মি: রবার্ট গমেজের (আদি) সাত পুত্রের মধ্যে জৈষ্ঠ পুত্র আমাদের বাদল দা। তিনি ১৯৬৫ খ্রীষ্টাব্দের ৩ অক্টোবর নানা বাড়ী, ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলাধীন, নবাবগঞ্জ থানার গোল্লা মিশনের বড়গোল্লা গ্রামের ফকির বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতা ছিলেন শেফালী এলিজাবেথ গমেজ।
দাদার যখন এক বৎসর বয়স তখন তার বাবা-স্ত্রী-পুত্রসহ তেজগাঁও থানাধীন ইন্দিরা রোডে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তার বাবা মি: রবার্ট গমেজ (আদি) ঢাকার আমেরিকান এ্যামবেসিতে চাকুরীরত ছিলেন। চাকুরীর পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকর্মের সাথে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। বাংলার খ্রীষ্টীয় সমাজের গৌরব, ঈশ্বরের সেবক আর্চবিশপ থিওটোনিয়াস অমল গাঙ্গুলীর অনুপ্রেরণায় এবং মন্সিনিয়র পিটার গমেজের সহযোগিতায় তেজগাও এবং কাফরুল এলাকায় সেন্ট ভিনসেন্ট ডি পল সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসাবে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। বাবার এই সব সামাজিক কার্যক্রম দেখে দাদা উৎসাহিত হতেন সমাজের জন্য কিছু করার। দিন দিন সমাজ এবং ধর্মের প্রতি তার অনুরাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
আধ্যাত্মিক জীবনের আহ্বান অনুভব করেন বাবা মায়ের সাথে রবিবাসরীয় খ্রীষ্টযোগে যোগদান এবং প্রতিদিন সকল সন্ধ্যায় মায়ের সাথে ঘরোয়া প্রার্থনায় মিলিত হবার মাধ্যমে। আরো বিশেষ ভাবে অনুপ্রাণিত হন প্রয়াত আর্চবিশপ থিওটোনিয়াস অমল গাঙ্গুলীর কাছ থেকে হস্তাপর্ণ (Confermation) গ্রহণ করার মাধ্যমে। সে হিসাবে তিনি নিজেকে ধন্য মনে করেন। হস্তাপর্ণ গ্রহণকালে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। ভোকেশনাল পর্বে শ্রদ্ধেয় টি.এ গাঙ্গুলী সবাইকে প্রশ্ন করেন বড় হয়ে কে কি হতে চাও? সেখানে বিভিন্ন জনে বিভিন্ন উত্তর দেন। কিন্তু আমাদের বাদল দার উত্তর ছিল, বেশ জোরালো এবং বিশ্বাসে পরিপূর্ণ। বড় হয়ে আমি পুরোহিত হতে চাই, মন্ডলীর সেবা করতে চাই। আর্চবিশপ টি.এ গাঙ্গুলী তাকে আর্শীবাদিত করেন যেন তার মনোবাসনা পূর্ণ হয়।
বাদল দার স্কুল জীবন শুরু হয় তেজগাঁও হলিক্রস স্কুল থেকে। সেখানে তিনি KG (Kinder Garden) থেকে ক্লাশ-২ দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। অতঃপর তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন St. Joseph High School at Mohammadpur, Dhaka. এখানে তার খুবই দুইজন প্রিয় শিক্ষক ছিলেন। একজন ইংরেজী বিষয়ের মিঃ বেঞ্জামিন গমেজ এবং অন্যজন বাংলা বিষয়ের মিঃ ফনিন্দ্র বনিক। ১৯৮৬ খ্রীষ্টাব্দে St. Joseph High School at Mohammadpur, Dhaka. থেকে S.S.C (Secondary School Certificate) পরীক্ষায় পাশ করেন।
Result এর অপেক্ষার মাঝে দীর্ঘ বিরতি। এই সময়ে দাদা Little Flower Seminary, Bandura, Hasnabad, Dhaka তে যোগদান করেন, তিন মাসের বিশেষ আধ্যাত্মিক কোর্সে। সেখানে ফাদার আবেল বি. রোজারীও’র কাছ থেকে ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক জীবন সম্পর্কে এবং ফাদার পিটার বান্টি রোজারীও’র কাছ থেকে প্রশাসনিক বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান লাভ করেন।
