হাকিকুল ইসলাম খোকন, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি: জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই হিজড়া ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বহুলাংশে পিছিয়ে রয়েছেন। আইন তাদের স্বীকৃতি দিলেও সমাজের মানুষ তাদের সহজভাবে গ্রহণ করেনি। ফলে শিক্ষা গ্রহণ, কর্মসংস্থানসহ প্রতিটি মৌলিক অধিকার থেকে তারা অনেকাংশেই বঞ্চিত। হিজড়া ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিভিন্ন কর্মদক্ষতা থাকার পরও চাকরী বা কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় ভিক্ষাবৃত্তি ও বেকারত্বের শিকার। অথচ এমানুষগুলোর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তাদের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে তাদের যে জীবন সংগ্রাম তা অনেকাংশে সহজ হবে। পাশাপাশি প্রকল্পভিত্তিক কার্যক্রম থেকে বের হয়ে এসে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাও বাজেট প্রণয়ন করা প্রয়োজন। যা সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে। ‘ইনস্টিটিউট অফ ওয়েলবিং বাংলাদেশ’ এবং ‘ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’ হিজড়া ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরি বা কর্মসংস্থানের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা এবং তাদের জীবন মান উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। ১ মার্চ ২০২০ সকাল ১১.০০টায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর কৈবর্ত সভাকক্ষে গবেষণাটির খসড়া প্রতিবেদন নিয়ে ইনস্টিটিউট অফ ওয়েলবিং বাংলাদেশ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে ‘সবার জন্য সুযোগ: সবাই মিলে সমাজ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

মতবিনিময় সভায় গবেষণাটির খসড়া প্রতিবেদনের উপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সহকারি এডভোকেসি অফিসার নাঈমা আকতার ও সহকারি প্রকল্প কর্মকর্তা শানজিদা আক্তার। মূল প্রবন্ধে গবেষণার উদ্দেশ্য, বর্তমানে হিজড়া ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবস্থা এবং তাদের জীবন মান উন্নয়নে সুপারিশ তুলে ধরা হয়। তারা বলেন, সমাজে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বোঝা মনে করা হয়। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি আস্থা রেখে তাদের নিয়োগে আগ্রহী নয়। আবার নিয়োগ পেলেও প্রবেশগম্যতার অভাব, সহকর্মীদের বিরূপ এবং প্রতিষ্ঠানের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে তারা ঝরে পরেন। হিজড়া ব্যক্তিদের অবস্থা আরো শোচনীয়। তারা পরিবার থেকে বিতাড়িত এবং সমাজে অনাকাঙ্খিত। অধিকাংশই সম্মানজনক পেশার সাথে সম্পৃক্ত হতে না পেরে বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। কর্মক্ষেত্রে সুযোগ সৃষ্টি হলে হিজড়া ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা স্বাবলম্বী হয়ে সম্মানজনক জীবন যাপনে সক্ষম হবে। একই সাথে সামাজিক ন্যায়বিচারও নিশ্চিত হবে।
সাদাকালো হিজড়া উন্নয়ন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তা অনন্যা বণিক বলেন, হিজড়া জনগোষ্ঠী পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে সকলক্ষেত্রেই অবহেলার শিকার। পরিবার থেকে বিতাড়িত হওয়ার ফলে তারা শিক্ষা ও অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তাদের আচরণেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিভিন্ন দক্ষতা থাকা সত্বেও হিজড়া ব্যক্তিদের সুযোগ না দেয়ায় তারা নিজেদের প্রমাণ করতে পারে না। যেমন অনেক হিজড়া ব্যক্তির নৃত্যে দক্ষতা থাকলেও কোন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান না।

মুক্তির সংগ্রাম প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার এর পরিচালক মো: সুমন হোসেন বলেন, অনেক সময় কর্মক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয় না। ফলে অনেকেই কর্মক্ষেত্র থেকে ঝরে পরেন। পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রের প্রতিকূল পরিবেশের কারণেও তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
হেলথ ব্রীজ কানাডা এর আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরইমসন বলেন, আমাদের দেশের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে হিজড়া ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করণে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি এ মানুষগুলোকে ধৈর্য ধরে প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলা করতে হবে, তাহলে আগামী প্রজন্মের পথ চলা সহজতর হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, প্রতিটি মানুষের মধ্যেই কোন না কোন সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সহযোগিতা, সহমর্মিতা, প্রবেশগম্যতা এবং বৈষম্যহীনতা এ বিষয়গুলো নিশ্চিত হলেই তাদের শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ সকল মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সহকারি নেটওয়ার্ক অফিসার মো: মিঠুন এর সঞ্চালনায় উক্ত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রতিবন্ধী ও হিজড়া ব্যক্তিদের বিভিন্ন সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ।