এম.এফ.কে. শরিফ, মালে, মালদ্বীপ:
উন্নয়নশীল বাংলাদেশের অর্থনীতিক চাকা সচল রেখে উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে দ্রুতগামী করতে প্রবাসীদের অবদান উল্লেখযোগ্য। প্রবাসী বলতে সাধারণ অর্থে আমরা তাদেরকে বুঝি, যারা নিজেদের আর্থিক স্বচ্ছতা, পরিবার-পরিজনের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে নিজের মাতৃভূমির ভূখন্ড অতিক্রম করে ভিন্ন ভূখন্ডে বসবাস করে। যাদের অনুপ্রেরণা, যাদের ভালোবাসায় একজন মানুষের জীবনের গতিপথ পরিবর্তন করতে সাহায্য করে, সেই স্বজনদের ছেড়েই সহস্র মাইল দূরে অবস্থান করতে হয় প্রবাসীদের। সহস্র সংগ্রাম করতে হয় জীবিকার তাগিদে।
প্রবাস জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতি আর জীবনের সাথে লড়াই করার অসহ্য যন্ত্রণাদায়ক মুহূর্তগুলোর সাথে প্রতিনিয়তই সংগ্রাম করতে হয় একজন প্রবাসীকে। কিছু দায়িত্ব, কর্তব্য আর পিছুটান অদৃশ্য এক মায়া দূর অজানায় আটকে রাখে প্রবাসীদের। তাদের চিন্তায়-চেতনায় সব সময় বিরাজ করে পরিবারের সদস্যদের সুখ-শান্তি, তথা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। কিছু কিছু পরিস্থিতিতে তারা না পারছে স্বজনদের সান্নিধ্যে থাকতে, না পারছে তাদের ইচ্ছা-আকাংখাগুলো পূরণ করতে, না পারছে জীবন থেকে পালাতে, না পারছে পিছুটান এড়াতে। হয়তো ইচ্ছা না থাকা সত্যেও সব মেনে নিতে হচ্ছে হাসি মুখে।
সবকিছু মানতেই হচ্ছে তাদের। কেননা তারা প্রবাসী। জগত সংসারের সব মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নেয়াই তাদের নিত্যসঙ্গী। কেননা, তারাই যে প্রবাসী। শত কষ্ট-যন্ত্রনা বুকে চাপা দিয়ে হলেও থাকতে হবে দূর প্রবাসে। কিন্তু যেই স্বজনদের জন্যে এতো কষ্ট-যন্ত্রনা ভোগ করছে প্রবাসীরা, সেই স্বজনরা সেই প্রতিদান কতটুকু দিতে পারছে?
উল্টো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে প্রবাসীরা স্বজনদের নিকট পাচ্ছে সহস্র কষ্ট। যা তাদের করে তুলছে হতাশাগ্রস্ত, আবেগাপন্ন। যা তাদের প্রবাস জীবনের উন্নতির বাধাস্বরুপ। কেননা, স্বজনদের অনুপ্রেরণা একজন মানুষকে অধিক অনুপ্রাণিত করে। কিন্তু স্বজনদের নিকট-ই প্রায় প্রবাসীরা হচ্ছে অবহেলিত, লাঞ্ছিত।
দূর প্রবাসে থেকে প্রবাসীরা হয়তো প্রিয়জনদের অবহেলা, লাঞ্ছনা মেনে নিতে পারছে না। যারফলে, জীবনের মায়া ত্যাগ করে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। সহস্র স্বপ্ন বুকে চাপা দিয়ে একপ্রকার চাপা অভিমানেই নিরবে চলে যাচ্ছে এই রঙ্গিন পৃথিবীর রঙ্গিন মঞ্চ থেকে।
এইভাবেই জীবন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে সহস্র রেমিটেন্স যুদ্ধা। সুতরাং, প্রতিটি প্রবাসী পরিবারকেই প্রবাসীদের সুখে-দুঃখে হাসি মুখে অনুপ্রাণিত করতে হবে। জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্যে সাহস জোগাতে হবে। তাই, “অসচেতনা নয়, সচেতনতার সাথে অনুপ্রেরণা প্রদান করাই স্বজনদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।”