লিটন ফ্লাওয়ার সেমিনারী, বান্দুরা, হাসনাবাদ, ঢাকা থেকে ফিরে আসার পর St. Joseph Intermediate Seminary at Ramna, Dhaka তে প্রবেশ করেন। এখানে অবস্থান কালে ১৯৮৪-১৯৮৮ শিক্ষাবর্ষে নটরডেম কলেজ ঢাকা থেকে (I.A) আই.এ এবং (B.A) বি.এ ডিগ্রী লাভ করেন। বাদল দা খুবই গর্বিত তখন তিনি Principle হিসেবে পেয়েছিলেন Father Joseph Pexiotto (পিসাতো) c.s.c এবং ফাদার Benjamin Costa, c.s.c কে। কলেজে পড়াশুনাকালীন দুইজন শিক্ষককে বিশেষভাবে স্মরণ করেন। তারা হলেন Prof. Miah Mohammad Abdul Hamid এবং Hoshne ara Begum (বর্তমানে নিউইয়র্কে থাকেন)। আজকে এ জীবনে আসার পেছনে তাদের অবদানের কথা স্মরণ করেন। Intermediate Seminary Ramna তে থাকাকালীন Rector হিসাবে ছিলেন Father Thomas Zimmerman c.s.c। সেমিনারীর খরচ বাচানোর জন্য ছাত্রদের নিয়ে পুরো বিল্ডিং রং করিয়েছেন। মাংসের যোগান হিসাবে ‘খরগোসের খামার’ গড়ে তোলেন। ইংরেজি ভাষায় বাদল’দা বেশ পারদর্শী হওয়ায় ফাদার Zimmerman কে সহজেই সবকিছু বুঝিয়ে দিতে পারতেন। দিনে দিনে Leadership এবং সাধারণভাবে কিভাবে জীবন-যাপন করা যায় সে বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান লাভ করেন Father Zimmerman এর কাছ থেকে।
বি.এ. পরীক্ষার পর বাদল দাকে পাঠানো হলো ময়মনসিংহ জেলায়। সেখানে ইন্ডিয়া বর্ডারের খুব কাছে ‘রাণী খং মিশনে’ তখন সেখানে Parist Priest হিসাবে ছিলেন ফাদার আলফ্রেড গমেজ। উপজাতি হিসাবে ‘গারো’ (Garo) এবং মান্দী (Mandi) অধ্যুষিত এলাকা। সেখানকার মনোরাম দৃশ্য এবং ‘Shomeshori River’ সোমেশ্বরী নদী’র শীতল হাওয়া বাদল দার মনকে আজো নাড়া দেয়।
বি.এ পরীক্ষার রেজাল্ট বের হবার পর পুরোহিত হবার শেষ ধাপে প্রবেশ করেন, ‘Holly Sprit Major Seminary, Banani, Dhaka’ তে। ১৯৮৯ খ্রীষ্টাব্দে কিন্তু প্রথম সেমিষ্টার শেষ করার পরই ১৯৮৯ খ্রীষ্টাব্দের ২৯ জুলাই বাবা-মা, এবং ছয় ভাই সহ পাড়ি জমান সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে North America New Jersey অঙ্গরাজ্যে। শুরু হয় আরেক জীবনের গল্প।
নুতন দেশ, নুতন পরিবেশ। পরিবারের বড় সন্তান হিসাবে বাবার সাথে হাল ধরেন। তাই তো New York এর Manhattan এ Duane Reade প্রথম কর্ম জীবন শুরু করেন। সহকর্মী হিসাবে পরিচিত হন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভাষাভাষী লোকজনের সাথে। এলি কোহেন নামে প্রথম কোন জুইস লোকের সাথে পরিচিত হন। দাদা খুব অল্প দিনেই Assistance Manager হিসাবে প্রোমোশন পান। কিন্তু এক বৎসর পরে August ১৯৯০ খ্রীষ্টাব্দে তিনি আবার ভর্তি হন Immaculate Concept Seminary at Staon Hall University in South Orange, NJ তখন Duane Reade এর সুপার ভাইজার তাকে অনুরোধ করেন এবং প্রস্তাব দেন Manager হবার জন্য এও বলে Head Office Wall Street বসার জন্য। কিন্তু