মারুফ শরীফ:
আশেক, তুইতো এখন গ্রামে।
বরাবরের মতো ঘরেই বসে আছিস।
একবার উঠানে নেমে দেখতো বড়ৈ তলায় দাঁড়িয়ে, উপরের দিকে তাকালে ফোঁটা ফোঁটা চাঁদ দেখা যায় কিনা?
ঘাটায় আমার দাঁড়ানোর জায়গাটায় দাঁড়ালে নারকেল পাতার ফাঁক গলে ফালি ফালি চাঁদ দেখা যায় কিনা?
হৈমন্তীর একাদশীতে শস্যপ্রান্তরে এখনো কি নামে জোৎস্নার ঢল?
ভয়টাকে ভাঁজ করে রেখে বেরিয়ে দেখতো, বাঁশ আর হিজলের পাতাগুলো এখনো টুপটাপ শিশিরের ফোঁটা ফেলে ছোট পুকুরের নিটোল শান্তি নষ্ট কর্ছে কিনা?
একটু দেখে নিয়ে আমাকে জানাস, আটকিলায় আমাদের দশ শতাংশ ছিনতাই হয়ে গেল কি না?
খোঁজ নিস একবার, গ্রামের কোনো শিশু হঠাৎ
নিখোঁজ হয়ে যাওয়া শুরু হয়নিতো আবার?
সাঁঝ-সন্ধ্যায় খোলা চুলে কোনো মেয়ে বা পোয়াতি নারী
এক্লা বের হওয়ায় জ্বীনে ধরেনিতো?
শুনলাম হাসান মাষ্টার নাকি মারা গেছে।
বড় আঁড়াটার কয়টা ছবি তুলে পাঠাস আমাকে।
জানিসতো আর ক’টা বছর পার হলেই ওখানে
বড় বড় দালান-কোঠা গজাবে বিল্কুল।
তখন “বড় আঁড়া” নামটাও বিলীন হয়ে যাবে ওখান থেকে!
যেখানে কি না একদিন; দিনের আলোই পড়তো না।
সারা বছর জায়গাটায় রাত পড়ে থাকতো আর লোকজন ভয়ে ও পথ মাড়াতো না দিনের বেলাতেও!
আমি ওখানটায় কী সুন্দর চিকন কঞ্চির মতো আড়া-আড়ি রোদ ধুলি-কণা বেয়ে নেমে আসতে দেখেছিলাম।
আমরা যখন গ্রামে যাই, সেই ‘৯১ সালে। এমনি হেমন্তে।
জানিস, বড় আঁড়াটার ভিতরে এক স্বর্ণালী ভোরে কৃষকের হাত দিয়ে কোটি কোটি নক্ষত্র ছিটানোর দৃশ্য আমি একা একা দেখেছি। এটা হেমন্তই আমাকে দেখালো।
দেখেই আমি ঠিক থমকে গেছিলাম, আজো সেই খানেই থমকে দাঁড়িয়ে আছি।
জানিস, কতোদিন এমন শিরশিরে বিকেলে হেঁটে বেড়িয়েছি আমি আর হেমন্ত, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে?
আজো সেই শিরশিরে হাওয়া অনুভব করি পিঠে, বুকে আর মনে।
দেখে রাখিস গ্রামটাকে; অবশ্য জানি তুই পারবি না।
আমার বুকটা ধর্ফর কর্ছে!
একদিন এই গ্রামটা ছিনতাই করে নিবে আধুনিকতার নামে আবাসন।
নোট: আঁড়া – জঙ্গল, বন।