মো: জাহাঙ্গীর আলম হৃদয়:
বাংলাদেশ
তোমায় অনেক মিস করি দূর প্রবাসে থেকে
তোমার ছাপান্ন হাজার বর্গমাইল ছেড়ে
মায়ের স্নেহ, ভাইয়ের ভালোবাসা
প্রিয়া ও সন্তানের মুখখানি ছেড়ে
আমার সবুজ গ্রামখানি
একলা পুকুরের মাছরাঙা ছেড়ে
আমি ছুটে এসেছি এই পরদেশে…..
বাংলাদেশ
তোমার ধানক্ষেতের আল ছেড়ে
উড়ানো ঘুড়ির সুতো
আর প্রজাপতির ডানা ছেড়ে
আমি উড়ে এলাম এই রুক্ষ মাটিতে
বাংলাদেশ
সবকিছু রেখে এসেছি
মা-ভাই-বোন- স্ত্রী – সন্তান
নিয়ে এসেছি মানচিত্র
আর বুক-ভরা ভালোবাসা।
প্রিয় পাঠক আমার নিজের লিখা একটি কবিতা দিয়েই শুরু করছি আজকের লেখা – আমি অতিতেও বলেছি আজও বলছি আমি নয়তো সেই মানের কোন লেখক বা কবি – শুধু মাত্র কাজের ফাঁকে মনের একাকিত্ব দুর করতেই টুকিটাকি লেখালেখি করা।
আজকের লেখার বিষয়টি হচ্ছে দীর্ঘ প্রায় তেরো বছর যাবত প্রবাসে আছি – জীবনের প্রয়োজনে। পরিবার-পরিজন ছেড়ে ১২ বছরে ২৪টি ঈদ কাটিয়েছি প্রবাসের মাটিতে। ২০১৮-১৯ রমজান ও কোরবানির ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করেছি দেশের মাটিতে পরিবারের সাথে।

২০২০ সালের রমজানের ঈদ এবং কোরবানির ঈদ কেটেছে প্রবাসে।
অতীতের প্রবাসে ঈদের চাইতে এইবারের কোরবানির ঈদ কেটেছে ভিন্নভাবে, যা চিরস্বরণীয় হয়ে থাকবে, সকালে ঈদের জামাত শেষ করে চলে গেলাম রিয়াদ প্রবাসী সেবা কেন্দ্র A2i-EDC এর প্রধান উদ্যোক্তা মনিরুল ইসলাম ভাইয়ের সাথে সেখানে পরিবারের সবাই মিলে খাবার খেলাম, গ্রুপ ছবি নিলাম- অল্প সময়ের জন্য হলেও ঈদ আনন্দে মেতে উঠেছি প্রবাসী সেবা কেন্দ্র পরিবারের সবাই।
তারপর চলে গেলাম প্রবাসী কুমিল্লা সোসাইটির সভাপতি প্রবাসীদের প্রিয় কুমিল্লার কৃতি সন্তান আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম ভাইয়ের দেয়া ঈদ দাওয়াতে- সেখানে যাওয়া মাত্রই প্রিয় নুরু ভাই হাসিমুখে ঈদ মোবারক জানালেন। সেসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লার আরেক কৃতি সন্তান রিয়াদ বাংলাদেশ দূতাবাসের ইকোনমিক মিনিস্টার ডক্টর আবুল হাসান স্যার। তিনি ঈদের শুভেচ্ছা জানালেন উপস্থিত সবাইকে।
দেশীয় আমেজে প্রবাসের মাটিতে দীর্ঘ ১৩ বছর পরে ঈদের গন্ধ পেয়েছি, সত্যিই আমি অভিভূত, মুগ্ধ এমন আয়োজনে। নুরু দাদা মানেই স্পেশাল কিছু- যা তিনি সবসময়ই করে থাকেন, অতীতে কোন ঈদে আমার যাওয়া না হলেও এইবারের কোরবানির ঈদে গিয়ে বুঝেছি নুরু দাদা মানেই বাংলার আমেজে ঈদ আনন্দ।
দীর্ঘক্ষণ আড্ডা আর আলাপচারিতার এক ফাঁকে নুরু দাদা বললেন খাবার রেডি চলেন সবাই খেয়ে নেই, সবাই খাবার টেবিলে হাজির, আয়োজন দেখে খাবার টেবিলে বসে দেশীয় পরিবেশে খাবার পরিবেশন, গরুর গোস্তো সেই রকম করে রান্না করা, নাকের মধ্যে স্ব গন্ধ পাচ্ছি- আহা আহা আহা সেকি আনন্দ, কিছুক্ষণ পরে ডিস ভর্তি গরুর গোস্তো আমাদের টেবিলে রাখা মাত্রই আমি গোস্তো নিয়ে খাওয়া শুরু করে দিলাম।

মনে হচ্ছে বাংলাদেশে বসে তরতাজা গরুর গোস্তো খাচ্ছি, খাবার শেষে আবার সবাই মিলে ঈদের গ্রুপ ছবি নিলাম। এক এক করে সবাই বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছে, আর নুরু দাদা আমায় বলছেন হৃদয় তুমি থাকো আমার সাথে যেও। দাদার কথামতো তাই করলাম, দাদার গাড়ি চড়ে বাসায় ফিরলাম, দাদাকে বিদায় জানালাম সাথে ছিলো ঈদি। প্রিয় নুরু দাদার ভালোবাসা আর আন্তরিকতার তুলনা লিখে শেষ করা যাবেনা, মহান আল্লাহ নুরু দাদা সহ পরিবারের সবাইকে সুস্থ ও নেক হায়াত দান করুন।
এরপর ঈদের দিন রাতে নিজ কর্মস্থল রিয়াদ বাথা ঢাকা মেডিকেল সেন্টারে পরিবারের সকলের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিলেন প্রতিষ্ঠানের স্পন্সর সৌদি নাগরিক বান্দরবীন নায়েফ আল হারতি, ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবদুল্লাহ আল মামুন সহ কর্তৃপক্ষ, কর্মকর্তা , কর্মচারিরা।
সবাই একসাথে বসে রাতের খাবার খেলাম।
খাওয়া শেষে চা পানের মধ্য দিয়ে যে যার বাসায় ফিরে যান। সেই সাথে ঈদ আনন্দের সমাপ্তি ঘটে।
সত্যিই প্রিয় পাঠক আমার ১৩ বছর প্রবাস জীবনে এই প্রথম একাকিত্বহীন কেটেছে ঈদ, কিছুটা সময়ের জন্য ভুলে গেছি সব, একটা বারও মনে হয়নি আমি প্রবাসে আছি। মনে হয়েছে নিজ মাতৃভূমিতেই আছি ।
জীবনের বাকি সময় গুলি কাটুক ঈদ আনন্দের মতই, মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে করোনামুক্ত হোক সকলের জীবন। দোয়া করি সকল আঁধার কেটে আলোকিত হোক পৃথিবী।
লেখক: সাংবাদিক, নাট্যকার, নাট্যভিনেতা ও কবি