কোন লোভনীয় প্রস্তাবই দাদা কে আটকাতে পারেনি। তিনি বিশ্বাস করতেন যেখানে ঈশ্বর তার জীবনের মধ্যমনি হয়ে আছেন সেখানে অর্থ, যশ, প্রতিপত্তি কোন কিছুই তাকে আটকে রাখতে পারবে না। ২৫ আগস্ট ১৯৯০ খ্রীষ্টাব্দে একটা বাঙালী খ্রীষ্টান ক্যাথলিকদের জন্য ইতিহাসের জন্মের শুরু হয় Seton Hall এ। মা, বাবা এবং পরিবারের সকল সদস্যদের সেখানে অভ্যর্থনা এবং নৈশভোজের ব্যবস্থা করা হয়। সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে সবাই বিদায় নেন শুধু থেকে যান আমাদের বাদল দা। সেখানে তার Rector ছিলেন Msgr. Robert Harahan।
১৯৯১ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত Bayonne, New Jersey Summer Program থাকার সময় কাজ করেন St. Francis Hospital and Our Lady of Grace Church Hobokon এ। Mission Work Dominican Republic 1992-1993। Decon Ordination গ্রহণ করেন মে ১৯৯৪ সনে। Decon Ministry হিসাবে কাজ করেন Secred heart cathedral in New York, ১৯৯৪ থেকে মে ১৯৯৫ অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। যার জন্য এতদিনের ত্যাগ তিতিক্ষা এবং প্রতীক্ষা। মে ২৭, ১৯৯৫ আমাদের বাদল’দা যাজক (Priest) হিসাবে দীক্ষা গ্রহণ করেন। Sacred Heart Cathdel, New York সেখানে আর্চবিশণ ছিলেন Theodore E. McLarrick।
অতপর প্রথম বাঙালী Priest হিসাবে নিযুক্ত হন Blassed Sacrament Church in Eli abeth, NJ তে। Spanish ভাষাতেও ভালো দক্ষতা থাকার দরুন Spanish ভাষাতেও খ্রীষ্টযাগ করতে থাকেন।
St. Mary’s Church in Rahway December 1994 to June 2002 Seton Hall University, South Orange June 2002 to June 2003 এখানে থাকাকালীন বিভিন্ন দেশের এবং বিভিন্ন ভাষাভাষীর লোকজনের সাথে কাজ করার সুযোগ পান। নেতৃত্ব দেন Athletes Club, Basketball Club, Drama Club সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় September 1998 to May 2001 এই সময় কাজ করেন Advocate হিসাবে Metropoliton Tribal in New York এ।
Sector Hall Unovesity তে দশ বৎসর কাজ করার পর ৬ মাসের Sebbatiel ছুটি পান তাই ১২ বৎসর পর এই Sebbatiel ছুটি কাটাতে দাদা পছন্দ করলেন পায়ে হেটে Pilgrims করার জন্য। Spain এর Galiecia থেকে ৫০০ মাইল দূরে St.Pied deport of France-The Wester cost of Spain August 2013 পিঠে ব্যাকপ্যাকসহ হাটা, রাত হলে অন্যান্য বিভিন্ন দেশের লোকদের সাথে রাত্রীযাপন, আবার সকালে হাটা এভাবে প্রায় ১ মাস লেগে যায়। এই Pilgrimage কে বলা হয় Spanish ভাষায় ‘El Camino’ আমাদের দাদা প্রথম বাঙালী হিসাবে এই তীর্থে নিজের নাম লেখান। তীর্থ শেষে জড়সব গিয়ে সেখানে North America College in Vatican এ Sebbatiel Program এ অংশগ্রহণ করেন। দাদা যেখানে থাকতেন সেখান তেকে প্রতি বুধ এবং রবিবার জানালায় বসে Pope এর ভাষণ শুনতেন।
