কোলকাতা, ভারত প্রতিনিধি: ১৯৪৭ এর স্বাধীনতা জন্ম দিয়েছিল দুই বাংলার। ভারতের মধ্যে বাংলাদেশের যে ভূখন্ডটি ছিল সেটি হলো এপার বাংলা আর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে পড়ে রইলো ওপার বাংলা। এই রেখা বাঙালির মননেও তৈরি করলো গভীর ক্ষত। ১৯৫২’র একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল নাম না জানা কত শহীদের রক্তে। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির অমরধারা বয়ে চলেছে পদ্মা গঙ্গার জলস্রোতের মধ্য দিয়ে। আজ বাংলা খন্ডিত, তবু বাঙালি রয়ে গেছে। বাংলা ভাষাই বাঙালির একমাত্র ঐক্যের সুর। বাঙালি হলো উৎসবপ্রিয়। রবি ঠাকুরের ভাষায় উৎসব মানে ‘দিবে আর নিবে, মিলাবে, মিলিবে’। এই দেওয়া নেওয়া হলো সমমনস্ক মানুষের মধ্যে চিন্তায়, মননে, বোধের মাধ্যমে ভাব বিনিময়। উৎসব হলো সেই ভাববিনিময়ের মিলনক্ষেত্র। আর সেই ভাববিনিময় হয় কথাবলা আর কথাশোনার মাধ্যমে। তৎসম গদ শব্দ থেকে গদ্য শব্দটি এসেছে। যার অর্থ হলো কথা বলা। আর শব্দের পর শব্দ সাজিয়েই আমরা তৈরি করি কথামালার সেতু। সেই ভাবনাকে স্বাগত জানিয়ে সম্প্রতি বৌবাজারের বুদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভায় স্বপ্নরাগ সাহিত্য সংস্কৃতি পরিবার আয়োজন করেছিল ‘দুই বাংলার শব্দসেতু বন্ধন উৎসব’। উৎসবের শুভ সূচনা হয় প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রম দপ্তরের প্রাক্তন শ্রম আধিকারিক শ্রীকুমার
রায়, কবি, লেখিকা সুজাতা দাস, নদীয়া সংবাদের কর্ণধার পুলক বোস এবং কবি ও মঞ্চাভিনেতা অজয় সাহা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বি.এম. জামাল হোসেন (পলিটিক্যাল মিনিস্টার ও বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন, কোলকাতা)। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন শ্রীকুমার রায়। শব্দসেতু বন্ধন উৎসবের মঞ্চে স্বপ্নরাগের সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অমল পাহাড়ী (শঙ্খমালার সদস্য), জয়দীপ চট্টোপাধ্যায় (সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পঞ্চমপুরুষ এবং সৌহার্দ্য কর্নধার), অঞ্জল চট্টোপাধ্যায় (আবৃত্তিশিল্পী, রূপসী বাংলা টিভি চ্যানেলের কবিতার রঙমহলের পরিচালক এবং সঞ্চালক), পুলক বোস (নদীয়ার সংবাদের কর্ণধার), রাজু শেখ (কবি এবং সাংবাদিক), কথাকবি সদ্যোজাত। অনুষ্ঠানে স্বপ্নরাগের পক্ষ থেকে দুই দেশের প্রায় ত্রিশটি সংগঠনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। স্বপ্নরাগের গুণী সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চিত্রশিল্পী শুভ সরকার, লেখিকা রাধাবিনোদিনী বিন্তি বনিক, লেখক প্রশান্ত দাস প্রমুখ বিশিষ্টজনেরা। আবৃত্তিশিল্পী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পৌলমী ভট্টাচার্য, পুরবী সুমন রায়, রুমা সাহা। সঙ্গীতশিল্পী হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সুমন মজুমদার, শম্পা দেব, মধুমিতা ভট্টাচার্য, সুপ্তি দত্তগুপ্ত। ২২ শ্রাবণ উপলক্ষ্যে ‘অচেনা রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক একটি টকশোয়ের আয়োজন করা হয়। টকশোতে অংশগ্রহণ করেন বিশ্বভারতীর অধ্যাপক অভ্র বসু, গবেষক দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়, ঐতিহ্য বিশেষজ্ঞ সোমেন সেনগুপ্ত। অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিলো বাংলাদেশের কাব্যরত্ন রোকসানা সুখী সম্পাদিত দুই বাংলার সাহিত্যবন্ধন পত্রিকার মোড়ক উন্মোচন।