নীরব আহমেদ রুমন, এথেন্স , গ্রীস থেকে:
সাইপ্রাস ভূমধ্যসাগরের একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপগুলোর মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম দ্বীপ এটি। এর পশ্চিমে গ্রীস, পূর্বে লেবানন, সিরিয়া এবং ইসরাইল, উত্তরে তুরস্ক ও দক্ষিণে মিসর। এটি ইউরোপ মহাদেশের অন্তর্গত। বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি ছাত্র ছাত্রীদের কাছে বেশ পরিচিত দেশটি। অনেক বছর আগে থেকে বাংলাদেশি কিংবা এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য সাইপ্রাসে পাড়ি জমিয়েছেন।
২০০৪ সালের ইউরোপের সদস্যপদ লাভের পর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্তই সব কিছু ভালোই চলছিল। কিন্তু ২০০৯ সালের দিকে শুরু হয় অভিবাসন আইনের কিছুটা পরিবর্তন। আগে ছাত্রছাত্রীদের কাজের অফিসিয়ালি সুযোগ থাকলেও বর্তমানে ছাত্রদের অফিসিয়াল কাজের কোনো পারমিট নেই। ফলে অনেকে পড়াশুনা করতে গিয়ে পড়েছেন বিপাকে। অনেকেই সাইপ্রাসকে গেটওয়ে হিসাবে ব্যাবহার করেছেন, এখনো করছেন। সাইপ্রাস ইউরোপিয়ান মেম্বারভুক্ত দেশ হওয়াতে সহজে ইউরোপিয়ান নাগরিক বিয়ে করে সেন্ট্রাল ইউরোপের কোনো দেশে স্থানান্তরের সুবিধা নিয়ে থাকেন।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশি, পাকিস্তানি নাগরিকদের বেশিভাগই প্রথমে নর্থ সাইপ্রাসে স্টুডেন্টস বা জব ভিসায় পাড়ি জমান তারপর দালালের মাধ্যমে নর্থ সাইপ্রাস থেকে গ্রিক সাইপ্রাসে পাড়ি জমান। যেহেতু বৈধভাবে নর্থ থেকে গ্রিক সাইপ্রাসে যান এরা তাদের কারোই কোনো বৈধ ডকুমেন্টস নেই- না থাকার, না কাজের ক্ষেত্রে। ফলে তাদের হাতে দুইটা সুযোগ থাকে নর্থ সাইপ্রাসে ফিরে যাওয়া কিংবা সাইপ্রাসে এসালাইম, শরণার্থী হিসাবে আশ্রয় গ্রহণ করা। এসাইলাম করার ফলে তারা সাময়িকভাবে ওই দেশে থাকার অনুমতি ও কাজের সুযোগ পায়, আর এই এসইলাম পেপার্স দিয়েই অনেকে রোমানিয়া, বুলগেরিয়া থেকে মেয়ে নিয়ে কন্ট্রাক্ট মেরিজ বা শ্যাম মেরিজ করে ইউরোপিয়ান ডকুমেন্টস করে থাকে জা সেন্ট্রাল ইউরোপে পাড়ি দিতে মেইন হাতিয়ার হিসাবে ব্যাবহার করা হয় মূলত। সেন্ট্রাল ইউরোপে পৌঁছালেই মেয়ের সাথে লেনদেন শেষ
অনেকে ইউরোপের ধনী দেশ গুলোতে মেয়েকে সাথে নিয়ে রেজিস্ট্রেশান করে ওই দেশের রেসিডেন্স নিয়ে থাকেন। অনেকে জাস্ট ইউরোপের সেন্ট্রাল কোনো দেশে প্রবেশ করেই ছাড়াছাড়ি করে ফেলেন। চুক্তিবদ্ধ বিয়ে নিয়ে নাইজেরিয়া, পাকিস্তানি, এবং বাংলাদেশি দের অনেক আগেই সন্দেহের তালিকায় রেখেছেন স্ক্যান্ডেনাভিয়ার দেশ গুলো বিশেষ করে নরওয়ে। এবার নতুন করে দিন দিন বাংলাদেশি, পাকিস্তানি এবং নাইজেরিয়া থেকে আগত শিক্ষার্থী নর্থ সাইপ্রাস থেকে বর্ডার পাড়ি দিয়ে গ্রিক সাইপ্রাসে এসাইলাম গ্রহণের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। ইউরোপিয়ান এসাইলাম সাপোর্ট সেন্টার জানিয়েছে – সাইপ্রাস ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশ সমূহের মধ্যে অন্যতম একটি দেশ যা কি না পার কেপিটা সবচেয়ে বেশি শরণার্থী বা এসাইলাম গ্রহণ করে থাকে। রিপোর্টে আরো বলা হয় ২০১৯ সাল এসাইলাম আবেদনকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল জা আগের বছরের তুলনায় ৭৬ ভাগ বেশি। সাইপ্রাস গত বছরে ১৩৬৫০ জন এসাইলাম আবেদন গ্রহণ করেছে। মোট আবেদনকারীর ২০% হচ্ছে সিরিয়ান অরিজিন অভিবাসী।
সাইপ্রাসের ইন্টেরিয়র মিনিষ্ট্রি এক বিবৃতিতে বলেছে ২০১৪ সালে সাইপ্রাসে মোট এসাইলাম আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ৩৪০০০ যা সাইপ্রাসের প্যাফোস শহরের জনসংখ্যার সমান। উল্লেখ্য যে সাইপ্রাসের মোট জনসংখ্যার ৩.৮% হচ্ছে শরণার্থী বা এসইলাম সিকার। কোভিড -১৯ পরিস্থিতি হিট হওয়ার আগে, ২০২০ সালের প্রথম তিন মাসে নতুন আশ্রয়প্রার্থীর মধ্যে শীর্ষ দশটি দেশ হলেন: সিরিয়া, ভারত, ক্যামেরুন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, জর্জিয়া, নেপাল, কঙ্গো এবং মিশর।
বর্তমানে সাইপ্রাসে প্রায় সিরিয়ান নাগরিক ২৬০০ জন, জর্জিয়ান ১৫৯৫ জন, ১৫০৮ জন ইন্ডিয়ান , ১২৭০ জন বাংলাদেশি, ১১৮৭ জন পাকিস্তানের , এবং ১১৮১ জন ক্যামেরুনের, ৩৮৬ জন নাইজেরিয়ান এবং ৩৮৫ জনের মত শ্রীলঙ্কার নাগরিক এসাইলাম সেকার হিসাবে দেশটিতে তালিকাভুক্ত আছেন। উপরের উল্লেখিত দেশ সমূহের মধ্যে প্রায় সব দেশকেই নিরাপদ দেশের তালিকায় রেখে নতুন ২১ দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে সাইপ্রাস। যার ফলে নতুন করে এইসকল নিরাপদ দেশের কোনো নাগরিক আর সাইপ্রাসে এসাইলাম গ্রহণের সুযোগ পাবেন না। সরাসরিভাবে তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হবে এবং নিজ দেশে প্রেরণ করা হবে।