২০১৪ St. Henry’s Church in Beyonne যোগদান করেন। এখানে থাকাকালীন Bishop Thomas Donato কাজ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন কিভাবে অন্যান্য Priest দের সাথে কাজ করতে হবে। দাদাকে বিশেষভাবে স্মরণ করিয়ে দেন ঈশ্বরের সেবক আর্চ বিশপ থিটেনিয়াস অমল গাঙ্গুলীর কথা, কিভাবে তার মেষদের প্রতিপালন করতে হবে। ২০১৬ মার্চ মাস হতে নিজ New York Diocese নিয়োগ প্রাপ্ত হন Retirement Residence এর Director হিসাবে। On July 1, 2019 Cardinal Joseph Tobin c.s.r. দাদাকে Director of the retired priests দায়িত্ব প্রদান করেন। সেখানে দাদা গত ২৭ শে মে ২০২০। 203 Retired Priests 3 Bishops, 56 Adjunct Priest দের সাথে এই করোনাকালে তার Silver Jublie পালন করেন।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য বাদল দা ২০০৬ খ্রীষ্টাব্দে আর্চবিশপ Mayers কর্তৃক Adjunct Clergy Director হিসাবে দায়িত্ব পাবার পর এ পর্যন্ত ৫৬জন Priests এবং ৪০ জন শিক্ষানবীস Priest দের Visa, কাগজপত্র, বিভিন্ন চার্চে নিয়োগ, তাদের বেতন, Training এর ব্যবস্থা করে থাকেন। যে সমস্ত Priest দের USA তে নিয়ে আসেন তাদের মধ্যে বেশীরভাগ Philippines , Poland, Nigeria, Inida & Columbia Summer Priest হিসাবে বেশিরভাগ নিয়ে আসেন। Rome, Levuen, Manila, Maine and Bangladesh থেকে। উল্লেখযোগ্য যে গত ২০ বৎসর যাবত এ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৩০ জন Priest এনেছেন Summer Vacation এ নিজে Sponsor করার মাধ্যমে। বাংলাদেশ থেকে প্রথম Sponsor করেন Fr. Shortot Francis Gomes of Dhaka এবং Fr. Emmanuel Kanon Rogario of Rajshhi। এ প্রোগ্রামে তারা মূলত শিক্ষাগ্রহণ করেন কিভাবে আমেরিকান চার্চ পরিচালিত হয় এবং পৃথিবীর অন্যান্য ভাষাভাষী Priest iv কিভাবে তাদের দেশে কাজ করে তা সহযোগিতা করা।
ফাঃ জন ষ্ট্যানলী গমেজ (আদি) আমাদের বাদল দার গত ২৫ বৎসরের অবদান তুলনা করার মত নয়। উত্তর আমেরিকান একমাত্র বাঙালী ফাদার হবার দরুন পৃথিবীব্যাপী বাঙালী সমাজে তিনি একনামে পরিচিত, সমাদৃত। ছোট বড় সবার সাথে একাত্ব হয়ে মিশে যাবার মত মানুষ তিনি। নিউইয়র্ক এর এক অনুষ্ঠানে আমি দেখেছি তিনি হোসনে আরা ম্যাডাম বলে তার পা ছুয়ে আর্শীবাদ নিয়েছেন। শিক্ষককে কিভাবে সম্মান করতে হয়। এ শিক্ষার এক উজ্জল দৃষ্টান্ত বাদল’দা।
Tri State এর যত বাংলা খ্রীষ্টযাগ হয় তাতে চার্চ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় দাদার কথা শোনার জন্য তার আর্শীবাদ নেবার জন্য। বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য থাকে প্রত্যেক খ্রীষ্টযাগে Special উপদেশ। Bangla, English, Spanish, Italia ভাষায় সমান ভাবে Mess উৎসর্গ করতে পারেন।
অনেক আয়োজন ছিল ২৭ মে, ২০২০ তার Silver Jubilee পালনে। কিন্তু Covid-19 সবকিছু আটকে ছিল। পাশাপাশি October 3rd তার জন্মদিন কিছুই পালন করেতে পারলাম আমরা। আমার কবিতার দুটি লাইনের ভাষায় বলতে চাই
‘দুঃখ করোনা হে বীর
আমরা জেগে আছি
তোমার নামে বিজয় কেতন
উভাব আমরা ঘুছাব কালরাত্রি’
দীর্ঘজীবি হও ফাঃ জন ষ্টানলী গমেজ (আদি)।
আমাদের বাদল দা, ২৫ বৎসরের Silver Jubilee শুভেচ্ছা এবং শুভ জন্মদিন
লেখক: ফ্রান্সিস মানিক ফলিয়া, নিউজার্সি, যুক্তরাষ্ট্র।